গান্ধীজিকে জনৈক এক ব্যক্তি যখন প্রশ্ন করলেন- ''আপনি এমন এক বৃহৎ সাম্রাজ্য শক্তির সাথে মোকাবিলা করছেন যার রাজ্যে সূর্য্য অস্ত যায় না?'' এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি দৃঢ়তার সাথে কারবালার উদাহরণ উল্লেখ করে গর্বভরে বলেছিলেন- ''যে শক্তি আমি ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর কাছ থেকে পেয়েছি সে শক্তির সামনে বৃটিশ সাম্রাজ্যের কোন শক্তিই কাজে আসবে না।''
ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রধান নেতা গান্ধীজি বলেন : ''কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনা আমি যখন পড়ি তখন আমি বয়সে তরুণ ছিলাম। কারবালার এই বীরের জীবনী খুব গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌছেছি যে, হিন্দুস্থানের মুক্তির একমাত্র পথ ইমাম হোসাইনের আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভব।''
গান্ধীজি আরো বলেন : ''আমি মনে করি ইসলাম তরবারির জোরে নয়, বরং ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালামের চরম বা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ফলেই বিকশিত হয়েছে। ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালামের মহত আত্মত্যাগের ব্যাপক প্রশংসা করছি এ কারণে যে, তিনি শাহাদাত ও পিপাসার যাতনা সয়ে নিয়েছিলেন নিজের জন্য, নিজ সন্তানদের জন্য এবং নিজ পরিবারের জন্য। আর এই সবই সয়েছেন যাতে জালেম শাসকের কাছে নত হতে না হয়। মজলুম হওয়া অবস্থায় কিভাবে বিজয় অর্জন করতে হয় আমি তার শিক্ষা পেয়েছি ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালামের কাছে। ভারত যদি একটি বিজয়ী রাষ্ট্র হতে চায় তাহলে তাকে ইমাম হোসাইনের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। ইমাম হোসাইনের ৭২ জন বীর সেনানীর মত সেনা যদি আমার থাকতো তাহলে আমি ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ভারতের স্বাধীনতা এনে দিতে পারতাম।''
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন: ''ন্যায়বিচার ও সত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে অস্ত্র ছাড়াই বিজয় আসতে পারে, জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে ঠিক যেভাবে ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালাম মানবতার নেতা ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালাম শীতলতম হৃদয়কেও উষ্ণ করেন। ইমাম হোসাইনের আত্মত্যাগ আধ্যাত্মিক স্বাধীনতাকে তুলে ধরে।''
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন : ''একদিকে মা ফাতেমার বীর দুলাল হোসাইনী সেনা আর এক দিকে যত তখত বিলাসি লোভী ইয়াজিদের কেনা।''
বিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্স বলেন : ''যদি ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালাম পার্থিব কামনা বাসনার জন্য যুদ্ধ করতেন তাহলে তিনি তাঁর বোন, স্ত্রী ও শিশুদের সঙ্গে আনতেন না। তিনি শুধু ইসলামের জন্যই ত্যাগ স্বীকার করেছেন।''
ইংরেজ দার্শনিক ও ঐতিহাসিক টমাস কার্লাইল বলেন : ''আল্লাহর প্রতি ইমাম হোসাইন ও তাঁর সঙ্গীদের ঈমান ছিল মজবুত। তারা দেখিয়ে গেছেন যে, যেখানে সত্য ও মিথ্যা মুখোমুখি সেখানে সংখ্যার আধিক্য কোন বিচার্য বিষয় নয়। ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালাম মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে যে বিজয় অর্জন করেছেন তা আমাকে বিস্মিত করেছে।''
হিন্দের ওয়ালি খাজা মুইনউদ্দিন চিশ্তী (রহ.) বলেন : ''আধ্যাত্মিক জগতের সম্রাট হলেন ইমাম হোসাইন, বাদশা হলেন ইমাম হোসাইন। দীন হলেন ইমাম হোসাইন, দ্বীনের আশ্রয়দাতা হলেন ঈমাম হোসাইন। দিলেন মস্তক, না দিলেন হাত, ইয়াজিদের হাতে। হক্ব তো এটাই যে, লা-ইলাহার সমস্ত স্তম্ভ হলেন ইমাম হোসাইন।''
বিশ্ব বিখ্যাত আলেম আল্লামা শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দেসে দেহ্লভী (রহঃ ) তার গ্রন্থ সিররুস শাহাদাতাইন-এ লিখেছেন:
“জাহির তো ইয়ে কাতলে ইবনে বাতুল হে”
পার গওর কিজিয়ে তো ইয়ে কাতলে রাসুল হে”
অর্থাৎ কারবালার ময়দানে আশুরার দিন এজিদী মুনাফেকরা খাতুনে জান্নাতের সন্তান, ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালাম কে শহিদ করেনি, যদি অন্তরের মানবতার চোখ দিয়ে দেখলে সত্যিকার অর্থে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহী ওয়া সাল্লাম কে শহিদ করা হয়েছে।
[বাণীগুলোর সূত্রঃ ইন্টারনেট]
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৫১