somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. ইউনূসের মতো বোকা হওয়া শিখতে হবে! | দৈনিক কালবেলা উপসম্পাদকীয়

০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সারা জীবন উল্টো কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন। কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো ধনী ব্যক্তিদের ঋণ দেয়, অথচ তার গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্রদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করে। বাংলাদেশের কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোতে ৯০ শতাংশের ওপর ঋণগ্রহীতা পুরুষ। আর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান মহিলাদের মধ্যে ঋণ দেয়। তার প্রতিষ্ঠানের ৯৭ শতাংশ ঋণগ্রহীতা মহিলা। কনভেনশনাল ব্যাংকের মালিকানা ধনী মানুষদের হাতে থাকে; অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা দরিদ্র মানুষদের! কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো কোনো কিছু বন্ধক ছাড়া টাকা ধার দেয় না, কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকে এসব লাগেই না। দরিদ্র মানুষ তো কোনো কিছু বন্ধক দিতে পারবে না! তাই গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ দেওয়ার সময়ে কোনো কিছু বন্ধক নেয় না।

ড. ইউনূসকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এভাবে উল্টো করে চললে তার ব্যাংক চলবে কী করে! তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি তা জানি না! আগে অন্তত চেষ্টাটা করি!’ তিনি চেষ্টা করেছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। এখানে একটা মজার বিষয় হচ্ছে, সম্ভবত গ্রামীণ ব্যাংক পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে কোনো আইনজীবী নেই!

এভাবে সাফল্য লাভ করেও ইউনূস সাহেব নিজেকে বোকা মনে করেন! তিনি মনে করেন যে, কোনো কিছু সম্পর্কে জানা না থাকলে, সেটা নিয়ে ভয় পাওয়া চলবে না! কোনো কিছু করতে গেলে খুব বেশি স্মার্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই! তার মতো বোকারাই তো পৃথিবীতে এভাবে কাজ করে করে সফল হয়েছে।

কোনো কিছু করতে গেলে ভয় পাওয়া চলবে না! কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো মানুষকে ঋণ দিতে ভয় পায়। তারা বলে যে, দরিদ্র মানুষরা ঋণ পাওয়ার যোগ্য নয়! এটা কি তাদের বলা উচিত? নাকি ব্যাংকগুলো চয়েস করার সময়ে জনগণের বলা উচিত—এ ব্যাংক জনবান্ধব, অমুক ব্যাংক জনবান্ধব নয়। একটু খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক তার ঋণগ্রহীতাদের সেরকম বলার সুযোগ করে দিয়েছে। অর্থাৎ তিনি স্রোতের উল্টো পথে হেঁটেছেন!



আচ্ছা, সারা পৃথিবীতে এত যে দরিদ্র মানুষ, তাদের দারিদ্র্যের পেছনে কারণ কী—তা কখনো ভেবে দেখেছেন? এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, দরিদ্র মানুষ বনসাই গাছের মতো! বনসাই গাছ কি চেনেন? ওই যে বড় গাছগুলোর মিনিয়েচার সংস্করণ! আপনি একটি বটগাছকেও ছোট করে বাড়ির বারান্দার টবে রেখে দিতে পারবেন। এটাই বনসাই। দরিদ্র মানুষরা বনসাইয়ের মতো! তাদের বীজে কোনো সমস্যা নেই। আসলে দরিদ্র মানুষদের চারপাশের পরিবেশ তাদের দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেয় না। দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে হলে আমাদের তাদের নিয়ে গতানুগতিক চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

এরকম একটি গতানুগতিক চিন্তাভাবনা হচ্ছে, ব্যবসা মানেই যত বেশি মুনফা করা যায় ততই ভালো! ব্যবসা মানেই টাকার খেলা। ব্যবসায়ীরা তাই টাকার পেছনে ছোটেন। কিন্তু আমরা যদি উল্টোটা করি, কী হবে? এমন একটি ব্যবসা কি তৈরি করা যায়, যা মুনাফার পেছনে ছুটবে না, তাহলে কী হবে? এভাবে যদি বাংলাদেশের প্রতিটি সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য একটা করে ব্যবসা তৈরি করা যায়, তাহলে কী হবে?

এ সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে তৈরি হওয়া ব্যবসাকেই সোশ্যাল বিজনেস বা সামাজিক ব্যবসা বলা হয়ে থাকে। এভাবেই সম্ভব আমাদের মতো দেশের সমস্যাগুলোকে সমাধান করা। আমরা তাই বলে কনভেনশনাল বা গতানুগতিক ব্যবসাগুলোকে ছোট করছি না। সেগুলো চলতেই পারে। কিন্তু সেগুলোর পাশাপাশি এমন কিছু ব্যবসা দরকার, যেগুলো আমাদের চারপাশের সমস্যা সমাধান করার জন্য তৈরি হবে।



জার্মান জুতার কোম্পানি ‘অ্যাডিডাস’-এর কথা অনেকেই শুনে থাকবেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সেই কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একবার এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আমরা কীভাবে সোশ্যাল বিজনেস বা সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে পারি?’ তখন ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘তোমাদের এমন একটা মিশন থাকা উচিত যে, পৃথিবীর কোনো মানুষই জুতা ছাড়া থাকবে না। তোমরা দরিদ্র মানুষদের জন্য জুতা বানাও।’ তখন অ্যাডিডাসের সিইও অবাক হয়ে বলেছিলেন, ‘এটা তো অনেক বড় মিশন!’ তখন ড. ইউনূস উত্তর দিয়েছিলেন, ‘অ্যাডিডাসও তো অনেক বড় প্রতিষ্ঠান! তুমি কি চাও আমি তোমাকে ছোট লক্ষ্যের কথা বলি!’ অ্যাডিডাসের হায়ার ম্যানেজমেন্ট প্রায় এক ঘণ্টা পর ড. ইউনূস সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘একজন দরিদ্র মানুষের জন্য আমরা কত সস্তায় জুতা বানাব? এর দাম কত রাখা যেতে পারে?’ ড. ইউনূসের এবারের উত্তর, ‘আমি তা জানি না! মনে হয় ১ ইউরোর নিচে!’ অ্যাডিডাস কর্তৃপক্ষ তাকে উত্তর দিয়েছিল, ‘আপনি খুব প্যাঁচালো মানুষ!’ ড. মুহাম্মদ ইউনূস উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এজন্যই তোমরা অ্যাডিডাস! যেহেতু সমস্যা অনেক বড়, তোমাদের পক্ষেই এমনটা বানানো সম্ভব বলে আমি তা বলেছি!’

অ্যাডিডাস কোম্পানি দুই বছর লাগিয়েছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইডিয়া অনুযায়ী জুতা বানাতে! তারা শেষ পর্যন্ত ১ ইউরোর চেয়ে কম মূল্যের জুতা বানাতে সক্ষম হয়!



এরকম কাজ আমি-আপনিও করতে পারি! আমাদের মধ্যে অনেক ধরনের আইডিয়াই আসে। কিন্তু আমরা সেগুলো কাজে লাগাই না। কেন! একটু সাহসের অভাবে, অথবা আমরা নিজেদের যোগ্য মনে করি না, সেজন্য সেই আইডিয়া হাতে তুলে নিতে ভয় পাই, মানুষকে আইডিয়া দিতে ভয় পাই, তাই না? অথচ, যদি উল্টোটা করতাম!

এমন যদি হতো, সচিবদের কাছে আমরা ছুটে না গিয়ে, সচিবরাই আমাদের কাছে এসে সমস্যার খোঁজ করতেন? পুলিশের কাছে জিডি করতে না গিয়ে পুলিশই আমাদের কাছে জিডি লিখতে ছুটে আসত? অপরাধীকে খুঁজতে পুলিশ না গিয়ে অপরাধীই নিজেকে ধরিয়ে দিতে পুলিশের খোঁজ করত? বুয়াদের রাত-দিন না খাটিয়ে আমরাই বুয়াদের কাজে সাহায্য করতে লেগে যেতাম? কেন আমাদের বেতন পেতে মাসের শেষ অবধি অপেক্ষা করতে হবে? মাসের প্রথম সপ্তাহেই তা দিয়ে দিতে অসুবিধা কোথায়!

আমাদের চিন্তার দুয়ারটা খুলে দিতে হবে। তাহলেই আমরা একেকজন সমস্যার সমাধান করতে পারব! সবাইকেই সামাজিক ব্যবসা করতে হবে, তা নয়। বরং আমাদের নিজেদের একেকজন সমস্যা সমাধানকারী হিসেবে তৈরি হয়ে যেতে হবে। তাহলেই সম্ভব দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনা!

========
মূল লেখাঃ Click This Link
=======================================================





সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৫৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×