somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন আছে গরীবের বউ সবার ভাবি?

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(লোকেশন, সেন্টমার্টিন হুমায়ুন আহমেদের রিসোর্টের সামনের সৈকত)

"দিগন্তের নীল আকাশ দিয়েছে ডুব নীল জলরাশির বুকে
পূর্ণিমা রাত, চারিদিকে নিরব, শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ
আর, সমুদ্রের তরঙ্গ গর্জন
এখানেই দেখা মেলে অপরুপ গোধূলি
এখানেই নামে স্বর্গীয় রাত।
চলো এক সাথে-
কিছুটা সময় হারিয়ে যাই মায়াবী সেই সময়ের মাঝে।"

আমি একজন গরীব কামলা তবে মন-মানসিকায় প্রচন্ড ভ্রমনপ্রিয়, বলতে পারেন একজন গরীব Traveller. দেশের গন্ডির পেরিয়ে এখনো উঁকি দেওয়া হয়নি অন্য দেশে, দেখা হয়নি ভিন্নরুপ, এক সময় সৈয়দ মুজতবা আলীর রম্য রসে সেই রুপের স্বাদ গ্রহণ করলেও প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসেই এখন চর্ম চোখে দেখা যায় অনেক কিছু! আমি সেই দলের একজন যারা বিনোদন খুঁজে সাহিত্য রসে, ভ্রমণ ব্লগে। তাবৎ দুনিয়ার পর্যটন ভূমি আমার দর্শন বোধ হয় শেষ!!!

গীত মনে হচ্ছে বেশি হয়ে যাচ্ছে? আসল কথায় তবে ফিরি, শিরোনাম দেখে নিশ্চয়ই অনুমান করতে পেরেছেন কোন স্থানের কথা উল্লেখ করেছি? যারা আমার মতো সামুতে নিয়মিত উঁকি দেন তারা বিষয়টি ধরতে পেরেছেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে এক ব্লগারের পোস্টে চমৎকার এই উপমাটি দিয়েছিলেন আমাদের প্রিয় একজন সিনিয়র ব্লগার ভাই।

কেমন আছে সেন্টমার্টিন? এক বাক্যে যদি বলি তবে বলবো, একদম ভাল নেই প্রকৃতির দান অপরুপ সেন্টমার্টিন।

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দুই রাত ছিলাম সেন্টমার্টিন, এটি আমার দ্বিতীয় ট্যুর, ছয় বছর আগে প্রথমবার গিয়েছিলাম। সেই সময় আর এই সময়ের তুলনা করে কিছু বিষয় উল্লেখ করছি তাহলে বুঝতে পারবেন।

এক, সমুদ্র বিলাস! কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর একটি বাংলো বা রিসোর্ট, যারা সেন্টমার্টিন যান তাদের অধিকাংশ এখানে একবার হলেও যান, ছবি তুলেন, স্মৃতি সমৃদ্ধ করে রাখতে। ২০১৪ সালে যখন যাই তখন এই রিসোর্টের আশেপাশে তেমন কোন স্হাপনা ছিল না, পুরো জায়গাটি ছিল ফাঁকা, পড়ন্ত বিকালে চমৎকার ভিউ পাওয়া যেত এখানে দাঁড়ালে। আশেপাশে সম্ভবত দুই তিনটি রিসোর্ট ছিল আর এখন? এখন হুমায়ুন আহমেদের রিসোর্ট খুঁজে পাওয়া মুশকিল, পুরো এলাকা জুড়ে রিসোর্টের ছড়াছড়ি সাথে একদম সৈকতের উপর গড়ে তুলেছে অস্থায়ী মার্কেট!!!

দুই, আপনি অনলাইনে চোখ রাখলে দেখতে পাবেন সেন্টমার্টিন রিসোর্ট ব্যবসায়ীদের বিজ্ঞাপন, সৈকতের এক মিনিট হাঁটা দুরত্বে আমাদের রিসোর্ট! এর অর্থ দিনে দিনে তাঁরা মূল সৈকত দখল করে গড়ে তুলছে এই রমরমা বাণিজ্য রিসোর্টগুলি। আমরা যে রিসোর্টে ছিলাম সেই রিসোর্ট ব্যবসায়ীর কাছে প্রশ্ন করেছিলাম কি পরিমাণ রিসোর্ট আছে বর্তমানে? ধারণা দিলেন ১৫০ এর অধিক হবে! অথচ দশ বছর আগে সেখানে বড়জোর বিশটির মতো হোটেল-রিসোর্ট ছিল!!

তিন, প্রতি বছর এখানে পর্যটক সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের খাবারের পানি, গোসলের পানির চাহিদা মেটাতে প্রচুর পরিমাণ পানি নিচ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে যা প্রচন্ড হুমকির মুখে ফেলছে দ্বীপটিকে। অতিরিক্ত মানুষের যাতায়াতের ফলে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ দিনকে দিন নোংরা হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে পুরো জীববৈচিত্র্যের পরিবেশ।

কিছু উপদেশ।
আগে একটি পোস্টে কিছু বলেছিলাম এই বিষয়ে।

আমি বিশ্বাস করি সরকার যদি আমার এই উপদেশগুলি মানেন তাহলে সেন্টমার্টিন ফিরে পাবে তার সেই যৌবন ভরা রুপ সৌন্দর্য।

এক, বছরে তিন মাস অর্থাৎ ১লা ডিসেম্বর থেকে ২৮/২৯ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটক যাওয়া আসা উন্মুক্ত রাখতে হবে এরপর পুরোপুরি বন্ধ।

দুই, দিনে দুই হাজারের বেশি পর্যটক প্রবেশ নয়।

তিন, স্থানীয় সকল ব্যবসা, যেমন দোকান, রিসোর্ট, হোটেল ৮০% স্থানীয়দের হাতে তুলে দিতে হবে, প্রয়োজনে লোন দিয়ে তাদের সহযোগিতা করতে হবে, বর্তমানে সব ব্যবসার (ছেঁড়াদ্বীপগামী ট্রলার বাদে) ৭০% বহিরাগতরা লিজ নিয়ে ব্যবসা করে! মনে রাখতে হবে মায়ের চেয়ে কখনো মাসির দরদ বেশি হতে পারে না। স্থানীয় একজন আচার বিক্রেতার কাছে জানতে চেয়েছিলাম এত লোক আসছে প্রতিদিন আপনাদের কেমন সুবিধা এতে? তিনি কিছুটা ক্ষোভ আর দুঃখ করে বলেছিলেন, আপনারা কেন আসেন? সব কিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে।

চার, সৈকতের আশেপাশে অবস্থিত সকল অবৈধ স্হাপনা দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে, ঢাকার মত পুনরায় যাতে দখল না তা নিশ্চিত করতে হবে।

পাঁচ, সৈকতের একটি ল্যান্ডমার্ক দিতে হবে, যার ভিতরে কোন কিছুই করা যাবে না শুধু হাঁটা আর সমুদ্র স্নান ছাড়া, সাইকেল, মোটরসাইকেল চালানো, ফুটবল খেলা, অস্থায়ী বার-বি-কিউ দোকান ইত্যাদি।

ছয়, সেন্টমার্টিন আইন নামে একটি আইন তৈরি করতে হবে যেখানে সুস্পষ্ট কিছু বিধি নিষেধ উল্লেখ থাকবে যা দেশের অন্যত্র প্রযোজ্য নয়। যেমন কোন প্রকার প্লাস্টিক বহন করা যাবে না, নেশাদ্রব্য নেওয়া যাবে না, ইত্যাদি। প্রয়োজনে বড় অংকের জরিমানা বিধান রাখতে হবে, সিকিমের গ্যাংটকে নাকি রাস্তায় ধুমপান করলে আর ময়লা ফেলালে পাঁচ হাজার রুপি জরিমানা। এই রকম কঠোর আইন করে প্রয়োগের নিশ্চিত করতে হবে।

সাত, টুরিস্ট পুলিশ ছাড়া নৌবাহিনীর একটি শক্তিশালী টিম যেখানে রাখতে হবে সর্বদা, তারা নিয়মিত টহল দিবে দেখবে সবাই ঠিকমতো আইন পালন করছে কিনা।

আট, একটি বিশেষ সম্পদ হিসাবে দ্বীপটিকে ঘোষণা করতে হবে।


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৫৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×