রোজকার মত সখীদের নিয়ে ফুল কুড়াতে বেড়িয়েছিলেন ইঊরোপা। সেদিন আর রক্ষে হলো না। সাদা ষাঁড় বেশি দেবতা জিউস তাকে তুলে নিলেন নিজ কাঁধে। পালিয়ে গেলেন ক্রিট নামক এক দ্বীপে। পথিমধ্যে অথবা সেই দ্বীপে করা হলো ইউরোপার সম্ভ্রমহানি।
শুধু পৃথিবী'র সুন্দরী নারীরা গ্রীক দেবতাদের দ্বারা নির্যাতিত হোননি, সুন্দর নরেরাও রক্ষা পাননি। কিশোর গেনিমিডের কথাই ধরুন না। গ্রীক রুপকথায় কথিত আছে, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর ছিলো এই ছেলেটি। এই গেনিমিডকেই বাজ পাখী বেশে ছোঁ মেরে নিজ রাজ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন দেবতা জিউস, করেছিলেন অবাধ যৌনাচার, অন্য অর্থে ধর্ষণ!
রোমান মিথোলোজিতেও ধর্ষণের ঘটনা খুজে পাওয়া যায়। রোমের প্রতিষ্ঠাতা রমিউলাস ও তার সঙ্গীদের যখন ঘর-সংসার করার ইচ্ছে জেগেছিলো, তখন তারা পাশের গোত্র সেবাইনদের কাছে প্রস্তাব পাঠালো তাদের মেয়েদের বিয়ে করার। সেবাইনরা এতে রাজি না হওয়ায় রমিউলাস এক অভিনব বুদ্ধি বের করলো। একদিন ঘটা করে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেবাইনদের মেয়ে-ছেলে সবাইকে দাওয়াত করে তারা। সেবাইনরা তাতে যোগদান করলে, ধূর্ত রমিউলাসের ইঙ্গিতে মওকা বুঝে তার সঙ্গীরা অতিথী মেয়েদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। খুন করে ছেলেদের।
প্রাচীন এই ঘটনাগুলোকে অনুসরণ করেই কি না কে জানে শুধু বাংলাদেশে নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ধর্ষণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই ছয় বছরে ভারতে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ৪০০ শতাংশ বেড়েছে বলে খবরে প্রকাশ পেয়েছে। পশ্চিমা কোন কোন দেশের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ২০১৪ সালে European Union Agency for Fundamental Rights-এর একটি জরিপে দেখা গেছে, ফিনল্যান্ড ৪৭% নারী জীবনের কোন না কোন সময় শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। ডেনমার্কের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। সে দেশের নারীদের ৫২ ভাগই এরকম অত্যাচারের সম্মুখীন হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। দ্যা হাফিংটন পোস্টের একটি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, কানাডাতে প্রতি বছর ৪,৬০,০০০ নারী যৌন নির্যাতনের স্বীকার হোন।
অস্ট্রেলিয়ার অবস্থাও ভায়াবহ। যেখানে পুরো বিশ্বে প্রতি ১৪ জনের মাঝে একজন নারী ধর্ষণের স্বীকার হয়ে থাকেন, সেখানে অস্ট্রেলিয়াতে ২০১৪ সালে প্রতি ৬ জন মহিলার মাঝে ১ জন এমন নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের নারীরাও ভালো অবস্থায় নেই। সেখানেও এরকম ভয়াবহ অপরাধ ঘটে সারা বিশ্বের গড়ের চেয়ে বেশি।
আফ্রিকা মহাদেশও এমন অনাচারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এই মহাদেশে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তার মাঝে সবার চেয়ে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১ লক্ষের মাঝে ১৩২.৪ জনই এরকম নির্যাতনের স্বীকার হোন সেই দেশে।
সারা বিশ্বেই যখন এরকম ভয়াবহ অবস্থা, তখন জেনে নেওয়া যাক, কোন দেশে কি ধরণের শাস্তির সম্মুখীন হচ্ছে ধর্ষকরা।
ভারতঃ ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে ভারতে ধর্ষণবিরোধী একটি বিল পাশ হয় যাতে অপরাধীকে তিন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়। সেগুলো হচ্ছে- ১৪ বছরের জেল, যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড।
ফ্রান্সঃ পশ্চিমা এদেশে যৌন নির্যাতনের শাস্তি ১৫-৩০ বছর পর্যন্ত।
চীনঃ এদেশে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও খোজা করে দেওয়া।
সৌদি আরবঃ একদিনের মাঝে কতল করা হয় এমন অপরাধীদের।
উত্তর কোরিয়াঃ ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে।
আফঘানিস্তানঃ অভিযোগের ৪ দিনের মাঝে হয় মাথায় গুলি করে অথবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
আমেরিকাঃ এই দেশে ধর্ষকদের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে কারদন্ডে দন্ডিত করা হয়।
রাশিয়াঃ ক্যাথলিক খ্রিস্টান অধ্যুষিত এদেশে ধর্ষকদের শাস্তি অপরাধের মাত্রা বুঝে ৩ - ২০ বছর পর্যন্ত।
কিছু আশার আলোঃ
পৃথিবীর আর সকল দেশ থেকে যে ভূমিটি একদমই আলাদা সেটি হচ্ছে Liechtenstein। ২০২০ সাল পর্যন্ত সাড়ে ৩৭ হাজার জনসংখ্যা বিশিষ্ট এদেশে একটিও ধর্ষণ হয়নি!
ছবি: Liechtenstein-এর রাজপুত্র
আর, মিশরে প্রতি ১০ লক্ষে ১-জন ধর্ষনের স্বীকার হোন। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়াতে প্রতি লক্ষে ধর্ষণের স্বীকার হোন মাত্র ০.২ এবং ০.৪ জন!
কি এমন আইন আছে শেষোক্ত এ চার দেশে! নাকি, বলবো এদেশগুলোর মানুষগুলো অন্য ধাতুতে গড়া! সে যে ধাতুতেই গড়া হোন না কেন, এইসব দেশের নারীরা বাংলাদেশের চেয়ে ভালো আছেন তা আর বলতে হয় না।
একটি প্রতিবাদঃ
দেশে দেশে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশেরই কিছু নাগরিক একত্রিত হয়ে ধর্ষণের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে এই পিটিশনে সাইন করেছেন- Death Sentence as a punishment to a rapist in Bangladesh
এই পিটিশনে স্বাক্ষরকারীদের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
তথ্যসূত্রঃ
১) হাফিংটন পোস্টঃ Click This Link
২) নিউজ ডট কমঃ Click This Link
৩) ওয়ান্ডার লিস্টঃ Click This Link
৪) ন্যাশন মাস্টারঃ Click This Link
৫) রেডিওঞ্জঃ Click This Link
৬) স্কুপ হুপঃ Click This Link
৭) হাইপ ফিডঃ Click This Link
৮) ছবিসূত্রঃ হাফিংটন পোস্ট, উইকিপিডিয়া, ওয়ান্ডারলিস্ট ডট কম, এসরা মিডিয়া, থাই নিউজ ২৪ এইচ ডট কম, ডেথ পেনাল্টি নিউজ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২৪ রাত ৩:০৩