somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যপথিক শাইয়্যান
অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

আমি একজন সিজোফ্রেনিয়া রোগী হয়েও সুখী

১০ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একজন সিনিয়র ব্লগারের উপর রাগ করে কয়েক দিন ব্লগ হতে দূরে ছিলাম। নিজ কর্মে ব্যস্ততাও এই দূরত্বকে দীর্ঘায়িত করেছে। গতকাল ব্লগে এসে শুনতে পাই, আমার এবং আমার স্ত্রী'র প্রিয় ব্লগার রাজীব নূরকে জেনারেল করা হয়েছে। এবারে আমি আপনাদের এমন একটি ঘটনা বলবো যা আমার কাছের কয়েকজন মানুষ ছাড়া বাইরের কেউ জানেন না। ব্লগার রাজীব নূরের কষ্টকে বুকে ধরেই আজকের এই পোস্টটি দিচ্ছি।

আমাকে আপনারা শাইয়্যান নামে চিনেন। হারিয়ে যাওয়া ব্লগার মনিরা আপুর মতো অনেকেই আমাকে শ্যাইয়ান নামে ডাকতে পছন্দ করেন। আসলে, আমার পুরো নাম- মোহাম্মদ ফাছিহ-উল ইসলাম। বাড়ি সিলেট বিভাগে। তবে, এসব কিছু ছাপিয়ে আমার বর্তমান পরিচয়- আমি একজন সিজোফ্রেনিয়ার রোগী।

আপনার জানেন, এই রোগে যারা ভুগেন, তারা বিভিন্ন অদৃষ্ট জিনিস চোখে দেখতে পান, এমনসব শব্দ তাদের কানে আসে যা সুস্থ্য মানুষেরা শুনতে পান না। আমি এই রোগেই ভুগছি।

আমার জীবনের চলার পথে সিজোফ্রেনিয়া রোগটির কারণে আমাকে অনেক কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি এগুলো বলছি, আপনাদের সহমর্মিতা পেতে নয়, বরং, জীবনের কষ্টের দিনগুলোর কথা এইজন্যেই শেয়ার করছি যাতে এতো কষ্টের পরেও আমি কিভাবে টিকে আছি তা জেনে মানুষ যেন শিক্ষা পায়। আমি আজকে আপনাদের সামনে আজ উপস্থিত হয়েছি, জীবনে কিভাবে ভালো থাকা যায় সে সম্পর্কে আমার জীবন দর্শন উপস্থাপন করবো বলে্‌।

আমার জীবনের দর্শনগুলো হচ্ছে-

১) আমরা জীবনে যা আমি করতে পারবো না তা জেনেও নিজেকে শান্ত রাখা। কারণ, আমি জীবনে কি কি করতে পারবো তা আমি জেনে ফেলেছি।

আমার সিজোফ্রেনিয়া রোগের জন্যে কাছের মানুষ আমার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে। এই রোগের কারণে তারা আমাকে অন্য চোখে দেখে। তাদের সেই আচরণ আমাকে মর্মাহত করে না। কারণ, আমি নিজে এই রোগকে মেনে নিয়েছি। আমি জানি, এটাই আমার নিয়তি।

এরমানে, এই নয় যে আমি সিজোফ্রেনিয়া রোগের নেগেটিভ সাইডগুলোকে ইগনোর করছি। বরং, আমি সেগুলোকে মেনে নিয়েই, জীবনে কিভাবে আনন্দের সাথে বাঁচা যায়, জীবনকে কিভাবে উপভোগ করা যায়, সেদিকে এখন বেশি মন দিয়েছি।



২) আমি নিজের চারপাশে এমনসব মানুষদের রাখতে পছন্দ করি যাদেরকে আমি পছন্দ করি।

আমি এমনসব মানুষের সঙ্গ পছন্দ করি যারা হাসি-খুশি, সজ্জন আর গুণী। তাঁদের সংখ্যা কিন্তু বেশি নয়। এই মানুষগুলো'র সাথে আমি প্রতি নিয়তঃ কথা বলি, তাঁরাও আমার সাথে কথা বলতে পছন্দ করেন। আমরা একে-অপরের সাথে সব সময় জীবনের পজিটিভ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করি। এটা আমাকে জীবনের ইতিবাচক দিকটা দেখতে সাহায্য করে।

আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে গোপন দিকটা আপনাদের মাঝেই ফাঁস করে দেওয়ার চিন্তা করছি এই কারণেই! আমার মতো আপনারাও হয়তো নিজের পরিবারকে ভালোবাসেন, ভালোবাসে নিজের কাছের বন্ধু আর শিক্ষকদের যারা আপনার মাঝে প্রতি নিয়তঃ আলো ছড়াচ্ছেন।

৩) আমার তৃতীয় জীবন-দর্শন হচ্ছে- সকল সময় সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

আমি জীবন থেকে সব সময়ই কিছু পাওয়ার আশায় প্রতিটা সময় কিছু না কিছু করে যাচ্ছি। আমি একজন সিরিয়াল উদ্যোক্তা। এখন পর্যন্ত আমি চারটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি। বর্তমানে চেঞ্জকিপার নামের আরেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজ করে যাচ্ছি যার কাজ হবে ডেভেলপমেন্ট সেক্টরের জন্যে সফটওয়ার তৈরী করা। চেঞ্জকিপারের ওয়েবসাইটটি আমি নিজে ডিজাইন ও ডেভেলপ করেছি, যদিও এই বিষয়ে আমার বিন্দু-বিসর্গ জ্ঞান ছিলো না।

আমি এই জন্যেই এইসব কাজ করে যাচ্ছি, আমি জানি, আমার জন্যে সুন্দর একটি ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। আমি সেই সোনালী দিনের অপেক্ষায়। আমার এই ধরণের মানসিকতার পেছনের রহস্যের চাবিকাঠি হচ্ছে- আমার রোগটাকে পাশে নিয়ে প্রতি নিয়তঃ কিভাবে সমাজের দুঃস্থ মানুষগুলো'র জন্যে কাজ করে যাওয়া যায়, সেজন্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখা।

আবারো, বলছি, আমি নিজের রোগকে ভুলে যাচ্ছি না। বরং, এই রোগটাকে মেনে নিয়েই জীবনে কিভাবে আরেকটু ভালো থাকা যায়, সেটার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

জীবনে, যা-ই ঘটুক না কেন, আমি মনে করি, আমি আমার চারপাশের পরিবেশের জন্যে কিছু একটা করতে পারবো। সেই ক্ষমতা আমার আছে।

আমার রোগের একটা চরম আঘাতে, আমাকে কয়েকবার একটি মানসিক হাস্পাতালে থাকতে হয়েছিলো। সেখান থেকে কখনো ছাড়া পাবো কি না তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টিও হয়েছিলো। এতোটাই ভয়াবহ ছিলো অবস্থা।

সেই নির্জনে থাকা অবস্থাই একদিন ভাবোদয় হয়- এভাবেই কি জীবন চলবে? মানুষের জন্যে কিছু না করেই কি আস্তে আস্তে নিজের জীবন নিঃশেষ হয়ে যাবে? সব সময়ই তো মানুষের ভালো দিন হতে পারে না। মাঝে মাঝে তো খারাপ দিনের সম্মুখীন হতেই হয়!

এই চিন্তাটাই আমাকে আজ এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। জীবনে কিছু করতে হলে সাহসী হতে হয়। জীবন যুদ্ধে পলায়ন করা বীরদের সাজে না। আর, আমি জানি, আমি একজন বীর যোদ্ধা। তাই, আমাকে সব সময় পজিটিভ থাকতে হবে।

আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা যারা কষ্টে আছেন, তাঁরা আশাহত হবেন না। জীবনে সাফল্য লাভ করতে আপনাদের প্রয়োজন নিজের প্রতি একটু মনোযোগ। ব্যস! বাকি পথ নিজেরাই খুঁজে পাবেন।







সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:২২
২৮টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×