somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি নিখোঁজ সংবাদ

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাইকের শব্দে হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে উঠলাম, একটা রিকশায় লাগানো মাইক থেকে ভেসে আসছে "একটি নিখোঁজ সংবাদ"

আজ একটা শুভদিন,অনেক কষ্টে আজ একটা টিওশানি পেয়েছি। এমন একটা দিনে হারিয়ে যাবার কাব্য শুনতে মোটেও ভাল লাগছে না, তাই শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেলাম বাথরুমে, অন্য কিছু ভাবার অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছেনা, মাইকটা অনেক দূরে হলেও শব্দগুলো যেন খুব কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি, অসস্থি লাগছে, ঝিনঝিন করছে মাথাটা। মনে হচ্ছে কানের খুব কাছাকাছি এসে কেউ ফিসফিসিয়ে বলছে "একটি নিখোঁজ সংবাদ"

সেই ছোটবেলায় একবার মাঠে লাটিম ঘোরানো থেকে শুরু, চকচকে লাল একটা লাটিম কিনে দিয়েছিলেন বাবা, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খেলতে খেলতে হঠাৎ একটা ঝোপের দিকে ছুটে গেল লাটিমটা, পিছু ছুটলাম, বন্ধুদের ডাকলাম তারাও সাহায্যের জন্য এসে হাত দিয়ে সরাতে লাগল কাটাঘেরা ঝোপঝাড়, প্রায় ঘন্টাখানেক টলটলে চোখ আঁকড়ে ধরে খুঁজলাম অথচ লাটিমের টিকিটাও খুঁজে পেলাম না কোথাও, শেষরক্ষা হলোনা, কষ্ট আমার অবুঝ চোখ গড়িয়ে জল নামিয়ে দিল বুক পর্যন্ত। বেশ কদিন পর আমি ঠিক আমার সেই লাটিমটা দেখেছিলাম অন্য একটি ছেলের হাতে, সেদিন ঠোঁটের কোনের সে হাসিটা এখনো আমার ঠোঁটে। আমি লাটিমটা ফেরত চাইনি, শুধু ভেবেছি আমার কাছে না হোক অন্তত সে আছে, অন্তত কোন নিখোঁজ সংবাদ সে নয়।

প্রায় দশটা বাজে, এগারোটায় ছাত্রের বাসায় যেতে হবে, আধঘন্টার মত সময় হাতে আছে, বাসে যেতে পনের মিনিটের মত সময় লাগবে, আজ প্রথম দিন তাই ভাবছি রিকশাতে চড়েই যাই, অন্তত শার্টের ইনটা ঠিকমত থাকবে।

রিকশাতে চড়েই প্রথমে পকেটে হাত চলে গেল, হ্যা সব ঠিকঠাক আছে, রিকশা চলছে তার আপন গতিতে, হঠাৎ কে আবার ফিসফিসিয়ে বলে উঠল "একটি নিখোঁজ সংবাদ"

সেবার সবে মেট্রিক দিয়েছি, ছুটিতে নানুবাড়িতে গিয়ে সে কি হৈহুল্লোর, সবাই মিলে সেখানকার একটা জোড়া পুকুড়ের ঘাটে ভর দুপুরে পানিতে ঝাপাঝাপি করছিলাম, দেখছিলাম কে কার চেয়ে বেশি সময় পানিতে থাকতে পারে, পানির নিচের পরিবেশটা আমার খুবই ভাললাগে সবসময়ই, ভাবলাম দেখি কে কে উঠেছে, পানি থেকে মাথাটা বের করতেই চোখটা যা দেখল তা কখনোই ভুলতে পারিনি, একটা মেয়ে, নির্ঘাত পরী, টেলিফোনের তারের মত কোমড় পর্যন্ত ভেজা কালো চুলগুলো সেটে আছে দুধরঙা গায়ে, এতক্ষণ সে আমাদের আশেপাশেই ছিল হয়ত, খেয়াল করিনি, অথচ গোসল শেষ করে সে উঠে যাচ্ছিল, বন্ধুদের ডাকে হুস ফেরে, আমি আবার ডুব দেই, ৩০ সেকেন্ডের মত পানিতে ছিলাম তখন। পানি থেকে উঠে আমি আর তাকে কোথাও দেখতে পাইনি, দৌড়ে ঘাটের ওপরে উঠলাম, নাহ কোথাও নেই, এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল মেয়েটিকে সেও দেখেছে তবে তাদের মধ্যে কেউ তাকে চেনেনা। আমি ষ্পষ্ট মনে করতে পারি তার লাল ঠোঁটটার বা পাশের তিলটা অথচ জলজ্যান্ত মানুষটাকে আর কোথাও দেখিনি, কখনো জানতেও পারিনি কে সে! সে ছিল আমার জীবনে মনে রাখার মত আরো একটি নিখোঁজ সংবাদ। ন বছর কেটে গেছে অথচ এখনো তার মুখখানা আমার কাছে স্পষ্ট।
এইতো কিছুদিন আগে নানুবাড়িতে একটা জরুরি প্রয়োজনে গিয়েছিলাম, গাড়ি থেকে নামার সময় বামদিকে টিকেট কাউন্টারের পাশের সিগারেটের দোকানে তাকালাম অনিচ্ছায়, অন্যদিকে ফিরিয়েও নিয়েছিলাম চোখ, হঠাৎ মনে হল আমি কিছু একটা দেখেছি যা আমার খুব চেনা, হ্যা সেই মেয়েটি,সেই টেলিফোনের তার, কিছু না ভেবেই পা চালালাম, একটু সামনে যেতেই দেখলাম তার পেছন থেকে একটা ছোট বাচ্চা তার শাড়ির আচল জড়িয়ে রেখেছে, অবাক হইনি এতটা সময় পেরিয়ে গেছে, এতো স্বাভাবিক। অবাক হলাম যখন দেখলাম একটা ছেলে এসে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে মেয়েটার হাত ধরে সামনে আসছিল, ছেলেটি আমার সেই বন্ধু যাকে আমি মেয়েটার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম। আমাকে চিনে ওবন্ধুটি না চেনার ভান করে আমার সামনে দিয়ে চলে গেল, পরে জানতে পেরেছিলাম মেয়েটি ছেলেটির চাচাতো বোন। খুব হেসেছিলাম, কষ্ট লাগছিল না একফোঁটাও, আমি তাকে পেয়েছি, অন্তত কোন নিখোঁজ সংবাদ সে নয়।

রিকশাওয়ালার ডাকে ঘোর ভাঙলো, ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সামনে এগুলাম,পকেট থেকে ঠিকানাটা বের করে হাতে নিয়ে দেখলাম, ৭৮/এ, হ্যা ঠিকানাটা এ বাড়িরই। বেল টিপতেই দারোয়ান টাইপ একটা লোক গেটের ভেতর থেকে বলল কাকে চাই? আমি পরিচয় দিয়ে বললাম আমি এ বাড়ির বাচ্চার নতুন শিক্ষক, তার মুখটা ছোট হয়ে গেল নিমেষেই, সে বলল আপনি ছোট সাহেবের শিক্ষক! কিন্তু ছোটসাহেবকে তো গতকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না...

রাস্তার পাশ ঘেসে হাটছি.... কানে কানে কে যেন বলে চলেছে "একটি নিখোঁজ সংবাদ"
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:২২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×