মুসলিম খলীফাদের মাঝে খলীফা হারুনের নাম প্রায় সবারই জানা। আলেম-উলামাদের প্রতি তিনি মোটামুটি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। হযরত ইমাম আবু ইউসুফকে তিনিই চীফ জাস্টিস নিয়োগ করেছিলেন। হযরত ইমাম মালিকের সাথেও তিনি মাঝে মাঝে মুলাকাত করতেন এবং তার নসীহত গ্রহণ করতেন। খলীফা হারুনের এক পুত্র ছিল অত্যন্ত আল্লাহ ভীরু। মাত্র ষোল বৎসর বয়সেই এই যুবক আল্লাহওয়ালা বুযুর্গানে দ্বীনের সাথে সময় কাটাতো। ফলে অল্প বয়সেই সে আল্লাহর মারিফাত এবং বেলায়েত লাভে ধন্য হয়। আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান, রাসূলের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি ও ভালোবাসা তাকে অতি উচ্চ মাকামে সমাসীন করেছিল। পিতা হারুন ছিলেন প্রভাবশালী বাদশাহ। রাজ প্রাসাদ এবং একচ্ছত্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী। ভোগ-বিলাস এবং সুখ-শান্তির কোন অভাব ছিল না তার। তদুপরি পিতার পর বাদশাহ হওয়ার বিষয়টিও ছিল সুনিশ্চিত। কিন্তু এসব কিছুর দিকে ইবনে হারুনের আগ্রহ ছিল না, বস্তুর প্রতি আকর্ষণ ছিল না মোটেই। অত্যন্ত সরল-সোজা এবং সাধারণ লোকের মত ছিল তার চলাফেরা। যুব রাজের মত নয়, বরং ফকীর-মিসকীনদের মত হয়ে থাকতো সে। ছেড়া-ফাটা কম মূল্যের লুঙ্গি পরে মাথায় কাপড় পেঁচানো অবস্থায় এই যুবক প্রায়ই কবরস্থান যিয়ারতে যেত। সে কবর যিয়ারতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত ও ভারাক্রান্ত হয়ে পড়তো। অনেক সময় কবরবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলতোঃ হে কবরস্থ লোকজন! আপনারা আমাদের পূর্বে পৃথিবীতে ছিলেন এবং অনেক সহায়-সম্পদ এবং বাড়ী-ঘরের মালিক ছিলেন। অনেকে রাজা-বাদশাহ ও মন্ত্রী-মিনিষ্টার ছিলেন। কিন্তু এসব বস্তু আপনাদেরকে মৃত্যুর ছোবল থেকে রক্ষা করতে পারে নাই। আপনারা এখন নির্জনে একাকী কবরে বসবাস করছেন। মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন কারো সাথে আপনাদের কোন সম্পর্কই আজ নেই। আহ! যদি জানতে পারতাম আপনাদের কি অবস্থা? কিভাবে আপনারা জীবন-যাপন করছেন? যদি জানতে পারতাম, আপনারা কবরে কি কি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন! অতঃপর ইবনে হারুন এই কবিতা পাঠ করতঃ “জানাযার নামায প্রতিদিন আমাকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলে। যারা মৃত ব্যক্তিদের জন্য কাঁদে, তাদের কান্না আমাকে অধীর চিত্ত করে তোলে।” এরূপ কবিতা পাঠ করতে করতে সে অস্থির হয়ে কবরস্থানে পড়ে থাকতো।
যুবক ইবনে হারুন একদিন পিতা বাদশাহ হারুনের রাজকীয় সভাকক্ষে হাজির হলে তার জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থা, মাথায় পেঁচানো কাপড়, পড়নে ছেঁড়া-ফাটা লুঙ্গি পরিদর্শন করে মন্ত্রী ও সভাসদবর্গ পরস্পর বলাবলি করতে থাকে যে, এই পাগল ছেলেটির কারণে অন্যান্য রাজা-বাদশাহদের সম্মুখে খলীফা হরুনের ইজ্জত-সম্মান ও প্রভাব-প্রতিপত্তি ক্ষুন্ন হতে চলেছে। সুতরাং এ ব্যাপারে ত্বড়িৎ কোন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যকীয়। এই ব্যাপারে কোন বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা বাদশাহ হারুনকে পর্যন্ত পরামর্শ দিল।
বাদশাহ হারুন মন্ত্রীবর্গের পরামর্শে স্বীয় পুত্রকে বললো, ‘হে পুত্র! তুমি মন্ত্রীবর্গের কথাবার্তা শুনেছো। তুমি কি আমাকে এভাবেই অপদস্থ করতে থাকবে? তোমার অবস্থার কি কোন পরিবর্তন করবে না? হে আমার প্রাণপ্রিয় সন্তান! আমার কি কোন জিনিসের অভাব আছে, যে কারণে তুমি এরূপ জীর্ণ-শীর্ণ, মলিন বেশ ধারণ করে ফকির-মিসকীনের মত হয়ে চলেছ? তুমি আর আমাকে লজ্জা না দিয়ে সঠিক-সুন্দর অবয়বে যুবরাজ হিসেবে চলাফেরা করার প্রতি মনোযোগী হও। তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যত তুমি নষ্ট করো না।’
যুবক ইবনে হারুন পিতার নসীহত শ্রবণ করতঃ সাথে সাথে কোন উক্তি করল না। বরং সভা কক্ষে একটি পাখি উপবিষ্ট দেখে পাখিটিকে সম্বোধন করে বললঃ ‘হে পাখি! তোমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, তার বরাত দিয়ে আমি বলছি, তুমি আমার হাতে এসে বসে যাও।’ বলার সাথে সাথে পাখিটি এসে হাতে বসে যায়। অতঃপর সে আবার বলল, ‘তোমার পূর্বের স্থানে ফিরে যাও।’ বলার সাথে সাথে পাখিটি যথাস্থানে ফিরে গেল।
এই কারামত সংঘটিত হওয়ার পর যুবক ইবনে হারুন পিতাকে বললঃ হে আমার শ্রদ্ধেয় পিতা! আমি আপনার জন্য কোন লজ্জার কারণ নই, বরং বলতে গেলে আপনার রাজ্যশক্তি এবং বস্তুর প্রতি আপনার আকর্ষন আমার জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমি আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এই বলে সভাকক্ষ থেকে যুবক ইবনে হারুন বের হয়ে যায়।
বাদশার সভাকক্ষ থেকে বের হয়ে এসে মা-জননীর নিকট থেকে সে চির বিদায় গ্রহণ করে। পথের সম্বল হিসেবে একটি কুরআন শরীফ বুকে ধারণ করে নেয়। সন্তানের এই অবস্থা দেখে মা-জননী ভরাক্রান্ত হয়ে পড়েন। বাড়ী-ঘর, রাজপ্রাসাদ, আত্মীয়-স্বজন সবকিছু পরিত্যাগ করে আপনার সন্তানের নিরুদ্দেশ যাত্রার বেদনায় ব্যাকুল হয়ে উঠে মায়ের মন। তবে যাওয়ার পথে মূল্যবান একটি আংটি সন্তানের হাতে তুলে দিয়ে মা বলেন, তোমার যে কোন প্রয়োজনে আংটিটি বিক্রি করে খরচ করো। অশ্রুসিক্ত মা-জননীর দেয়া আংটিটি ফেরত না দিয়ে শ্রদ্ধা ভরে গ্রহণ করতঃ ইবনে হারুন রাজপ্রাসাদ থেকে চির বিদায় গ্রহণ করে।
মৃত্যুর পূর্বে যুবকের অছীয়ত
(আবু আমেরের বর্ণনা)
আমাকে অছীয়ত করে সে বলে,
ক) হে আমার বন্ধু! দুনিয়ার আকর্ষণে ধোকাগ্রস্ত হয়ো না। মানুষের জীবন যেমন খতম হয়ে যায়, তেমনি অর্থ-সম্পদও খতম হয়ে যায়। তুমি যখন কোন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে কবরস্থানে যাও তখন তুমি এই চিন্তাও কর যে, একদিন তোমাকেও এভাবে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে।
খ) হে আবু আমের! আমার মৃত্যু সন্নিকটে, আমার আত্মা বের হয়ে যাওয়ার পর তুমি আমাকে গোসল দিয়ে আমার পুরোনো কাপড়েই আমাকে কাফন পরাবে। আমি বললাম, হে আমার প্রিয় বন্ধু! আমি যদি তোমাকে নতুন কাপড় দিয়ে কাফন পরাই তাহলে দোষের কি আছে?
যুবকটি জবাব দিল, নতুন কাপড় পরার অধিক উপযুক্ত হচ্ছে জীবিত মানুষ। হযরত আবু বকর সিদ্দীকও এরূপই জবাব দিয়েছিলেন। কাফন তো নতুন পুরাতন সবই সমান। কেননা দু’একদিন পরই তা ছিড়ে-ফেটে বিনষ্ট হয়ে যাবে। সাথে থাকবে কেবল তার আমলসমূহ।
গ) যে আমার কবর খনন করবে তাকে আমার লোটা এবং লুঙ্গি হাদিয়া দিয়ে দিও।
ঘ) আর এই আংটি এবং কুরআন শরীফ খানা তোমার নিকট আমানত রাখলাম। তুমি এই আমানতগুলো বাদশাহ হারুনের কাছে পৌঁছিয়ে দিও।
ঙ) মনে রাখবে, অন্য কারো কাছে দিও না, বাদশাহর হাতে দিয়ে তাকে বলবে যে, “এক প্রবাসী এই আমানত আপনার নিকট পৌঁছানোর অছীয়ত করে মৃত্যুবরণ করেছে এবং আপনার উদ্দেশ্যে বলে গিয়েছে, এমন যেন না হয় যে, উদাসীন এবং ধোকাগ্রস্তাবস্থায় আপনার মৃত্যু এসে যায়।”
রআমাকে এরূপ অছীয়ত করে যুবকটি মৃত্যুবরণ করে। তার মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত মর্মাহত ও দুঃখিত হই এবং বুঝতে পারি যে, যুবকটি বাদশাহ হারুনেরই পুত্র। মৃত্যুর পর অছীয়ত মুতাবেক তার কাফন-দাফন সমাধা করি। লুঙ্গি ও লোটা কবর খননকারীকে দিয়ে দেই। আর পবিত্র কুরআন ও আংটি নিয়ে বাদশাহ হারুনের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বাগদাদে রওয়ানা হই।
আমি যখন রাজপ্রাসাদের কাছাকাছি পৌঁছি তখন দেখতে পাই যে, বাদশাহ হারুনের পথযাত্রা শুরু হয়েছে এবং অসংখ্য অশ্বারোহী দলে দলে এগিয়ে আসছে। প্রতি দলে রয়েছে এক হাজার করে অশ্বারোহী। এ অবস্থা দেখে আমি উঁচু একটি স্থানে দাড়িয়ে বাদশাহ হারুনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। এভাবে দু’শ নম্বর সারিতে দাড়িয়ে বাদশাহকে একটি অবস্থানে উপবিষ্ট দেখে আল্লাহর রাসূলের আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে একটু কথা বলার জন্য বাদশাহর নিকট আবেদন জানাই। আমার আবেদনের ধ্বনি শুনে বাদশাহ আমার দিকে তাকালে আমি দ্রুত তার দিকে অগ্রসর হই এবং নিকটে পৌঁছি।
বাদশার নিকট পৌঁছে আমি বলি, “প্রবাসী এক যুবক পবিত্র কুরআন এবং এই আংটি আমার কাছে আমানত রেখে আপনার কাছে পৌঁছানোর অছীয়ত করতঃ মৃত্যুবরণ করেছে। তাই আমি এই আমানত আপনার নিকট পৌঁছানোর জন্য বসরা থেকে বাগদাদে হাজির হয়েছি। যুবকটি এখন আর পৃথিবীতে নেই। সে মৃত্যুবরণ করেছে এবং বসরার যমীনেই তাকে দাফন করা হয়েছে।
বাদশাহ হারুন পবিত্র কুরআন ও আংটি দেখে বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে শীর নীচু করে নীরবতা অবলম্বন করেন। অতঃপর ভরাক্রান্ত মনে একজনকে বললেন, “এই লোকটিকে তোমার সাথে রাখ। আমি পথযাত্রা শেষে ফিরে এসে যখন ডাকি তখন আমার কাছে তাকে পৌঁছাবে।” এরপর বাদশাহ হারুন পথযাত্রা সমাপ্ত করে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করতঃ স্বীয় কামরার পর্দা টেনে লোকটিকে বলল, “বসরার লোকটির বক্তব্য যদিও আমার অন্তরের দুঃখ-বেদনা বৃদ্ধির কারণ হবে তবুও তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো।”
রাজ দরবারের লোকটি দ্রুত এসে বলল, “বাদশাহ আপনাকে স্মরণ করেছেন। তবে শুনুন পুত্রের মৃত্যু সংবাদে বাদশাহ অত্যন্ত মর্মাহত ও দুঃখিত অবস্থায় আছেন। তাই অল্প কথায় সংক্ষিপ্তভাবে কাজ সেরে নিবেন, দশ কথার স্থলে পাঁচটির দ্বারা কাজ সেরে নিবেন।” এই বলে আমাকে বাদশার দরবারে সে হাজির করে। আমি গিয়ে দেখি যে, অত্যন্ত মর্মাহত ও কাতর অবস্থায় বাদশাহ একাকী বসে আছেন। তিনি আমাকে তার খুব নিকটে বসিয়ে প্রশ্ন করেন এবং আমি সেই প্রশ্নের উত্তর দান করি।
বাদশাহ হরুনঃ তুমি আমার এই ছেলে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত আছ কি?
আবু আমেরঃ হ্যাঁ বাদশাহ! আমি তার সম্পর্কে অবগত আছি।
বাদশাহঃ সে কি কাজ করত?
আবু আমেরঃ সে দিন মজুরীর কাজ করত।
বাদশাহঃ তুমি কি কখনো তার দ্বারা কাজ নিয়েছ?
আবু আমেরঃ হ্যাঁ, আমিও তার দ্বারা কাজ নিয়েছি।
বাদশাহঃ সে তো রাসূলের আত্মীয় এবং তাঁর চাচা হযরত আব্বাসের বংশধর। সুতরাং তুমি তাকে দিয়ে কি করে মজদুরীর কাজ নিলে?
আবু আমেরঃ হে আমীরুল মুমিনীন! সর্বপ্রথম আমি আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, অতঃপর আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আসলে আমি তখন তার বিষয়ে জানতে পারি নাই। আমি কেবল তার মৃত্যুর সময় অবগত হই যে, সে আপনার পুত্র।
বাদশাহঃ তুমি কি স্বয়ং তার দাফন-কাফন করেছ?
আবু আমেরঃ জী হ্যাঁ, আমি স্বয়ং কাফন-দাফনের কাজ সমাধা করেছি।
এই কথা শুনে বাদশাহ আমার হাত টেনে নিয়ে স্বীয় বক্ষে ধারণ করতঃ কবিতা পাঠ করেন। যে কবিতার সারমর্ম হচ্ছে এই-
হে মুসাফির! তোমার বিচ্ছেদ-বেদনায় আমার হৃদয় জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। তোমার জন্য আমি অধীর এবং অশ্রুসিক্ত। হে মুসাফির! তোমার বাসস্থান (কবর) এখন কত দূরে? তবে হ্যাঁ, তোমার জন্য দুঃখ-বেদনা আমার অন্তরের অতি নিকটে। সত্যিই মৃত্যু মানুষের স্বাদ এবং সমস্ত প্রশান্তিকে মিটিয়ে দেয়। আহ! ঐ মুসাফিরের মুখমণ্ডল যেন চাঁদের টুকরা, যা রূপার থালার ন্যায় কোমল শরীরে বিদ্যমান। কিন্তু অবশেষে চাঁদের ঐ টুকরা (মুখমণ্ডল) এবং রূপার থালা (শরীর) কবরে সমাহিত হলো।”
বাস্তবিকই মৃত্যু কাউকে পরোয়া করে না, তার ছোবলে সকলকে আক্রান্ত হতে হয়।
অতঃপর বাদশাহ হারুন আমাকে নিয়ে প্রিয় পুত্রের কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বসরায় গমন করেন এবং কবরের পার্শ্বে দাড়িয়ে নিম্নোক্ত কবিতা পাঠ করেনঃ
অল্প বয়সে মৃত্যু তোমাকে কোলে তুলে নিয়েছে। হে মুসাফির! আমি জানি তুমি আর কোনদিন ফিরে আসবে না। হে আমার কলিজার টুকরা, নয়নমণি! অন্তরের প্রশান্তি! কেবল তুমিই ছিলে আমার আশার আলো, দীর্ঘ রাতে এবং অদীর্ঘ রাতেও। যুবক বয়সে তুমি মৃত্যুর যে শুরা পান করেছ তা তোমার বৃদ্ধ পিতা বৃদ্ধ বয়সে পান করবে। মৃত্যুর শুরা সবাইকে অবশ্যই পান করতে হবে। চাই সে মরুভূমিতে বসবাসকারী হোক অথবা রাজপ্রাসাদে বসবাসকারী হোক। বস্তুতঃ সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহপাকের জন্য, যার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাঁর সিদ্ধান্তের কোন বিকল্প নেই।
আবু আমেরের স্বপ্ন
যিয়ারতের পরবর্তী রাত্রে আমি স্বপ্নে নূরের একটি বিরাট গম্বুজ দেখতে পাই। গম্বুজের উপর কেবল নূর আর নূর। সেই নূরে উপবিষ্ট বাদশাহ হারুনের সেই যুবক পুত্র আমাকে সম্বোধন করে বলছেঃ হে আবু আমের! তুমি আমাকে অতি উত্তমরূপে দাফন-কাফন করেছ। আমার অছীয়ত সমূহ যথাযথভাবে পূরণ করেছ এবং আমার আমানত যথাস্থলে পৌঁছিয়েছ। আল্লাহপাক তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করে সৌভাগ্যবান করুন। আমি যুবককে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু! আল্লাহপাক তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? সে বললঃ “হে আবু আমের! আমি যে মাওলার চরণে এসেছি তিনি তো পরম দয়ালু ও করুণাময়। তিনি আমার প্রতি অতি সন্তুষ্ট। তিনি আমাকে যা দান করেছেন, তা চোখ কখনো দেখেনি, কান কখনো শুনেনি এবং অন্তরও অনুভব করেনি। আমি তোমাকে আল্লাহর কসম করে বলছি, যে কেউ দুনিয়া থেকে আমার মত এখানে চলে আসবে, তার জন্যও রয়েছে ঐ সম্মান ও মর্যাদা- যা আমি লাভ করেছি।”
বাদশাহ হারুনকে তাঁর পুত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “আমি বাদশাহ হওয়ার পূর্বে তার জন্ম হয়। অতি উত্তমরূপে তার লালন-পালন করা হয়। পবিত্র কুরআন ও দ্বীনী শিক্ষায় সে শিক্ষিত হয়। ফলে বস্তু জগতের প্রতি তার আকর্ষণ ছিল না মোটেই। পরবর্তী সময়ে আমার উপর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ন্যাস্ত হয়, কিন্তু সেদিকে তার মোটেই ভ্রুক্ষেপ ছিল না। সে কোন দিন আনন্দ-উল্লাসের প্রতি আকৃষ্ট হয় নাই। আমার থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার সময় আমি তার মা-জননীকে মূল্যবান আংটিটি তাকে দিতে বলি। সে তাও খরচ করে নাই, বরং ফেরত দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। সে তার মা-জননীর প্রতি ছিল অত্যন্ত আনুগত্যশীল।