somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি ইসলাম বা বিজ্ঞানের ছাত্র নই, কিন্তু, আমি হিউলেট প্যাকার্ডের প্রধান নির্বাহীর ভাষণটি পড়েছি

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৫:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২৬ সেপ্টেম্বর, ২০০১ সাল। টুইন টাওয়ার হামলার মাত্র ২ সপ্তাহ পরে, হিউলেট প্যাকার্ডের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কার্লি ফিওরিনা যখন এই ভাষণটি দেন, তখন পশ্চিমা ও ইসলামী সভ্যতার মাঝে দারুণ রকমের টানা-পোড়েন চলছে। ঠিক সেই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার মিনিয়াপোলিসে এই সাহসী বক্তব্য দেন এই নারী। আমি আপনাদের জন্যে পুরো বক্তব্যটি সূত্রসহ তুলে ধরছি বাংলায় -
=====================================================

একসময় পৃথিবীতে এমন একটি সভ্যতা বিস্তার লাভ করেছিলো যারা ছিল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ।

এটি একটি মহাদেশীয় সুপার-স্টেট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল যা মহাসাগর থেকে মহাসাগর, আর উত্তরের জলবায়ু থেকে গ্রীষ্মমন্ডল ও মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর শাসনাধীনে বিভিন্ন ধর্ম এবং জাতিগত উতসের কয়েক মিলিয়ন মানুষ বাস করতো।

এই সভ্যতার অনেকগুলো ভাষার মধ্যে একটি ভাষা বিশ্বের অনেক ভূমির সার্বজনীন ভাষা হয়ে উঠেছিলো, সেই সাথে কোটি মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছিলো। এর সেনাবাহিনী অনেক জাতির লোকদের নিয়ে গঠিত ছিল এবং এর সামরিক সুরক্ষা এমন এক মাত্রার শান্তি ও সমৃদ্ধির সাক্ষাত দিয়েছিল যা আগে কখনোই শোনা যায় নাই। এই সভ্যতার বাণিজ্যের পরিধি ল্যাটিন আমেরিকা থেকে চীন এবং এর আশে-পাশের সকল ভূমিতে বিস্তৃতি লাভ করেছিল।

'নতুন কিছু আবিষ্কার করা'-এর নেশা এই সভ্যতার মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছিলো। এর স্থপতিরা এমন বিল্ডিং ডিজাইন করেছিলেন যা মাধ্যাকর্ষণকে অস্বীকার করতো। এর গণিতবিদরা এমন বীজগণিত এবং অ্যালগরিদম তৈরি করেছিলেন যা আজকের যুগের কম্পিউটার তৈরি করতে এবং সুরক্ষিত কোড বানাতে সাহায্য করেছে। এর ডাক্তাররা মানবদেহ পরীক্ষা করে রোগের নতুন নিরাময় খুঁজে পেয়েছিলেন। এর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যখন আকাশের দিকে তাকালেন, তখন তাঁরা তারাগুলোর নাম দিয়েছিলেন, যারফলে আজকালকার মহাকাশ ভ্রমণ আর অনুসন্ধানের পথ তৈরি হয়েছিলো।

এর লেখকরা হাজার হাজার গল্প তৈরি করেছেন। সাহস, রোম্যান্স এবং জাদু'র গল্প। এই সভ্যতার কবিরা প্রেমের কথা লিখেছিলেন, যখন তাঁদেরর পূর্বের অন্য কবিরা এই জাতীয় জিনিসগুলি ভাবতেও ভয় পেতেন।

যখন অন্যান্য জাতি আইডিয়াকে ভয় পেতো, তখন এই সভ্যতা এক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি উন্নতি লাভ করেছিল এবং সেই জাতিদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। অবিবেচকরা যখন অতীতের সভ্যতা থেকে জ্ঞান মুছে ফেলার হুমকি দিয়েছিলো, তখন এই সভ্যতা জ্ঞানকে বাঁচিয়ে রাখে এবং অন্যদের কাছে তা পৌঁছে দেয়।

যদিও আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা এই বৈশিষ্ট্যগুলির অনেকগুলিই নিজেরা রপ্ত করে নিয়েছে, কিন্তু, আমি যে সভ্যতার কথা বলছি তা হচ্ছে ৮০০ থেকে ১৬০০ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ইসলামী বিশ্ব, যে সময়ের মাঝে অটোমান সাম্রাজ্য ছিলো এবং সেই সাথে ছিলো বাগদাদ, দামেস্ক ও কায়রোর আদালত আর সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্টের মতো আলোকিত শাসকগণ। .

যদিও আমরা প্রায়শই অন্য এই সভ্যতার প্রতি আমাদের ঋণ সম্পর্কে অবগত নই, তবে সেই সভ্যতার উপহারগুলি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। আরব গণিতবিদদের অবদান ছাড়া আজকের প্রযুক্তি শিল্পের অস্তিত্ব থাকতো না। রুমির মতো সুফি কবি-দার্শনিক আমাদের আত্ম ও সত্যের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। সুলেমানের মতো নেতারা আমাদের সহনশীলতা এবং নাগরিক নেতৃত্বের ধারণায় অবদান রেখেছেন।

আর, সম্ভবত আমরা তাঁর উদাহরণ থেকে একটি পাঠ শিখতে পারি: এটি হচ্ছে- 'যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব', উত্তরাধিকার হিসেবে নয়। এটি এমন এক নেতৃত্ব ছিলো যা অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এক জনসংখ্যার সম্পূর্ণ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েছিলো -- যার মধ্যে খ্রিস্টান, ইসলামি এবং ইহুদি ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

এই ধরনের আলোকিত নেতৃত্ব -- যে নেতৃত্ব সংস্কৃতি, স্থায়িত্ব, বৈচিত্র্য এবং সাহসকে লালন করে -- ৮০০ বছরের উদ্ভাবন ও সমৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে।

আজকের এই ধরনের অন্ধকার এবং গুরুতর সময়ে, আমাদের অবশ্যই এই রকম মহত্ত্বের আকাঙ্ক্ষাকারী সমাজ এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই আগের চেয়ে অনেক বেশি নেতৃত্বের গুরুত্বের উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে - সেই সাথে নেতৃত্বের সাহসী পদক্ষেপ আর নিজ নিজ নেতৃত্বের গুণাবলীর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

=====================================================



সূত্রঃ Click This Link.
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৫:৪৭
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×