somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Drishyam - দুর্দান্ত এক মালায়ালাম সিনেমা :)

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সিনেমা দেখা হয় অনেক, কিন্তু সব সিনেমা নিয়ে লেখার ইচ্ছা থাকলেও অলসতা বা ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে লেখা হয় না। কিন্তু কিছু সিনেমা এমনভাবে নাড়া দিয়ে যায়, (নাড়ার চেয়ে "ধইরা ঝাঁকি দেয়" বললে উপযুক্ত বলা হয়) যে সেটা নিয়া না লিখলে বা মানুষকে না জানালে মনে হয়- "না লিখে এ কি বিরাট পাপ করিলাম আমি?!" পাপমুক্তির জন্য বাধ্য হয়ে লিখতে হয়... অনেকদিন পড় বাধ্য হয়ে লিখছি... অনেকদিন পড় অটোম্যাটিক মুখ থেকে বের হইসে "এইটা আমি কি দেখলাম?"

সিনেমার নাম- Drishyam, ইংরেজিতে যার অর্থ করলে হয় Visuals. মালায়ালাম সিনেমা এটা। নাক মুখ অনেকেই ইতিমধ্যেই কুঁচকে ফেলেছেন- সেটা আমি জানি। কারণ আমি নিজেও তাই করেছিলাম এবং করি। তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম সিনেমা মানেই স্বাস্থ্যবান, গোঁফযুক্ত কিছু পুরুষ মানুষের অনর্থক মারামারি... মাইর দেয়ার আগেই বাতাসে শুকনো পাতার মতো উড়ে যাওয়া, হঠাৎ করে ১০-২০ টা গাড়ি হাজির হওয়া, সুন্দরী নায়িকার সাথে নাচানাচি- এটা বলতে গেলে আমাদের মগজে সেট হয়ে গেছে। কিন্তু বিশ্বের সব দেশেই যেমন কিছু অফট্র্যাক এর সিনেম হয়, এই ধরনের ইন্ডাস্ট্রিতেও তা হয়... বাই দ্যা ওয়ে- তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম- তিনটাই কিন্তু আলাদা জিনিস, একটার সাথে অন্যটার মিল নাই, যদিও কিছুদিন আগ পর্যন্ত আমি একই জিনিস মনে করতাম... কি আর করব? "দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া"

ধান ভানতে গিয়ে অনেক শিবের গীত গাইলাম, এবার ধানে ফেরত আসি। ফ্যামিলি ড্রামা আর থ্রিলারের মিশ্রণে তৈরি সিনেমা এটা। সুন্দর একটা ফ্যামিলি- বাবা, মা আর দুই বোন। বাবা কেবল অপারেটর এর ব্যবসা করেন (সহজ বাংলায় বললে- আমাদের বাসায় ডিশ কানেকশন দেয়ার ব্যবসা), মা গৃহিণী, মেয়ে দুইজন ভালো ইংরেজি মিডিয়াম এর স্কুলে পড়াশুনা করে। নিজের ডিশের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকা বাবা পরিবারে খুব একটা সময় দিতে পারেন না। রাতে সাধারণত অফিসেই থাকেন, এবং প্রায় পুরো রাত জেগে সিনেমা দেখেন ( আমার মতো আরকি :P )। সুখে থাকতে ভূতে কিল্যা- নীতিতে মেনে চলে তাঁদের সুখের জীবনে বেশ ভালো একটা ঝামেলা আসলো। বড় মেয়েকে এমএমএস স্ক্যান্ডাল এ জড়িয়ে ফেলল তারই এক সহপাঠী ছেলে। হুমকি দিল যে এই গোপন ভিডিও সে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিবে। মা জেনে ফেললেন ঘটনাটি- দুজনের শত অনুনয় বিনয়ে কোন কাজ হলনা। দুর্ঘটনাবশত সেই ছেলের হাত থেকে নিজের মাকে রক্ষা করতে গিয়ে বড় মেয়ে ছেলেটিকে মেরে ফেলে এবং সবার অলক্ষ্যে লাশ দাফন করে। এতকিছু ঘটে যাওয়ার পড়ে সংসারের কর্তাকে তারা সব জানান। তারা এও জানতে পারে- এই ছেলে পুলিশের আইজি এর সন্তান! পুলিশ এবার তাঁদের পিছনে লাগবে। ক্লাস ফোর পাশ করা গ্রামের এক সাধারণ ডিশ ব্যবসায়ী কি পারবে নিজের বড় মেয়েকে জেলে যাওয়া থেকে বাঁচাতে? তিনি কি পারবেন নিজের পুরো পরিবারকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে?

২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের সিনেমা- বিশ্বাস করেন আর নাই করেন- একটা সেকেন্ড ও বোরিং লাগে নাই! প্রথমে ভাবছিলাম নরমাল ফ্যামিলি ড্রামা, কিন্তু সিনেমা ইন্টারভেল এর শেষের দিকে যেভাবে টার্ন নিল আর সেকেন্ড পার্টে যেই স্পীডে আর যেই একের পড় এক টুইস্ট এ আগাতে থাকল- সেটা এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা! পুরো সিনেমাকে একাই টেনে নিয়ে গেছেন বাবা চরিত্রে অভিনয়কারী Mohanlal - সে কি ন্যাচারাল অভিনয় রে বাপ! বাকি ক্যারেক্টারও সবাই জোস... বাট এই লোক জিনিয়াস! তার এক ছবি দেখেই তার এসি থুক্কু ফ্যান হয়ে গেছি, সামনে আরও দেখার আশা রাখি।

সিনেমা থেকে দারুণ কিছু জিনিস শিখতে পারবেন-
১- সংসারে বাবা নামক মানুষটার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই সিনেমার মতো এরকম একটা বাপ থাকলে- আপনে নাকে তেল দিয়া ঘুমাতে পারেন, বিপদ আপানকে ছুঁতে পারবে না।
২- মোবাইল ফোনের কতটা misuse করা যায়, আর মোবাইল না থাকলেও কি কি সমস্যা হতে পারে।
৩- যেকোনো বিপদে পড়লে আপনার কাজ হবে একটাই- মাথা ঠাণ্ডা রাখা- এই জিনিসটা এই সিনেমা একদম মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ভয় পাইসুন তো মরসুইন! :P যত মাথা ঠাণ্ডা রাখবেন- কেও আপনার কিছুই করতে পারবে না, পুলিশের আইজিও না।
৪- বিপদে একসাথে থাকা জরুরী- ফ্যামিলি ইজ এভ্রিথিং। একজনের বিপদে যখন সবাই তার পাশে থাকবেন- তার মানে হচ্ছে এটাই- সবাই সবার পাশেই আছেন।
৫- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট- যারা বলে সিনেমা দেখা মানে টাইম নষ্ট, এত সিনেমা দেখে কি হয়?- তাঁদের জন্য এই সিনেমা বেশ ভালো একটা শিক্ষা দিবে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পরিবারের কর্তা যেই মাস্টারপিস প্ল্যান বানান, তার উপাদান তিনি সিনেমা থেকে নেন! কুন শালায় কইছে সিনেমা দেখে কিছু হয়না? :P :D

মালায়ালাম সিনেমা ইতিহাসে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমা। লোকেশন আর ডিরেকশন- খুবই জোস এই সিনেমার। বেস্ট টাইট স্ক্রিপ্ট। "বেস্ট ফিল্ম- মালায়ালাম" এর ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে এটা। এটার তেলেগু ভার্শন ও আছে- দরকার নাই ভার্শন দেখার, দেখলে আসলটাই দেইখেন। বাট প্লিজ দেইখেন, অ্যাই রিকুয়েস্ট ইউ পিপল। ইটস অ্যা মাস্ট মাস্ট মাস্ট ওয়াচ! অ্যাইএমডিবি রেটিং 8.6। এই সিনেমা দেখা পড় থেকে তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম মানেই ধুমধাম একশন- এই ধারনা বর্জন করলাম, আপনারাও করবেন এটা দেখার পড়ে, সেই বিষয়ে আমি প্রায় নিশ্চিত। :) ডাউনলোড লিঙ্ক নিচে দিলাম ,ইংরেজি সাবটাইটেল সহ আছে- মালায়ালাম ভাষা কানে বেশ কষ্ট দেয়, লাইক-- "ইল্লায়", "ইল্লায় মারিউম কিল্লায়"- শুনতে শুনতে ধৈর্য রাখা বেশ কঠিন, একেকজনের নামও মাশাল্লাহ :P তবে একটু ধৈর্য ধরলে যেই অসাধারণ অভিজ্ঞতা আপনের হবে, সেটা সারাজীবন মনে থাকবে। হ্যাপি ওয়াচিং :)


Click This Link
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×