somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিতে বাবা।

২১ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বাবা, প্রতিটি সন্তানের মাথার উপর বটবৃক্ষের মত ছায়া দিয়ে যায়, যতদিন তিনি বেঁচে থাকেন কোন সন্তান হয়তো বুঝতেই পারে না সেই ছায়ার অসীম ক্ষমতা। আমাদের চারিপাশের নিত্য দিনের শত ঘঠনা ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে শেখায় বাবা নামের ছায়ার অবদান। জীবনের পথ চলতে চলতে একদিন হয়তো জীবনের যাবতীয় নিয়ম কানুন আয়ত্তে চলে আসে তবে বাবার হাত ধরে পথচলার সময় যে শক্তি মনে থাকে সেই শক্তি একটি এটম বোমাও দিতে পারবে না। বাবার কিনে দেওয়া দুই টাকার বাদামে যে আনন্দ তুলে দেয় হৃদয়ের গহীনে তা অন্য কারোর দেওয়া শতকোটি মূল্যের যে কোন উপহারের চেয়েও দামি। বাবার দেওয়া দুই টাকা বাদামে থাকে বাবার নিঃস্বার্থ ভালবাসা, কিন্তু শতকোটি মূল্যের উপহারের পিছনে লুকিয়ে থাকে শত স্বার্থ।

আমার বাবা চলে গেছেন পৃথিবীর সাথে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করে, যে পথে একদিন আমরা সবাই যাত্রা করাবো।
আমি বাবার বড় সন্তান, স্বাভাবিকভাবেই বাবার সাথে আমার স্মৃতি একটু বেশি অন্য ভাইদের চেয়ে। বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন, একটু রাগী মানুষ কিন্তু বাবার ভিতরে ছিল সততা, তিনি ভুলকে ভুল সত্য কে সত্য বলতেন, জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কখনো অন্যায়ের পক্ষে কথা বলেননি। তিনি মানুষ ছিলেন আর চলার পথে মানুষ মাত্রই কিছু না কিছু ভুল-ত্রুটি থাকেই, আমার বাবারও ছিল। মহান স্রষ্টার কাছে তার ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

বাবার সাথে ছোট ছোট সহস্র স্মৃতি আছে আমার, এত স্মৃতি এখানে লিখতে শুরু করলে শব্দের হিমালয় তৈরি হয়ে যাবে। খুবই ছোট দুই স্মৃতির কথা বলবো।

এক, ছোট থাকতে বাবা গল্প করতেন, প্রায় একটি স্মৃতি স্মরণ করে বলতেন তিনি একবার বাজি ধরে এক বসায় নয় কেজি রসগোল্লা খেয়ে ফেলেছিলেন, আমরা প্রতিবাদ করতাম, বলতাম অসম্ভব। বাবা তখন হাসতেন। সেই ছোট মনে আমার একটি স্বপ্ন জন্ম নিয়েছিল, আমি যখন নিজে রোজগার করবো তখন আমার রোজগারের টাকা দিয়ে বাবাকে মিষ্টি দোকানে বসিয়ে অনেক রসগোল্লা খাওয়াবো, জীবন যুদ্ধে যখন নামলাম তখন সেই স্বপ্ন আর উঁকি দিতো না মনে। একদিন হঠাৎ বাবার সেই গল্প মনে পড়লো আমি আমার ডায়রিতে লিখে রাখলাম, ইদের ছুটিতে বাড়িয়ে গিয়ে একদিন বাবাকে নিয়ে সত্যিই মিষ্টির দোকানে গেলাম, বাবা দুইটি রসগোল্লা খেলেন, আমি বললাম, এই তোমার নয় কেজি রসগোল্লা খাওয়া! বাবা হাসলেন, বলতেন বাবা সময় অনেক পেরিয়ে এসেছি। সত্যি তো দুই টাকার বাদামে লোভে বাবার হাত ধরে আসা ছোট্ট ছেলেটির বয়স পঁয়ত্রিশ!
ঘড়ির কাটা এক আজব জাদুর কাটি, টিক টিক শব্দ করে একটু একটু সামনে বাড়ে আর সাথে পিছে ফেলে রাখে সহস্র জীবন গল্পের পুঁথি।

দুই, এখনকার মত তখন গ্রাম অঞ্চলে জাতীয় রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি হতো না, তখন রাজনীতি মানে তৃনমূলের ভোট, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আর মেম্বারের ভোট, ভোটের সময় যেন একটি উৎসবে জন্ম হতো, প্রার্থী আর সমর্থকরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট চাইতো, পান-সুপারি, বিড়ি দিয়ে দোয়া প্রার্থনা চাইতো। গ্রামের ছেলেরা দল বেঁধে মিছিল নিয়ে প্রার্থীর বাড়ি বাড়ি যেত, প্রার্থী খুশি হয়ে চিড়া-পাটালি খেতে দিতো। আমার বাবাও এই আমেজে যুক্ত থাকতেন, তিনি একবার এমন এক প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন করলেন সে নয়জন প্রার্থীর মধ্যে নবম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মা তাকে একদম পছন্দ করেন না তাই ভোটের আগে রাতে বাবার কাছে জানতে চাইলেন, কালকে কাকে কাকে ভোট দিবো? বাবার সরল উত্তর, তোমার ভোট তুমি দিবা, যাকে পছন্দ হয় তাকে। আমি পছন্দ করি তাই তাকে সমর্থন করি। সেদিনের সেই স্বাধীনতা মনে হয় আমার ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল তাইতো বাক-স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতার বিশ্বাসী হওয়ার খেসারত আমি চরম অপমানিত হয়ে দিয়েছি তবুও আমি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী কারণ আমার বাবার শিক্ষা।

এই মহান সৃষ্টিকর্তা বাবাকে তোমার আরশের ছায়াতলে নসিব করো, পৃথিবীর সব বাবারা ভাল থাকুক।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:০০
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×