somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহিংসতাকে প্রতিনিয়ত উস্কে দিচ্ছে আমাদের মিডিয়া!

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সহিংসতাকে প্রতিনিয়ত উস্কে দিচ্ছে আমাদের মিডিয়া! উস্কানির এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা বড়ই কঠিন হয়ে পড়েছে যেনো। কারণ এদেশের গণমাধ্যম, বিশেষ করে টেলিভিশনগুলো যেনো আলাদা নিউজ ফরম্যাট তৈরি করে নিয়েছে বাংলাদেশের জন্য। যেখানে সংবাদের ব্যাকরণ, এথিক্স কিংবা আন্তর্জাতিক মানের বালাই থাকে না বোধ হয়।

যেমন হরতালের কথাই ধরা যাক।

১. হরতালে যদি সংঘাত-সংঘর্ষ না হয়, তখন মিডিয়া বলে..‘ঢিলেঢালা হরতাল পালিত’, যাতে এক ধরণের মানে দাঁড়ায়... হরতাল ততটা সফল হয়নি অথবা অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, হরতাল আহ্বানকারি দলও মিডিয়াকে পারফরমেন্স দেখানোর জন্য ব্যাপক সহিংসতা ঘটায়। ককটেল ফাটায়, সাধারণ মানুষের গাড়ি ভাংচুর করে, আগুন দেয়... এক কথায় দেশ ও দশের ক্ষতি করে।

২.আর হরতালে যখন ব্যাপক হারে গাড়ি ভাংচুর, আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, গ্রেফতার কিংবা রাস্তা অবরোধের মতো ঘটনা ঘটে, তখন আমাদের মিডিয়াগুলো হেডলাইন করে.. ‘ব্যাপক ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাংচুর ও ধরপাকড়ের মধ্য অমুক দলের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত’।এতে নিজেদের খুব সফল মনে করে হরতাল আহ্বানকারি দলটি। কিন্তু, মাঝখান দিয়ে সাধারণ মানুষের কত যে ক্ষতি হয়ে গেলো, সে খবর তারাও নেয় না, মিডিয়াও বলে না।

৩.আবার হরতাল আহ্বানকারি দলের কর্মীরা যদি খুব বেশি রাস্তায় না নামে, তখন মিডিয়া বলে.. ‘হরতাল ডেকে মাঠে নেই অমুক দল’। ফলে, নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে মাঠে নামে তারা। হয় সংঘর্ষ, আহত হয়, মারাও যায়। তখন টিভি চ্যানেলে হেডলাইন হয়- ‘অমুকদলের হরতালে ব্যাপক সংঘর্ষ, সারাদেশে নিহত ১০/২০ কিংবা ১০০’। আর রিপোর্টার তার বিস্তারিত প্রতিবেদনে লেখেন.. ‘হরতালকারি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয় এতো জন’। কিন্তু, কার গুলিতে কে মরলো, কার ঢিলে কে মরলো; হরতাল আহ্বানকারী মারলো নাকি হরতাল বিরোধীরা মারলো; যে মরলো তার পরিচয়ই বা কি?.. সেসব জানলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকাশ করে না মিডিয়া। আর, এই সুবাদে শুরু হয় দোষারোপের প্রতিযোগিতা। কেউ বলে আমার লোক মরেছে, কেউ বলে ওদের লোক মেরেছে; লাশ নিয়েও চলে টানাটানি।

৪. হরতালের দিন রাস্তায় কিছু গাড়ি চললে মিডিয়া বলে.. ‘হরতালের তেমন প্রভাব পড়েনি, জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক কিংবা অন্য হরতালের চাইতে আজ গাড়ি বেশি চলছে। কিন্তু, স্বাভাবিক কর্ম দিবসের তুলনায় ওইদিন যে ৯৯ শতাংশ গাড়ি কম চলেছে, সেটা জেনেও বলতে চায় না। ফলে, কাভারেজ পাওয়ার আশায় গাড়ি চলাচলে বাধা দেয় হরতালকারিরা, ভাংচুর করে, আগুন দেয়।

হরতালকে দিনকে দিন সহিংস করে তোলার পেছনে মিডিয়ার এমন চেতন-অবচেতন উস্কানি কম দায়ি নয়। তাই হরতাল এখন শুধু এক আতঙ্কের নাম, যার ভয়ে বেশিরভাগ অফিস আদালত, স্কুল-কলেজ দোকান-পাট আর গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে।

গণমাধ্যমে এই অনুন্নয়ন সাংবাদিকতার সংস্কৃতি সব আমলেই চর্চা হয়। তবে কোনো আমলে কম, কোনো আমলে বেশি। তবে এই পলিসির জন্য মাঠ পর্যায়ের সংবাদকর্মীরা ততটা দায়ি নয় বলে মনে হয়। বরং, এর সিংহভাগ দায় যেতে পারে বার্তা বিভাগের বসদের। কিছু অংশে দায়ি মালিকপক্ষের রাজনৈতিক পলিসি, সরকারি চাপ আর বিরোধীপক্ষের প্রতি মায়া কিংবা ক্ষোভ।

হরতালের মূল কথা হলো.. গাড়ি চলাচল, অফিস-আদালত, দোকান-পাট, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকা। যদি কোনো সহিংসতা ছাড়াই এসব অর্জিত হয়, তবে সেই হরতালকে একটি সফল হরতাল বলা যেতে পারে। তাই হরতালের দিন সহিংসতার অপেক্ষায় না থেকে, সম্ভবত আমাদের সংবাদের মূল বিষয়বস্তু হওয়া উচিত-ওই দিন গাড়িচলাচল, অফিস-আদালত, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ কতটা চালু থাকলো নাকি থাকলো না। পাশাপাশি দ্বিতীয় বিষয় হতে পারে, হরতালে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আর অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩০
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×