
তখন তরুণ বয়স। টগবগে ফোটা শরীরের রক্ত। যে কোন কিছুতে উত্তেজিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া স্বভাব। 'দ্বীন কায়েম'-এর জন্যে একদা কিছু বড় ভাই আমার দ্বারস্থ হলেন। দলে নিতে চান। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক জগতের দক্ষ সংগঠক। তারপরও, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিস হোয় নাই। আমি বড় ভাইদের না করতে পারলাম না। সাংস্কৃতিক অঙ্গন ছেড়ে ঢুকে পড়লাম রাজনৈতিক দলে।
সেই সময়ে কাউকেই ছাড় দিতাম না। সব্বাইকেই ইসলামের ছায়া তলে আনার চেষ্টায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলাম। নিজের বাবাকেও একবার ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বসলাম। সব কিছু তুমুল গতিতে চলচ্ছে, কিন্তু, বিধি আড়ালে কল কাঠি নেড়ে অন্য প্ল্যান শুরু করেছে, তা বুঝার বয়স আমার তখনো হোয় নাই যে! কয়েক দিনের মাঝেই শ্রীঘরে যেতে হলো।
যাওয়ার পর্বটি ছিলো বড়ই মজার! আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছায়ায় সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে র্যালি করছি, আমাদের সামনে একটি পুলিশদের গাড়ি থেকে একজন ইন্সপেক্টর নেমে বললেন- 'আপনাকে ওসি সাহেব চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন।'
আমি খুব অবাক হলাম যে ওসি আমাকে চিনেন। মনে মনে বেশ খুশি হলাম। ওসি সাহাবের চায়ের দাওয়াত স্বাদরে গ্রহণ করলাম। কিন্তু, সেই চায়ের দাওয়াত নিতে গিয়ে যে শ্রীঘর তক পৌঁছে যাবো বুঝিনি।
আজ বাসার পাশে একটি পুলিশের গাড়ি দেখতে পেলাম। মাত্রই ইফতার করে উঠেছি। জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম, কয়েক জন পুলিশ ক্ষুধার্থ মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। সাথে একজন রিকশাওয়ালা। তাদের একজন রিকশাওয়ালাকে হাতের মুড়ি ভর্তি প্লাস্টিক দিয়ে দিলেন। আমি ঘরে ফিরে বিবিজানকে বললাম- ইফতারের বাটি সাজাতে।
হরেক রকম খাওয়া দিয়ে সাজানো প্লেটটি বাসার কেয়ারটেকার পুলিশের কাছে দিয়ে আসলো। মনে পড়ে গেলো, ওসি সাহেবের সেই চায়ের দাওয়াতের কথা! আড়াল থেকে একটা মুচকি হাসি কি চলে এলো আমার মুখে!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৯:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




