আমি ঢাকার লালমাটিয়া এ ব্লক এলাকায় বড় হয়েছি। একদিন মায়ের সাথে স্কুলে হেঁটে যাচ্ছি। আমি তখন ক্লাস ওয়ান কি টুতে পড়ি। হঠাৎ ছিনতাইকারী আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়ালো। উদ্দেশ্য আমার মায়ের ব্যাগটি ছিনিয়ে নেওয়া। আমার মাও দারুণ সাহসী মহিলা। চিৎকার দিয়ে উঠলেন - "এই কলোনির ছেলেরা, তোমরা কোথায়!" মায়ের চিৎকার শুনে সাথে সাথে আমাদের সরকারি কলোনির তরুণ ছেলেদের দল ছুটে এসে ছিনতাইকারীদের ধাওয়া দিলো! দুইজন প্রায় ১ কিমি দৌড়ে ছিনতাইকারী দুজনকে ধরে আনলেন! এরপরে, আম্মুর পায়ে ধরে মাফ চাওয়ার পালা তাদের!
এমনই ছিলেন আমাদের এলাকার ডানপিটে মানুষগুলো। নিজেদের এলাকায় কোন অপরাধ হতে দিতে চাইতেন না। কোন কিছু হলে মূহুর্তে একজোট হয়ে সমাধান করতেন। আমি ভাইয়া - আপুদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এরকম জোট পাকানো থেকে অনেক কিছু শিখেছি যা পরে জীবনে বহুবার এপ্লাই করেছি।
মনে আছে, এলাকার কোন এক বড় ভাই ভুল করে এক মুরুব্বীর সামনে সিগারেটে টান দিয়ে ফেলেছিলেন। এতে এলাকায় কি যে ছি ছি রব উঠলো! ভাইয়াটা লজ্জায় শেষ! ঐ মুরুব্বীর কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চাইতে হয়েছিলো।
আর এখন? সম্মান দেখানো তো ডুরে থাক, লজ্জা-শরম পর্যন্ত উঠে গিয়েছে! আর, মানবিকতা দেখানো? ঐদিনের একটা ঘটনা বলি।
আমি ধানমণ্ডি ২৭ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এর মাঝেই হাঁটছি। হঠাৎ দেখি এক রিকশাওয়ালা মাটিতে পড়ে রয়েছেন। সেদিকে কারো হুঁশ নেই। পাশ দিয়ে মানুষ দেদারসে হেঁটে যাচ্ছে। আমি রিকশাওয়ালার কাছে গিয়ে উবু হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম -
"কি হইছে, ভাই? উঠেন! উঠে বসতে পারবেন?"
মানুষটা কোনক্রমে উঠে বসলেন। আমি তার চোখের দিকে চাইলাম। তাতে কি যে এক অসহায় চাহনী! আমি কঠোর স্বরে বললাম -
"ভাই, যে শহরে রিক্সা চালাচ্ছেন, এখানে কেউ আপনাকে ফুঁটা পয়সাও দাম দিবে না। আপনাকে নিজের পায়ে নিজে উঠে দাঁড়াতেই হবে!"
মানুষটা ফেলফেল করে আমার দিকে চেয়ে রইলো! আমি তাঁকে সেই অবস্থায় রেখেই সামনে হাঁটা দিলাম। আমার চোখের পানি কাউকে দেখাতে চাই না। কাউকে না!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



