somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন, আশা নিয়ে গিয়ে দুঃখের প্রবাসজীবন

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যখন এই লেখা পড়ছিলাম। তখন এতো কষ্ট লাগল। যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। প্রবাস জীবন কত কষ্টের কিভাবে তারা দিনযাপন করছে। সে দিকে সরকার কোন খেয়াল নেই। বিশেষ করে স্ব স্ব দেশের রাষ্ট্রদুত যারা থাকেন। তারা কেন যে পদক্ষেপ নেয় না। তা আমার মাথায় আসে। যখন অন্য দেশের দুতাবাসের দিকে তাকাই বা তুলনা করি। আমার দেশের দুতাবাস আর অন্য দেশের দুতাবাস কত পার্থক্য। যদি ধরা হয় ফিলিপাইন দেশ তাদের দেশ থেকে কোন শ্রমিক বিদেশে আসলে সাথে সাথে তারা চেক করে, চুক্তিপত্র, তাদের বাস স্থান, বেতন নিরাপত্তা এই সব। আর আমার দেশের কোন শ্রমিক আসলে তার কোন খোজই থাকে না। যা হোক লেখা পড়লে আপনারা মালয়েশীয়ার শ্রমিকের জীপন যাপন অবস্থা বুঝতে পারবেন।কত কষ্ট করে টাক পাঠায়। লেখাটি লিখেছেন আমার এক প্রবাসী ভাই-কুয়ালালামপুর থেকে শরিফুল হাসান-তারিখ-২১-১২-২০১০ দৈনিক প্রথম আলো।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের জালান পাহাং থেকে ট্যাক্সিতে সেলানগর রাজ্যের ক্লাং জেলায় যাওয়ার পথে দুই পাশের আকাশছোঁয়া অট্টালিকা, দীর্ঘ ফ্লাইওভার, প্রশস্ত সড়ক দেখে মুগ্ধ হতে হয়। কিন্তু ক্লাংয়ের কাপাং এলাকায় গিয়ে এই মুগ্ধতা কেটে গিয়ে মন ছেয়ে যায় বিষাদে। সেখানকার অন্ধকার খুপরিঘরগুলো যেন উদ্বাস্তু শিবিরের ঘর বা বন্দিশালার প্রকোষ্ঠ। ঘরগুলোতে অনেক মানুষ শুয়ে আছেন।
এই ঘরগুলোর বাসিন্দারা বাংলাদেশ থেকে আসা শ্রমিক। কেমন আছেন—এই প্রশ্নের জবাবে আক্ষেপ করে তাঁদের কয়েকজন বললেন, প্রবাসী-আয় (রেমিট্যান্স) পাঠিয়ে তাঁরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন। তাই সরকারের কাছে তাঁরা টাকা পাঠানোর যন্ত্র। তাঁদের নিয়ে দেশ-বিদেশে সভা, সেমিনার হয়। কিন্তু তাঁদের কীভাবে বাস করতে হয়, তার খোঁজ কেউ রাখে না। দেশে থাকতে তাঁরা এর চেয়ে ভালো ছিলেন।
মালয়েশিয়ায় সাপ্তাহিক ছুটি রোববার। সেদিন দুপুরে কাপাং এলাকায় গেলে বাংলাদেশের সাংবাদিক শুনে মুস্তাফিজুর রহমান, আলাউদ্দিন, হাফিজুর, কামাল হোসেনসহ প্রায় ২০ জন বাংলাদেশি এগিয়ে আসেন। নিয়ে যান তাঁদের আবাস দেখাতে ওই অন্ধকার ঘরগুলোতে। ময়লা-আবর্জনা, কারখানার বর্জ্যের স্তূপ পেরিয়ে যেতে হয় ঘরগুলোতে। টানা বারান্দার মতো ওই সব ঘরে দুপুরেও সূর্যের আলো ঢোকে না। ঘরের দুই পাশে ওপর-নিচ করে অনেক খাট রাখা। সেই সব খাটে কোনো রকমে ঘুমাচ্ছেন বাংলাদেশি শ্রমিকেরা।
কাপাংয়ে কয়েক মাইলজুড়ে দেখা যায় এমন নোংরা পরিবেশে ঘর, নোংরা রাস্তা, কাঁচা মাটির সরু পথ। মালয়েশিয়ার সব উন্নয়ন যেন এখানে এসে থেমে গেছে। এমন পরিবেশেই বাস করছেন ভাগ্য ফেরাতে আসা প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক। তাঁদের প্রত্যেকের প্রবাসজীবন যেন একেকটি দুঃখগাথা। তাঁদের বেশির ভাগ এখানকার বিভিন্ন কাঠের আসবাবের দোকান ও কারখানায় কাজ করেন। তাঁরা সরবরাহ লাইনের পানি পান করেন, তাঁদের জন্য শৌচাগারের সুব্যবস্থা নেই। এ কারণে এখানে ডায়রিয়া, পেটের অসুখ লেগেই থাকে। তাঁরা জানান, একটু ভালোভাবে বাঁচার, ভালো রোজগারের স্বপ্ন ও আশা নিয়ে অনেক টাকা খরচ করে তাঁরা মালয়েশিয়ায় এসেছেন। কিন্তু এখানে আসার জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে, কয়েক বছর পরও তাঁরা তা তুলতে পারছেন না। মাঝে মাঝে বেতনও বন্ধ থাকে। টাকা না ওঠায় দেশেও ফিরতে পারছেন না তাঁরা। তাই বাধ্য হয়ে এই নোংরা পরিবেশে কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে।
এই প্রবাসীদের একজন রিপন বিশ্বাসের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায়। তিনি জানান, দিনে ১২ ঘণ্টা কাজের পর ওভারটাইম করেন। এর পরও মাসে ৭০০ রিংগিতের (বাংলাদেশি মুদ্রায় এক রিংগিতের বিনিময় হার প্রায় সাড়ে ২২ টাকা) বেশি আয় হয় না।
কাপাংয়ের আউটলাইন স্কয়ার ফ্যাক্টরির বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিক জানান, তিন মাস ধরে তাঁরা ১৫০ জন শ্রমিক বেতন পাচ্ছেন না। অর্থের অভাবে এখন তাঁদের খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হওয়ার জোগাড়। প্রায়ই বেতন কেটে রাখা হয়। ম্যানেজার খারাপ ব্যবহার করেন।
ওই কারখানার কর্মী কুমিল্লার আলাউদ্দিন বলেন, ‘১০ বছর ধরে এভাবে জীবন কাটছে।’ ঝিনাইদহের জামালউদ্দিন জানান, দুই লাখ টাকা খরচ করে তিন বছর আগে এসেছেন। সেই টাকা কবে উঠবে জানেন না। তিন মাস বেতন না পাওয়ার বিষয়টি জানালেন কিশোরগঞ্জের রবিউল আউয়ালও। ফরিদপুরের মধুখালীর আতাউর রহমান জানান, দুই লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে ২০০৮ সালে এসে শুরুতে কাজ পাননি। বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনের সেতুর নিচে শুয়ে থেকেছেন। এখন দিনে ১১ ঘণ্টা কাজ করে ৪৬৮ রিংগিত পান। অথচ তিন মাস বেতন নেই। কুমিল্লার মীর হোসেন জানান, তিন মাস বেতন বন্ধ থাকায় এক বাংলাদেশির দোকানে বাকিতে খাচ্ছেন।
ময়মনসিংহ সদর এলাকার মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘এলাকায় বোঙ্গা কামাল বললে সবাই আমাকে চিনবে। কিন্তু এখানে আমার কোনো দাম নেই।’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে মন্ত্রীরা আসেন, কিন্তু আমাদের কথা কেউ শোনেন না।’
আউটলাইন কারখানার পাশেই থাকেন ইউরোসেজি কারখানার বাংলাদেশি শ্রমিকেরা। নোংরা পরিবেশে খাবার খাচ্ছিলেন তাঁদের কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে মন্টু মিয়া ও বিল্লাল হোসেন জানান, তাঁরা অন্তত বেতন পাচ্ছেন। তবে পানি ও শৌচাগারের সমস্যা প্রকট। তাই অসুখ লেগেই আছে।
সেখান থেকে কিছু দূর এগোলে দেখা হয় নেত্রকোনার নূর মোহাম্মদের সঙ্গে। বয়স্ক এই নির্মাণশ্রমিক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবা, আর পাারি না। লোহা নিতে নিতে পিঠে ঘা হয়ে গেছে। দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এসেছি। টাকাটা উঠলে যেমন করেই হোক দেশে চলে যাব।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘সারা দিন কাজ করে বেতন পাই ৪৩৫ রিংগিত। এই দিয়ে নিজে চলব, নাকি দেশে পাঠাব? তার পরও আশায় আছি, একদিন বেতন বাড়বে।’
আউটলাইন কারখানার বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মন্টু কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোথাও কোনো বাংলাদেশি শ্রমিক বিপদে আছে, এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা সেখানে কল্যাণ সহকারী পাঠাই। এরপর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু ওই কারখানার শ্রমিকেরা কেউ অভিযোগ জানাননি।’
একই কথা বলেন দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মাসুদুল হাসান। তবে তিনি বলেন, ‘আউটলাইনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। এর আগেও দুবার কোম্পানিটি এমন করেছে। পরে সেখানকার শ্রমিকদের অন্য জায়গায় কাজ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’
তিন মাস বেতন না পাওয়ার বিষয়টি দূতাবাসে জানিয়েছেন কি না, প্রশ্ন করলে আউটলাইন কারখানার শ্রমিক আলাউদ্দিন, মুস্তাফিজুরসহ কয়েকজন বলেন, তাঁরা জানাননি। কারণ জানালেও দূতাবাস কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এ ছাড়া অভিযোগ করার কথা কারখানার মালিক জানতে পারলে তাঁদের মেরে বের করে দেবেন। কিছুদিন আগে এভাবে তামিলরা মেরে অনেক বাংলাদেশিকে বের করে দিয়েছে। এখন সব বাংলাদেশি অবৈধ। তাই মার খাওয়ার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেন না। পারলে পালিয়ে অন্য কোথাও চলে যান।
মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা তেনেগানিতার নির্বাহী পরিচালক, বিকল্প নোবেলজয়ী আইরিন ফার্নান্দেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই একবিংশ শতাব্দীতে এভাবে শ্রমিক এনে ক্রীতদাস বানিয়ে রাখার বিষয়টি লজ্জার। এ কারণে একটি উন্নত দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এসব কারণেই এ বছর মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবসের স্লোগান ছিল, “বন্ধ হোক এই দাসপ্রথা”।’

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×