somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. ইউনূসের মতো বোকা হওয়া শিখতে হবে!

১৯ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ সারা জীবন উল্টো কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন। কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো ধনী ব্যক্তিদের ঋণ দেয়, অথচ তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক দরীদ্রদের মাঝে ঋণ বিতরণ করে। বাংলাদেশের কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোতে ৯০%-এর উপর ঋণগ্রহীতা পুরুষ। আর, ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতিষ্ঠান মহিলাদের মাঝে ঋণ দেয়। তাঁর প্রতিষ্ঠানের ৯৭% ঋণগ্রহীতা মহিলা। কনভেনশনাল ব্যাংকের মালিকানা ধনী মানুষদের হাতে থাকে, অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা দরীদ্র মানুষদের! কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো কোন কিছু বন্ধক ছাড়া টাকা ধার দেয় না, কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকে এসব লাগেই না। দরীদ্র মানুষ তো কোন কিছু বন্ধক দিতে পারবে না! তাই, গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ দেওয়ার সময়ে কোন কিছু বন্ধক নেয় না।

ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, এভাবে উল্টো করে চললে তাঁর ব্যাংক চলবে কি করে! তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে - "আমি তা জানি না! আগে অন্তত চেষ্টাটা করি!" তিনি চেষ্টা করেছিলেন, এবং সফল হয়েছিলেন। এখানে একটা মজার বিষয় হচ্ছে - সম্ভবত গ্রামীণ ব্যাংক পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক যেখানে কোন আইনজীবী নেই!

এভাবে সাফল্য লাভ করেও ইউনুস সাহেব নিজেকে বোকা মনে করেন! তিনি মনে করেন যে, কোন কিছু সম্পর্কে জানা না থাকলে, সেটা নিয়ে ভয় পাওয়া চলবে না! কোন কিছু করতে গেলে খুব বেশি স্মার্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই! তাঁর মতো বোকারাই তো পৃথিবীতে এভাবে কাজ করে করে সফল হয়েছে।

কোন কিছু করতে গেলে ভয় পাওয়া চলবে না! কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো মানুষকে ঋণ দিতে ভয় পায়। তারা বলে যে, দরীদ্র মানুষেরা ঋণ পাওয়ার যোগ্য নয়! এটা কি তাদের বলা উচিৎ? নাকি ব্যাংকগুলো চয়েস করার সময়ে জনগণের বলা উচিৎ - এই ব্যাংক জনবান্ধব, অমুক ব্যাংক জনবান্ধব নয়। একটু খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে, ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংক তার ঋণগ্রহিতাদের সেইরকম বলার সুযোগ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, তিনি স্রোতের উল্টো পথে হেঁটেছেন!

আচ্ছা, সারা পৃথিবীতে এতো যে দরীদ্র মানুষ, তাঁদের দারিদ্রতার পিছনে কারণ কি তা কখনো ভেবে দেখেছেন? এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, দরীদ্র মানুষ বনসাই গাছের মতো! বনসাই গাছ কি চিনেন? ঐ যে বড় গাছগুলোর মিনিয়েচার সংস্করণ! আপনি একটি বটগাছকেও ছোট করে বাড়ির বারান্দার টবে রেখে দিতে পারবেন। এটাই বনসাই। দরীদ্র মানুষেরা বনসাইয়ের মতো! তাঁদের বীজে কোন সমস্যা নাই। আসলে, দরীদ্র মানুষদের চারপাশের পরিবেশ তাঁদেরকে দারীদ্রতা থেকে মুক্তি দেয় না। দারিদ্রতা থেকে মুক্তি দিতে হলে আমাদেরকে তাঁদের নিয়ে গতানুগতিক চিন্তা-ভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

এরকম একটি গতানুগতিক চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে - ব্যবসা মানেই যত বেশি মুনফা করা যায় ততোই ভালো! ব্যবসা মানেই টাকার খেলা। ব্যবসায়ীরা তাই টাকার পিছনে ছুটেন। কিন্তু, আমরা যদি উল্টোটা করি, কি হবে? এমন একটি ব্যবসা কি তৈরী করা যায় যা মুনাফার পিছনে ছুটবে না, তাহলে কি হবে? এভাবে, যদি, বাংলাদেশের প্রতিটা সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্যে একটা করে ব্যবসা তৈরী করা যায়, তাহলে কি হবে?

এই সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে তৈরী হওয়া ব্যবসাকেই স্যোশাল বিজনেস বা সামাজিক ব্যবসা বলা হয়ে থাকে। এভাবেই সম্ভব আমাদের মতো দেশগুলোর সমস্যাগুলোকে সমাধান করা। আমরা তাই বলে কনভেনশনাল বা গতানুগতিক ব্যবসাগুলোকে ছোট করছি না। সেগুলো চলতেই পারে। কিন্তু, সেগুলোর পাশাপাশি এমন কিছু ব্যবসা দরকার যেগুলো আমাদের চারপাশের সমস্যা সমাধান করার জন্যে তৈরী হবে।

জার্মান জুতার কোম্পানী 'এডিডাস'-এর কথা অনেকেই শুনে থাকবেন। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে সেই কোম্পানীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একবার এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন - "আমরা কিভাবে স্যোশাল বিজনেস বা সামাজিক ব্যবসার সাথে যুক্ত হতে পারি?" তখন ইউনুস বলেছিলেন - "তোমাদের এমন একটা মিশন থাকা উচিৎ যে, পৃথিবীর কোন মানুষই জুতা ছাড়া থাকবে না। তোমরা দরীদ্র মানুষদের জন্যে জুতা বানাও।" তখন এডিডাসের সি,ই,ও অবাক হয়ে বলেছিলেন - "এটা তো অনেক বড় মিশন!" তখন ডঃ মুহাম্মদ ডঃ ইউনুস উত্তর দিয়েছিলেন - "এডিডাসও তো অনেক বড় প্রতিষ্ঠান! তুমি কি চাও আমি তোমাকে ছোট লক্ষ্যের কথা বলি!" এডিডাসের হায়ার ম্যানেজমেন্ট প্রায় এক ঘণ্টা পরে ইউনুস সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন - "একজন দরিদ্র্য মানুষের জন্যে আমরা কত সস্তায় জুতা বানাবো? এর দাম কত রাখা যেতে পারে?" ডঃ ইউনুসের এবারের উত্তর - "আমি তা জানি না! মনে হয় ১ ইউরোর নিচে!" এডিডাস কর্তৃপক্ষ তাঁকে উত্তর দিয়েছিলো - "আপনি খুব প্যাঁচালো মানুষ!" ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস উত্তর দিয়েছিলেন - "এজন্যেই তোমরা এডিডাস! যেহেতু, সমস্যা অনেক বড়, তোমাদের পক্ষেই এমনটা বানানো সম্ভব বলেই আমি তা বলেছি!"

এডিডাস কোম্পানি দুই বছর লাগিয়েছিলো ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের আইডিয়া অনুযায়ী জুতা বানাতে! তারা শেষ পর্যন্ত ১ ইউরোর চেয়ে কম মূল্যের জুতা বানাতে সক্ষম হয়!

এরকম কাজ আমি - আপনিও করতে পারি! আমাদের মাঝে অনেক ধরণের আইডিয়াই আসে। কিন্তু আমরা সেগুলো কাজে লাগাই না। কেন! একটু সাহসের অভাবে, অথবা, আমরা নিজেদেরকে যোগ্য মনে করি না, সেজন্যে সেই আইডিয়াকে হাতে তুলে নিতে ভয় পাই, মানুষকে আইডিয়া দিয়ে ভয় পাই, তাই না? অথচ, যদি উল্টোটা করতাম!

এমন যদি হতো, সচিবদের কাছে আমরা ছুটে না গিয়ে, সচিবরাই আমাদের কাছে এসে সমস্যার খোঁজ করতেন? পুলিশের কাছে জিডি করতে না গিয়ে পুলিশই আমাদের কাছে জিডি লিখতে ছুটে আসতো? অপরাধীকে খুঁজতে পুলিশ না গিয়ে অপরাধীই নিজেকে ধরিয়ে দিতে পুলিশের খোঁজ করতো? বুয়াদেরকে রাত-দিন না খাটিয়ে আমরাই বুয়াদের কাজে সাহায্য করতে লেগে যেতাম? কেন আমাদের বেতন পাইতে মাসের শেষ অবধি অপেক্ষা করতে হবে? মাসের প্রথম সপ্তাহেই তা দিয়ে দিতে অসুবিধা কোথায়!

আমাদেরকে চিন্তার দোয়ারটা খুলে দিতে হবে। তাহলেই আমরা একেকজন সমস্যার সমাধান করতে পারবো! সবাইকেই স্মাজিক ব্যবসা করতে হবে, তা নয়। বরং, আমাদের নিজেদেরকে একেকজন সমস্যা সমাধানকারী হিসেবে তৈরী হয়ে যেতে হবে। তাহলেই সম্ভব দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনা!

----------------
১ম প্রকাশঃ দৈনিক কালবেলা
লেখার আইডিয়াঃ ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের বিভিন্ন বক্তৃতা
লেখকঃ মোহাম্মদ ফাছিহ-উল ইসলাম শাইয়্যান
-------------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৫৭
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×