
আমার জীবনটা বড় দুঃখের ছিলো এক সময়ে। মানুষ আমাকে বিশ্বাস করতো না। চরমপন্থী একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ায় পরিবারের অনেকে ঘৃণা করতো। আমি প্রায় ৬-৭ বছর বেকার ছিলাম। এক সময়ে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার কারণে অবস্থা একদম টাইট হয়ে গেলো! এক রাতে এমন হলো যে, আমাকে শুধুই আলু খেয়ে থাকতে হয়েছিলো।
দুঃসহ জীবন সইতে না পেরে আমার আম্মার ফুফুতো ভাই, যিনি তখন আই,বি,এ-এর ডিরেক্টর ছিলেন, তাঁকে বললাম একটা চাকরীতে রেফার করে দিতে। তিনি তৎকালীন সিটিসেলে আমাকে ইন্টার্ভিউ ফেইস করার সুযোগ করে দিয়ে বললেন- "নিজেকে প্রমাণ কর।" আমার তিনটা ইন্টার্ভিউ হলো। একটার পর একটা ইন্টার্ভিউ পার হয়ে গেলাম। শেষ ইন্টার্ভিউতে খুব ভালো হলো। তারপরও বাদ পড়ে গেলাম। মামা জানালেন যে, ওরা আমার নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দলে থাকার কথা জেনে গিয়েছিলো। তাই, ভয় পেয়ে বাদ দিয়ে দিয়েছে। এভাবে একটার পর একটা চাকরীতে তিনি রেফার করে দেন, আর, ২/৩টা ইন্টার্ভিউ ফেইস করার পরে আমি ফেইল।
তখন ২০১০ সাল, আমি বুঝলাম আমার দেশ ছাড়ার সময় হয়েছে। ছোট খালুর কাছ থেকে টাকা ধার করে যুক্তরাজ্যে চলে গেলাম মাস্টার্স করতে। মাস্টার্স শেষ করে সেখানে চাকরী করতে করতে বিয়ে করলাম। কিন্তু, দূর্ভাগ্য পিছু ছাড়লো না। যেদিন আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে চলে গেলো, চূড়ান্ত ভাবে মানসিক দিক দিয়ে ভেঙ্গে পড়লাম। ২০১৪ সালে দেশে ফিরে আসার কয়েক দিনের মাঝেই আমার পরিবার আমার অবস্থা বুঝে ফেলে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দিলো। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৩ বার আমাকে সেই হাসপাতালে যেতে হয়ে।
এর মাঝে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি চাঁদপুরের এক পীর সাহেবের ঢাকার মাহফিলে যোগদান করি। আমি তখন বুঝতে পারি নাই ঐ মাহফিল আমার জীবনে কতটা প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে! মাহফিল শেষে সবাই যখন একে একে হাত তুলে পীর সাহেবের ফান্ডে টাকা-পয়সা দানের ওয়াদা করছেন, আমি ঝোঁকের বশে প্রায় ৫ লক্ষ টা দানের নিয়্যত করে ফেলি।
নিয়্যত তো করে ফেললাম! এখন টাকা দিবো কিভাবে! আমি আমার জীবনে খুব কমই ওয়াদা ভেঙ্গেছি। পকেটে তখন মাত্র কয়েকশো টাকা ছিলো। শুধু বাসের ভাড়া রেখে বাকিটা দিয়ে দিলাম।

এরপর থেকে মাথায় ঘুরছিলো, কিভাবে সেই ওয়াদাকৃত টাকা আয় করা যায়। এর ২ মাসের মাঝে আমার একটা বিয়ের প্রস্তাব আসে। শেষ পর্যন্ত বিয়েটা করেই ফেলি পহেলা ২০১৯ সালের পহেলা বৈশাখের দিনে। আমার ভাইদের টাকায় বিয়েটা হয়। তারও কয়েক মাস পরে, আমার জীবনে প্রথম ব্যবসার কন্ট্রাক্ট পেলাম। কন্ট্রাক্টটি ছিলো যুক্তরাজ্যের একটি আই,টি কোম্পানি থেকে।
সেই কোম্পানির সূত্র থেকেই আমি গত কয়েক বছরে অনেক টাকা আয় করেছি। সেই টাকা দিয়েই আজ আমি দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। নিজের পরিবারের জন্যে অণ্য জুটানোর পাশে পাশে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলাতে কষ্ট হয় না।
আজ আমি একজন সুখী মানুষ। আমার বাড়ী-গাড়ি-পরিবার সবি আছে! বিশ্বাস করুন, এই ভাগ্য পরিবর্তনে আমার নিজের কোন হাত নেই। কিভাবে যেন কোন এক আলাদীনের জাদুর চেরাগের স্পর্শে আমার ভাগ্যে এই পরিবর্তন ঘটেছে!
সবাইকে ঈদ/ইদ মোবারক।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২৩ ভোর ৫:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




