somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষা মন্ত্রীর বিয়ানীবাজারে রাস্থার দুরাবস্থা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিয়ানীবাজারের রাস্থা নিয়ে সম্প্রতি ফেসবুক ও গণমাধ্যমে খুব বেশী লেখালেখি দেখা যাচ্ছে (কাবিকা, সৌর বিদ্যুৎ, পিএইচজি মাঠের সংস্কার কাজ, পৌর প্রশাসকের অনিয়ম ইত্যাদির দুর্নীতি নিয়েও চারদিকে আওয়াজ উঠেছে )। এদিকে বিদেশ থেকে এলাকার প্রবাসীরা আবেগ-রাগ-বিরাগ- অনুরাগের ঝড় তুলছেন। ঝড়ের উপজিব্য‬ বিষয় পৌর এলাকায় রাস্থার দুরবস্থা। শুধু পৌর এলাকা নয় বিয়ানীবাজারের-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক থেকে শুরু করে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড-গ্রাম-পাড়া-মহল্লা প্রতিটি রাস্থা মানুষ ও গাড়ি চলাচলের সম্পুর্ণ অনুপযোগী হয়ে আছে। যদিও ক্রমাগত সংস্কার-পূণঃসংস্কার দেখা যায় কিন্তু চলার উপযোগী থাকে না। বেশী করে চলার (দুর্নীতি করে, আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন) উপযোগী হয়ে উঠেন কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট গুটিকয়েক ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের মালিক-রাজনৈতিক দলের নেতা-পাতিনেতা ও সরকারের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। শুধু কি তাই নতুন রুপে নতুন সাজে রাস্থার কাজ হলেও এলাকাবাসীর দুর্ভোগ কিন্তু লাগব হচ্ছে না। রাস্থার এক প্রান্ত থেকে কাজ শুরু হয় ঠিকই কিন্তু অপর প্রান্তের কাজ শেষ হতে না হতেই শুরুর দিকের রাস্থায় পিচঢালা পথের পলেস্থার উঠে যায় ও ছোট বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। এরকম উপর্যপুরি কাজ ও টাকা আত্মসাতের বিষয় এখন গাঁ সওয়া হয়ে গেছে এলাকাবাসীর। সম্প্রতি কাজ হওয়া ঘুঙ্গাদিয়া-কাজিরবাজার রাস্থা,নয়াবাজার থেকে ত্রিমুখী বাজার পর্যন্ত রাস্থা ও দুই লেনের পৌর শহরের মধ্যে দিয়ে ডিভাইডারের কথা বলা যেতে পারে। কথা মুঠেই বাড়াবাড়ি নয়; যারা এখানে বাস করেন তারা কিন্তু দূরাবস্থা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। এই ধারা অনেক আগে থেকেই দেখা যাচ্ছে; প্রক্রিয়া চলমান থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দুর্নীতির পুকুর চুরি থেকে দুর্নীতির সাগর চুরি দেখতে পাবে এলাকা ও দেশের মানুষ। এমনিতে সবাই জানে উন্নয়নের জন্য যে টাকা আসে তার তিন ভাগের এক ভাগ টাকা দিয়ে লোক দেখানোর জন্য কোন মতে কাজ হয়, বাকি দুই ভাগ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-ঠিকাদার-সরকারী কর্মকর্তার পকেটে যায়। বিয়ানিবাজারের অবস্থা কী!!! পরিষ্কার হচ্ছে না। এখনও রাস্থার দুর্নীতির অথেনটিক কোন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। করা যায়ও না; হলেও তেমন কোন বিচার হয় না।


রাস্থা ও অন্যান্য খাতে বিয়ানীবাজারে যে দুর্নীতি হচ্ছে এই আওয়াজ কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রগুলোতে ইতিমধ্যে উঠে আসছে। এমনকি গণমাধ্যম থেকে শুরু করে কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষ, সকলের মুখে একই আওয়াজ, হচ্ছেটা কি? মগের মুল্লুক? কেউ কি দেখার নেই ? আর সাথে সাথে বুঝতে অসুবিধাও হচ্ছে না যে এখানে টাকা আত্মসাতের মহোৎসব চলছে। শুধু কি তাই! কানে-কানে, মুখে-মুখে রটে যাচ্ছে, একটার পড় একটা চুর-বাটপারের নাম। তবে এই দুর্নীতিবাজরা কিন্তু আমাদের চারপাশের সমাজ-রাষ্ট্রের উপর ও নিচের লেবেলের নেতৃস্থানীয় কিছু মুখোশধারী সুশীল । ওদের তথাকথিত হাত লম্বা। ওরা কথিত সভ্য সমাজের নিয়ন্ত্রক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী সিন্ডিকেট। ওরা রাষ্ট্রযন্ত্রের পাহারাদার, শাসক-শোষকদের অমোঘ শক্তি, বলা যায় শোষণের গণভিত্তি। তাই বিয়ানীবাজারের কান্না 'রাস্তা'র ভূত-বর্তমান-ভবিষ্যত জানতে হলে, বুঝতে হলে, জানাতে হলে বা পরিবর্তন আনতে হলে তাদের স্বরূপ উন্মোচিত করতে হবে। সিনেমার মতো বাস্তবের ভিলেন কিন্তু খুব সহজে নায়ক বা সাধারণের কাছে ধরাশায়ী হয় না। করা যায়ও না; তাদের কাছা-কাছি যেতে হলে তাদের মূল উৎপাঠন করতে হলে জানতে হবে বর্তমান 'সমাজ কাঠামো বা সিস্টেম'কে। পরে না হয় আওয়াজ তোলা যেতে পারে ' ভাগো নেহি দুনিয়াকো বদলো' বলা যেতে পারে।


এলাকার দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের চরিত্র জানতে হলে আমাদের জানতে হবে আধুনিক রাষ্ট্রের চরিত্র অর্থাৎ 'সমাজ কাঠামো বা সিস্টেম'কে, অসাম্যের এই সমাজ কাঠামোকে ভাঙতে গেলে বুঝতেই হবে বর্তমানের এই অসাম্যের সমাজ কাঠামোকে, যার প্রচলিত নাম 'সিস্টেম'। তা না হলে আমরা চিন্তা-ব্যাখ্যার দিক দিয়ে রয়ে যাব সেই আদিম যুগের অন্ধকারে; মালিকানার নির্মম দাসত্বে। দাসত্বের অন্ধকারে চলতে চলতে এক সময় মানুষ রূপী সর্পের লেজে পা পড়ে যেতে পারে; পড়লে গুম-খুন-কারাগার-জঙ্গি যেকোন একটির শিকার হতে হয়-হবে। সম্প্রতি ধর্মীয় কুসংস্কার নিয়ে কথা বললে 'নাস্তিক' বলে সরকার স্বীকৃতি দিয়ে জঙ্গিদের মদদ দিবে আর জঙ্গিদের চাপাতির কুপে প্রাণ দিতে হবে প্রগতির সৈনিককে। আবার রাজনীতি বা সরকারের সমালোচনা করলে রাজাকার-দেশদ্রোহী হয়ে জেল-গুম-খুন হতে হবে। এই হলো স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা বা বাকস্বাধীনতা। যদিও আমরা আধুনিক রাষ্ট্রের কথিত স্বাধীন নাগরিক, কিন্তু আমরা নিয়ন্ত্রীত হচ্ছি শাসক শ্রেণী দ্বারা, তারা হচ্ছে শিল্পপিত-পুঁজিপতি শ্রেণি বা পুঁজির মালিক, অর্থনীতির নিয়ন্তা। ঐ মালিকরা প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের মালিক; পুঁজির মালিক। আর রাষ্ট্র আবার একটি ওপরটির পরিপূরক বটে। আমাদেরকে মালিকানা থেকে, দাসত্ব থেকে, অধীনতা থেকে মুক্ত হতে না পারলে বিয়ানীবাজার তথা দেশের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে শোষণের চাকা চলতেই থাকবে। আর আমরা শোষিত-লাঞ্চিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত হতেই থাকব। সুবিধা বঞ্চিত থেকেই যাব, আর তারা আমাদের টেক্সের টাকায় তাদের বিলাসী জীবন-যাপনের জন্য গাড়ি-বাড়ি চক্রাকারে বাড়াতেই থাকবে; দেশ-বিদেশের ব্যাংকে টাকার পর্বত জমাতেই থাকবে। এক সময় আমাদের চারপাশের রাস্থা-গাড়ি-অফিস-আদালত সব কিছুরই মালিক হয়ে যাবে আজকের চোর-কমিশনভোগী যারা; অর্থাৎ আমাদের মালিক, রাষ্ট্রের মালিক, অর্থনীতির নিয়ন্তা। আমরা বর্তমানে যেরকম দেখতে পাচ্ছি বিয়ানীবাজারের কাঠামো এবং উপরিকাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করছে গুটি কয়েক মানুষ। যেমন আইন-শৃংখলা-শিল্প-সাহিত্য-শিক্ষা-চিকিৎসা-সন্ত্রাস-জঙ্গি-রিলিফ-কাবিখা ইত্যাদি কমিঠিগুলোর সাথে জড়িত সরকার দলীয় নেতা, রাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ কিছু সুবিধাভোগী লোক। সরল ভাষায় বলা যায় তারাই আমাদের মায়েবাপ 'মালিক'।


মালিকানার ধারণা কিন্তু অনেক পুরনো, সেই আদিম সাম্যের সমাজে যখন গোড়া পত্তন হয় দাস-মালিক ও দাসদের। দাস প্রথার সেই সময়েই দাস মালিকেরা দাসদের মনে করতো তাদের সম্পত্তি; সেই সময় আইনও এই মতকে পুরোপুরি নিশ্চয়তা প্রদান করত এবং দাসদের বিবেচনা করত দাস মালিকদের পুরোপুরি মালিকানাভুক্ত অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় শ্রেণী দ্বন্দ্ব ও লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে মালিকানার রূপ পাল্টায় কিন্তু আইন করে অধীনতা বহাল থাকে। সমাজের এই রুপের পর ইতিহাসে দেখা যায় আরেক রূপ-সামন্ততন্ত্র। এখানেও সামন্ত-জমিদারদের মালিকানাধীন থাকতে হয় কৃষক ভূমি দাসদের; শ্রেণী-নিপীড়ন ও অধীনতা বহাল রেখে সামন্ত দাসত্ব অনেক দিন পৃথিবীতে টিকে ছিল। সেই সময় সামন্ততান্ত্রিক সমাজের অভ্যন্তরে এক নতুন শ্রেণি-পুঁজিপতি শ্রেণির- উদ্ভব ঘটে। এক রুপের সমাজের বদলে শ্রেণি-বিভক্ত পুঁজিবাদী সমাজে মৌলিকভাবেই নতুন রূপ পরিগ্রহ করলো যার নাম 'পুঁজিবাদ'।


উপরে শ্রেণি শোষণের কথা টেনে আনা হলো এ কারণে যে আমাদের বুঝতে হবে রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষমতার কাছাকাছি বা সিস্টেমে'র যারা [বিয়ানীবাজারের মন্ত্রী, পৌর প্রশাসক, প্রশাসনের কর্মকর্তা, উপজেলার চেয়ারম্যান (তিনি আবার দেশ সেরা), শ্রদ্ধেয় মন্ত্রীর একান্ত কাছের কিছু মানুষ] তাদের গালা-গালি, দোষত্রুটি নিয়ে লেখা-লেখি করলে বা বিভিন্ন আড্ডায় তর্ক-বিতর্ক করলে, কথার পর কথা আওড়ালে এলাকার বা দেশের দুর্নীতির রূপ-চিত্রের এমন কোন পরিবর্তন আসে না। তবে যে একেবারে হবে না তাও কিন্তু নয়। যা হয় তা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া; এখানে আমার আপনার কোন হাত নেই। যদিও অনেক সময় জনগণ ক্রেডিট নিয়ে থাকি তা অনেকটা আত্মতুষ্টি। সন্তুষ্টই অনেক সময় আমাদের কাছে অর্জন মনে হয়। সরকার অনেক সময় গণতন্ত্রের প্রত্যয়ন পত্র জনগণের কাছ থেকে নেয়ার জন্য জনগণের অর্জন-আকুতি-মিনতি কৌশলে মেনে নেয়। আর তখন আমরা তৃপ্তির ঢেঁকুর দিয়ে বলি,'আমাদের সরকার গণতান্ত্রিক সরকার' ঐ রকম অভিনয় অনেক সময় সরকার করে থাকে। করতে হয়। অথচ আমাদের ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে রাতে বিছানায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত সব কিছুই নির্ভর করে দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর। সরকারের উপর; রাজনীতিবিদদের ইচ্ছের উপর। সুতরাং বিয়ানীবাজারের অনেক কিছু নির্ভর করে উপরে উল্লেখিত কাঠামোর ইচ্ছার উপর। আমরা যারা জনগণ বা ভোটার, তারা হচ্ছি শুধু রাজনৈতিক মঞ্চের ক্রীড়ানক। আমারা দেশের নাগরিক অথচ আমরা দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখতে পারব না!!! তার কোন সুযোগ নেই। এই কাঠামোতে যেতে হলে বা শাসন করতে হলে রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট অংশের সাথে মিলে যেতে হবে, তবেই আপনি লঙ্কায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন; রাবণ হওয়ার পথ সুগম হবে। রাবণের সিংহাসন আবার দু'টি পরিবার (আওয়ামীলীগ ও বিএনপি) আঁকড়ে আছে, তাদের দাসদাসীর সংখ্যা-বহর অনেক বড়। পারিবারিক সিংহাসন আবার কয়েকটি পায়ার উপর দাঁড়িয়ে।


রাষ্ট্রের সিংহাসন অলিখিত চারটি পায়ার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। রাষ্ট্রের প্রতিটি সরকার নিজেদের প্রয়োজনে পা'র অস্থিত্ব ঠিকিয়ে রাখে (রাষ্ট্রের অসাম্যের সমাজ কাঠামো বা গঠন-শৈলী অনেকটা এরকম ঃ ১ শাসক গোষ্ঠী ও শক্তিশালি রাজনৈতিক দল ২ প্রশাসন-পুলিশ-সেনা প্রশাসক ৩ প্রচার মাধ্যম ৪ বুদ্ধিজীবী।)। এবং তাদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে আপনার-আমার-সকলের ঘুম-জাগরন-স্বপ্ন ইত্যাদি। বিয়ানীবাজারের মত ছোট শহরেও সরকারের প্রয়োজনে তার কাঠামোর প্রতিটির তৃণমূলে প্রতিনিধি রয়েছে। জনসাধারণকে ওদের জানতে হবে চিনতে হবে এবং তারা যে শোষকদের নিচের স্থরের কথিত ক্ষমতাধর ব্যাক্তি, তা বুঝতে হবে। যেহেতু দেশের চলমান গতি সমাজের কাঠামো এবং উপরিকাঠামো নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক দল-গুষ্টি; সেহেতু আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। আমাদের জানতে হবে সমাজের শিক্ষানীতি, চিকিৎসা ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্প-সাহিত্য-ক্রীড়া থেকে শুরু করে দুর্নীতির ব্যাপকতা, বেশ্যাবৃত্তি, পর্নো ছবির রমরমা, যৌনউশৃঙ্খলতা ইত্যাদি কেমন চলবে কতটা চলবে-সবই ঠিক করে সিংহাসনের নিয়ন্তাশক্তি। তাই আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। যেমন এই কিছুদিন আগেও আমরা দেখলাম সরকারের প্রয়োজনে পুলিশ পাহারা দিল 'জাগরণ মঞ্চ'কে, প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ আবার পেটাল। জঙ্গিরা একজনের পর একজন প্রগতিশীল ব্লগারদের কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করল অথচ রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তি প্রকারান্তরে ব্লগার মারার জন্য উস্কানিমুলক কথা বলে সমর্থন করলেন জঙ্গিদের। অথচ সম্প্রতি একটার পর একটা জঙ্গি ক্রসফায়ারে মারা হচ্ছে; প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করে এত জঙ্গির সন্ধান কি করে প্রশাসন পেল? এখন নিশ্চয়ই বুঝতে অসুবিধা হবে না রাষ্ট্রের চরিত্র। হয়ত রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যারা আছে তাদের ক্ষমতা কাঠামো ঠিকিয়ে রাখার জন্য তারা জঙ্গি নিধন শুরু করেছে। আমরা যদি মনে করি জনগণের বা প্রগতিশীলদের রক্ষার জন্য অভিযান হচ্ছে, তাহলে কিন্তু আমরা বার বারের মতো আবারো ভূল করব। আসলে এই হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রের চরিত্র, বিয়ানীবাজারের চরিত্র এবং আমাদের বাকস্বাধীনতাহীনতা নিরাপত্তাহীনতার চালচিত্র।


আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল বিয়ানীবাজারের রাস্থার দুরবস্থা। বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনিতে আমাদের প্রধান আঞ্চলিক সড়ক গাড়ি চলাচলের তুলনায় সরু; প্রশস্ত করা সময়ের দাবী। তার উপর চারখাই বাজার থেকে বিয়ানীবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা-গর্তে ভরপুর। এর মধ্যে মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ গর্ত রয়েছে পৌর সভার সীমানায় ঢোকার সময় বারপালের দিঘী ও ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স'র সম্মুখে পিচ ভেঙে প্রায় ৬/৮ ফিট করে রাস্থার ভিতরে পাঁচ থকে সাতটি গভীর গর্ত, গর্তগুলির জন্য ইতিমধ্যে অনেক দুর্ঘটনা হয়ে গেছে। দীর্ঘ দিন থেকে কর্তৃপক্ষ সংস্কার করে না; কর্তৃপক্ষ কাজ করে না; বলা যায় কর্তৃপক্ষ অকার্যকর। তার দুই শতাধিক ফুট দূর থেকে বিয়ানীবাজার ডাক বাংলোর নিচ পর্যন্ত অনেক জায়গায় একটু বৃষ্টি হলেই গাড়ি-মানুষ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্থা পরিণত হয় ছোট ছোট দুই খালের মত। রাস্থা খালে রুপান্তরিত হতে ভারি বর্ষণের দরকার হয় না,অল্প বরষণে যা হবার তা হয়ে যায়। শুরু হয় চারপাশের বায়ুমণ্ডলে-ইথার তরঙ্গে মন্ত্রি-প্রশাসকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি; তখন আবার ফেসবুকে ছবি আপলোড করতে দেখা যায়; শুরু হয় লেখার ঝড়,গালাগালির ঝড়। এখানে আবার পক্ষ বিপক্ষ দেখা যায়। অবাক বিষয় হচ্ছে কেউ তার নিজে পক্ষ বা অধিকারের কথা বলে না। বলে 'রাজা মহারাজার কথা, বড় বড় মানুষের'(!!!) কথা। এরকম করতে করতে বিকল্প রাস্থা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে হয়, তবে ঘন্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে, সময় নষ্ঠ করে। যান-যন্ত্রের অনেক ক্ষয় ক্ষতি স্বীকার করে; বিপদ মাথায় নিয়ে। এসময় চরম বিপাকে পড়ে শিশু-শিক্ষার্থী ও রোগী বহনকারী গাড়ি। অন্য দিকে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হচ্ছে খাসা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচের রাস্থা। ঐ রাস্তায় দুই লেনের কাজের সময় কাজ শেষ হওয়ার তিন থেকে চার মাসের মধ্যে রাস্থায় বড় বড় গর্ত দেখা দেয় (যখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার সম্পুর্ণ টাকা সরকারের কাছ থকে তোলে নিতে পারেনি)। অন্য দিকে কলেজ রোডের পয়েন্টের রাস্থা। রাস্থার বেহাল দশার জন্য ট্রাফিক লেগেই থাকে। পা-কাদা-পানি যেখানে একাকার, তার নাম কলেজ রোড পয়েন্ট। 'আবার মরার উপর খড়ার গাঁ' হয়ে আছে মাছ ও সবজি বাজার; সব কিছু মিলিয়ে দুই লেনের জায়গায় এখন এক লেন দিয়ে গাড়ি চলাচল করে, পথচারীদের বুঝতে অসুবিধা হয় না রাস্থার দশা। মাসের পর মাস এলাকাবাসী দুর্যোগ পোহাতে হচ্ছে। জনগণের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছে না।

প্রশ্ন হচ্ছে কে হবেন আমাদের দূর্ভোগ থেকে মুক্তির ত্রাতা? পৌর প্রশাসক-উপজেলা চেয়ারম্যান-এম.পি (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সফল শিক্ষা মন্ত্রী)? এলজিআরডি'র স্থানীয় কর্মকর্তা-থানা নির্বাহি অফিসার? সব কিছু দেখে-শুনে মনে হচ্ছে কেউই আমাদের লোক না। আসলে এরা সবাই অসাম্যের সমাজ কাঠামোর একেক 'পায়া' তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অনেক কিছু নির্ভর করবে। পশুর (শাসকদের ভাষায়) মত চিল্লাচিল্লি করলে খুব একটা লাভ হবে না। যদিও এই রাস্থা কোন এক সময় আমাদের টাকায় সংস্কার হবে। আমার আপনার ট্যাক্স-ভ্যাটের টাকায় কাজ হবে। যে গড়ি রাস্থার উপর দিয়ে চলে সেই গাড়ির মালিক বছরের পর বছর সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে আসছেন, তার টাকায়, আমাদের টাকায়। উপরে উল্লেখিত কোন ব্যক্তির বাপ-দাদার টাকায় নয়। বরং ওরা চলে আমাদের টাকায়। ওদের দায়িত্ব আমাদের সব কিছু দেখা-শুনা করা (ওরা অবশ্য শপথ নিয়েছে কোন এক সময়)। জনপ্রতিনিধিরা আমাদের ভোটে, আর সরকারের কর্মকর্তারা আমাদের টাকায় কাজ করে। আমার টাকা দেই তারা বেতন পান। অপর দিকে জনপ্রতিনিধিরা যে সম্মানি পান তাও আমাদের টাকায়। অথচ এখন ওরা রাজা আমারা প্রজা, আমাদের কথা শুনার ওদের কাছে সময় নাই। ওরা এই রাস্থা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার জীপ গাড়ি নিয়ে চলে আর আমরা ওদের গর্তে পড়া গাড়ির চাকার ময়লা নিয়ে হাটা চলা করি। বাড়ি যাই-খাই-ঘুমাই। আর কত মাস-বছর পার হলে আমাদের রাস্থার সমাধান হবে কেউ জানি না। আমাদের অনেকের জানার ইচ্ছাও নাই। আমরা অনেকেই রাজনৈতিকভাবে অজ্ঞ। তাই আমরা ভুল সময়ে ভুল মানুষের কাছে আশা করে থাকি।

সমাধান হয়ত হয়ে যেতে পারে যদি আমাদের মধ্য থেকে কিছু সাহসী মানুষ মন্ত্রীর গাড়ি থামিয়ে উনাকে রাস্থার উপর দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তবে পারা সম্ভব নাও হতে পারে কারণ উনার চার পাশের চেলা-চামচারা কাছে যেতে নাও দিতে পারে। উনি অবশ্য এক সময় আমাদের লোক ছিলেন, গাড়ি থেকে নামলে হয়ত কাজ হয়ে যেতে পারে। তিনি অবশ্য ভোটে টাকা বিনিয়োগ করেননি, আমাদের কাছ থেকে বলে কয়ে টাকা নিয়ে ভোটের খেলায় জিতে গেছেন। এলাকার প্রতি উনার এই দায়টুকু আছে। তার কাছের দুষ্ট লোকদের জন্য হয়ত আমাদের এই দুরাবস্থার সঠিক খবর পৌছায় না। যে রাস্থা উনার সহযোগিতায় আমরা পেলাম, সেই রাস্থা আসা করা যায় উনিই ঠিক-টাক করে দিবেন। আর যদি না পারা যায়, তাহলে উপজেলা চেয়ারম্যান-পৌর প্রশাসক-থানা নির্বাহি অফিসার তাদের সকলকে ভুরিভোজ দাওয়াত দিয়ে রাস্থায় নামিয়ে দিলে কাজ হয়ত হবে। ওরাত আমাদের মত রাস্থায় পা ফেলে না। ওরা আমাদের টাকায় বড় বড় গাড়ি চড়ে। ঐ গাড়ি চড়ে আবার এই ভাঙাচোরা রাস্থা দিয়ে। একজন আবার অবিরাম ফটো তোলার জন্য টিন-এজদের চেয়েও এগিয়ে। অপর জন এক যুগেরও বেশ সময় ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। যেন গর্ত থেকে বের হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। ওদের মগজ মনে হয় কাদা-পানি দিয়ে তৈরী তা না হলে রাস্থার এরকম চরম খারাপ অবস্থা দেখে-শুনে কেন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না? তা এক রহস্য!
ওদের মগজের মধ্যে সত্যিকারের মানুষের মগজ না, কাদা-পানির মগজ রাস্থায় নামালে বুঝা যেতে পারে। যদি কাদা-পানির হয় তাহলে আমাদের কপালে কষ্ট আছে। ফেসবুকে কোন একজনের স্ট্যাটাসে দেখলাম মন্ত্রীর লোকজন চাচ্ছেন নগরবাসী কাদা-পানির মধ্য দিয়ে চলাচল করুক। তাই আমাদের বর্তমান দুরবস্থা। রাস্থার এই অবস্থা থাকলে জনসাধারণ প্রশাসকের প্রতি বিরাগভাজন হয়। প্রশাসককে দোষারুপ করবেন। আগামীর পৌর সভার ভোটে সরকার দলের পথ সুগম হবে স্থানীয় মেয়র প্রার্থী পদে!!! সরকার দলের লোক মেয়র হবে। তাই মন্ত্রীর কাছে এই খবর যাচ্ছে না। এসব শুনে একটি প্রবচন খুব মনে পড়ল 'রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়'।



সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×