'স্যার, আমি পাগল। আমার একটা ইন্টারভু নিবাইন?' লোকটির দিকে তাকালাম। উস্কো-খুস্কো চুল, গায়ে সাদা গেঞ্জি। লুঙ্গি পড়া লোকটার সরল হাঁসি চোখে পড়ার মতো। পাগলকে যে পাগল বলে, সে নিজেই একজন পাগল। আমি তাই সাবধানে বললাম- 'আপনি পাগল এটা কে বললো?' আমার কথায় তাঁর সেই সুন্দর হাসিটি দিয়ে মানুষটা বললেন- 'মানুষ আমারে এই নামেই ডাকে। মাজারে থাকি। এইহানেই গত পঞ্চাশ বছর ধইরা আছি। পাগল না তো কি!' তাঁকে বললাম- 'চলেন কথা বলি।'
হযরত শাহজালাল (রহ)-এর অন্যতম সহযোগী সৈয়দ শাহ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার (রহ)-এর জীবনী'র উপর একটি ডকুমেন্টারী বানাতে গিয়ে হবিগঞ্জ জেলার মুড়ারবন্দ এলাকায় গিয়েছিলাম। এই সময়ে মাজারে থাকা পাগলদের সাথে কথা হয়। তাঁদের জীবন কিভাবে চলে, কোথা থেকেই বা তাঁরা এসেছেন, মাজারে কেন থাকেন, এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তাঁদের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় ছিলো না। কিন্তু, এই তথাকথিত পাগলেরা যখন নিজে থেকেই আমাদের ক্যামেরায় ধরা দিলেন, তখন আমাদের সৌভাগ্যবানই বলতে হয়। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির দেখা মেলা!
মাজারে থাকা এই মানুষগুলোর সাথে আমরা কথা বলেছি, জানার চেষ্টা করেছি তাঁদের জীবনাচারণ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এই লোকগুলোর জীবন অবহেলিত ভাবেই চলে। দর্শণার্থীদের দেওয়া টাকাতেই তাঁদের জীবন চলে। কিসের কারণে তাঁরা এই মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়ান, এমন প্রশ্নে আমাদের জানান- আল্লাহর ওলীদের টানেই তাঁদের এই থেকে যাওয়া।
এই তথাকথিত পাগলদের সাথে সাথে আমরা মাজারে অবস্থিত দর্শণীয় জিনিসগুলো আমাদের ক্যামেরা-বন্দী করেছি। আর, বাড়তি পাওনা হিসেবে ছিলো মাজার কর্তৃপক্ষের আতিথেয়তা। দারুণ কেটেছে সেই পাঁচ দিন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩৯