
১৯৪৭ সালে স্বাধীন দুই পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগন মূলত বাঙ্গালী জাতি নানাভাবে তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে থাকে, মনের ভিতর ক্ষোভ জমতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্টির উপর কিন্তু তাদের সেই ক্ষোভকে আগুনে রুপান্তর করার মত লোক ছিল না। এর মধ্যে ঘটে যায় ৫২ এর জগন্য কান্ড, এদেশের মানুষ আরো ফুঁসকে উঠে শাসক দানবদের উপর, এদেশের মানুষ মানসিকভাবে স্বাধীনতার বীজ মনে রোপন করে আর সেই বীজ থেকে পূর্ন একটি স্বাধীন গাছের জন্ম দেওয়ার জন্য রুপকথার নায়কের মত আসেন শতাব্দীর অন্যতম মহানায়ক, বাংলাদেশের স্হপতি বঙ্গবন্ধু উপাধিপ্রাপ্ত শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ক্যারিম্যাটিক নেতৃত্বে দ্রুত বদলাতে থাকে এদেশের রাজনীতির মাঠ, তিনি হয়ে উঠেন বাঙ্গালী আশার আলো, তিনি হতাশ করেননি এ জাতিকে, যোগ্য নেতৃত্ব দিয়েই মুক্তিপাগল জাতিকে এক রেখায় এনেছিলেন, তাঁর নির্দেশ মত জীবন বাজি রেখে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে স্বাধীন ভূ-খন্ডের জন্ম দেয় দামাল ছেলেরা। বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস যদি এই পর্যন্ত থাকত তাহলে আজকে তাকে ছোট করে কেও কথা বলতে পারত না, কিন্তু ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকেই তাঁর নানান ভুল সিধান্ত মানুষকে হতাশ করতে থাকে, জাসদ কে বিপদে ফেলাতে হোক আর যেভাবে হোক বাগশাল গঠন ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। তাঁর নিজের আদর্শ থেকে তিনি সরে গেলেন-যে গণতন্ত্র তাকে বঙ্গবন্ধু বানালো তিনি সেই গণতন্ত্রই হত্যা করলেন, তাঁর প্রতি মানুষের মনে বিরুপ ধারণা জন্ম নিল, আর তৎকালীন তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু দল জাসদ সেই সুযোগ ভালভাবে নিল, তৈরী হল নান কুট-কেীশল-ক্যু, বাকিটা ইতিহাসের কালো অধ্যায়। জীবন দিয়ে শোধ করতে হল তাঁর সবচেয়ে বড় ভুলকে।
জিয়াউর রহমান, একজন রণাঙ্গন কাঁপানো মহাবীর, বঙ্গবন্ধু যখন বন্দী হয়ে গেলেন, তখন এ জাতির যারা সাহস দিয়ে যুদ্ধের মাঠে নামিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, জেড ফোর্সের অধিনায়ক জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীর-উত্তম। তিনি জীবনের ঝুকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন, একজন সেনাবাহিনীর সদস্যের মুখে স্বাধীনতার ঘোষনা শুনে এদেশের মানুষ আরও জেগে উঠে তাঁরা বুঝতে পারে তাঁরা শুধু একা যুদ্ধে ময়দানে নেই, সাথে আছে বাঙ্গালী সমর নায়কেরা। জিয়াউর রহমানের ইতিহাস যদি এ পর্যন্ত থাকত তাহলে তাঁকে কোন দিন পাকিস্তানের গুপ্তচরের মত জগন্য গালি শুনতে হত না। তাঁর মত আরও অনেক মহানায়ক ছিল তবু্ও তিনি কেন অন্যদের চেয়ে বেশী আলোচিত-সমালোচিত। মূল কারণ ৭ নভেম্বর, তিনি খালেদ মোশারফের ক্যুর মাধ্যমে বন্দি হোন আবার তাহেররের ক্যুর মাধ্যমে মুক্ত হোন, কিন্তু ভাগ্য তাঁর পক্ষে ছিল-দুই ক্যু হেরে গেল আর তিনি পেলেন রাষ্ট্র ক্ষমতা। তিনিও বঙ্গবন্ধুর মত ক্ষমতা পেয়ে ভুল শুধু করলেন, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে হত্যা করলেন অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে, কিছু স্বাধীনতা বিরুধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিলেন এটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল। তিনিও বঙ্গবন্ধুর মত জীবন দিয়ে সেই ভুলের মাশুল গুনলেন।
তাঁর শাসন আমলে সবচেয়ে মূল্যবান যে কাজ তিনি করেছিলেন তা হল গনতন্ত্রের বীজে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশে আবারও বহুদলীয় গণতন্ত্রে চর্চা শুরু করেছিলেন।
জাতির এই দুই মহান নেতা আমাদের জন্য কম-বেশী অনেক অবদান রেখে গেছেন যা আমরা হাজার বছর চেষ্টা করেও করতে পারব না, তাই তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে তাদের অতি সামন্য ভুল আমরা মন থেকে মুছে ফেলে, আসুন তাদের ক্ষমা করে দেই।
একটা প্রবাদ পড়েছিলাম- "যে জাতি গুনীদের সম্মান করতে জানে না, সেই জাতির মধ্যে গুনী লোক জন্ম নেয় না"
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



