সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ। রিয়াদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সমঝোতা স্মারকটি সই হয়। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র উন্নয়ন এবং শক্তিশালী করার লক্ষে এই স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এমওইউ’র আওতায় সৌদি আরব ও বাংলাদেশ সামরিক প্রশিক্ষণ, অনুশীলন ও শিক্ষা, দক্ষতা বিনিময়, সামরিক ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, প্রতিরক্ষা শিল্প, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পরিদর্শন, সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। এছাড়াও সহযোগিতার আওতায় থাকবে সামরিক চিকিৎসা ও গবেষণা, ক্রীড়া, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সামরিক সদস্যদের সফর বিনিময়, সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও জলদস্যুরোধের কার্যক্রম।
চুক্তির আলোকে সৌদি আরব ও ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী যুদ্ধবিদ্ধস্ত এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দু’টি ব্যাটালিয়নে প্রায় ১৮০০ সদস্য নিয়োজিত হবে। অন্যদিকে সৌদি আরবে ইসলামী সেনাবাহিনী কাউন্টার টেরোরিজম কমিশন-আইএমসিটিসি বাংলাদেশ থেকে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলসহ ৪ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগের জন্য নামও দেওয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ পেয়েছে।
হ্যাঁ যখন আমরা সৌদির সাথে সামরিক সমঝোতার নামে চুক্তি করে টাকা উপার্জনের চিন্তা করছি সেই একই সময়ে কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জন্য হুমকি, এমন কালো তালিকায় সৌদি আরবের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউরোপিয়ান কমিশন। সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন বন্ধ এবং মানি লন্ডারিং ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় এই তালিকাভুক্ত হয়েছে দেশটি। গত বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে ইইউ কর্তৃপক্ষ। আর আমরা কিনা বৃহস্পতিবার এই সমঝোতা চুক্তি করলাম!
আমার মতে সৌদি টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের নৈতিক সন্মান নষ্ট না করলেও চলত। কথায় কথায় আমরা পাকিস্তানের উদাহরণ টানলেও সেই পাকিস্তানের মত একই ভাবে সৌদিকে সেনা ভাড়া দিয়ে উপার্জন করাটা কতটা যুক্তি সম্মত? ব্যর্থ দেশ হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সৌদি অর্থের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। পাকিস্তানের ইমরান খান কিছু দিন আগে সামরিক সহয়তার প্রদানের বিনিময়ে সৌদি থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার নিয়ে এসেছিল। ইতিপূর্বে প্রাপ্ত মার্কিন আর্থিক ও সামরিক সহায়তা এবং বর্তমানের সৌদি অর্থে কিন্তু পাকিস্তান সমৃদ্ধ হতে পারেনাই বরং এশিয়ার অন্যতম অনিরাপদ ও সন্ত্রাসী প্রবন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে এই পাকিস্থান। সুতরাং আমাদের এতদিনের অবস্থান পরিবর্তন করে হটাৎ করেই সৌদির সাথে এভাবে সামরিক সম্পর্কে যুক্ত হবার প্রয়োজন ছিল না।
ইয়েমেনে ৪ বছর ধরে সামারিক আগ্রাসন চালাচ্ছে সৌদি আরব, সৌদি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি ইয়েমেনি নিহত হয়েছে এবং ওই দেশটিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। কিছু দিন আগেই তুরস্কে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসের ভেতরে একজন প্রসিদ্ধ সাংবাদিক হত্যার জন্য বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এবং সংস্থা সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক বিবেচনা করা শুরু করেছে। অনেক দেশের পার্লামেন্টে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে। এরই মধ্যে সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে দেখিয়েছে কিভাবে সৌদির কাছে বিক্রি করা অস্ত্র আল-কায়েদাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের জঙ্গি সংস্থা জেএমবি প্রতিষ্ঠাতা শায়াখ আব্দুর রহমান কিন্তু জঙ্গিবাদের শিক্ষা সৌদি আরব থেকেই এদেশে আমদানি করেছিলেন।
এক কথায় বিশ্বের সব জঙ্গি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক এই সৌদি আরব। আমাদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল কারন বাংলাদেশে এই মুহূর্তে প্রায় এগারো লক্ষ নিরক্ষর ও দরিদ্র রোহিঙ্গারারা অবস্থান করছে কিছু আর্থিক সাহায্যের বিনিময়ে তাদের মধ্যে জঙ্গি তৎপরতা ছড়িয়ে পড়লে সেটা আমাদের সব অর্জন মুহূর্তেই ধূলিসাৎ করে দিবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:০১