somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যিকার চন্দ্র বিজয় নাকি সিনেমা?

২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদে অবতরণের মাধ্যমে ‘মানুষের পক্ষে সবই সম্ভব’ এই বিশ্বাসকে সার্থক করতে সক্ষম হয়েছিল মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। প্রযুক্তিগতভাবে এটিই ছিল গত শতাব্দীর সেরা অর্জন। কিন্তু এই অর্জনকে অনেকেই শতাব্দীর সেরা প্রতারণা হিসেবে মনে করে। আবার অনেকের কাছে এটাই ষড়যন্ত্রমূলক তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত। এ তত্ত্বের মূল প্রবক্তা রকেট-প্রযুক্তির লেখক বিল কেসিং। তিনি ১৯৭৪ সালে ‘আমরা কখনও চাঁদে যাইনি : আমেরিকার ৩০ বিলিয়ন ডলারের জোচ্চুরি’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। মূলত এরপর থেকেই মানুষের চন্দ্র বিজয় নিয়ে নানা সন্দেহ বাড়তে থাকে। সত্যিই কি মানুষ চাঁদে গিয়েছিল? নাকি নাসার পরিচালনায় কোনো পরিকল্পিত সিনেমা ছিল চন্দ্র বিজয়? এ নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। আছে যথেষ্ট বিতর্কও। রকেট-প্রযুক্তির লেখক বিল কেসিংয়ের মতে, চাঁদ থেকে তোলা নাসার ছবিতে অনেক বৈসাদৃশ্য রয়েছে। তিনি দাবি করেন, ১৯৬৯ সালে পৃথিবীর ভ্যান এলেন রেডিয়েশন বলয় থেকে মানুষকে রক্ষা করে চাঁদে পৌঁছানোর মতো প্রযুক্তি তখনও তৈরি হয়নি। এ বইতে কেসিং অ্যাপোলোর চাঁদে যাওয়ার বিষয়টিকে একটি তত্ত্ব আকারে প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অ্যাপোলো উেক্ষপণের পর মহাকাশ যানটি অদৃশ্য হলে ৩ নভোচারীবিশিষ্ট লুনার ক্যাপসুলটি একটি সামরিক কার্গো বিমানে সরিয়ে ফেলা হয় এবং আট দিন পর ক্যাপসুলটি প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলে দেয়া হয়। তারপর কঠোর সামরিক নিরাপত্তাবেষ্টিত নেভাদার মরুভূমি অঞ্চলে নাসা কর্মকর্তারা চাঁদে অবতরণ নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেন। কেসিংয়ের এ তত্ত্ব নিয়ে ১৯৭৮ সালে ক্যাপ্রিকর্ন ওয়ান নামে একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হয়। এক দশক পর কেসিংয়ের তত্ত্ব নিয়ে ফঙ টেলিভিশনে একটি ডকুমেন্টারি প্রচারিত হয়, যেখানে অ্যাপোলোর ছবি এবং টিভি ফুটেজের বৈসাদৃশ্য তুলে ধরা হয়।
যেমন :
১. চাঁদের আকাশে কোনো তারা দেখা যায়নি কেন?
২. মডিউলটি চন্দ্রপৃষ্ঠের যেখানে অবতরণ করে সেখানে গর্ত সৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু ভিডিও ফুটেজে গর্তের কোনো চিহ্ন নেই।
৩. চাঁদে বাতাস নেই অথচ দেখা যাচ্ছে আমেরিকার পতাকা উড়ছে।
৪. চাঁদ থেকে সংগৃহীত পাথর কি সত্যি চাঁদের পাথর ছিল?
৫. ফুটেজে দেখা যায় দুটি বস্তুর ছায়া পরস্পরকে ছেদ করেছে, অথচ আলোর উত্স হওয়ায় তা সমান্তরাল হওয়ার কথা।
৬. কেন লুনার মডিউলের পায়াতে চাঁদের ধুলো জমেনি, যা রকেটের কারণে হতে পারত।
৭. কেন চাঁদের মাটিতে একেক বস্তুর ছায়া একেক রকম, যেখানে আলোর উত্স সূর্য কেবল।
৮. কেন তোলা ছবিতে চাঁদের আকাশে তারা দেখা যায় না।
৯. কেন অভিযানের টেলিমেট্রি ডাটা খুঁজে পাওয়া যায় না (নাসা স্বীকার করেছে হারিয়ে গেছে)।
১০. কেন বিভিন্ন স্থানে তোলা ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড দেখতে একই রকম (যেন সিনেমার সাজানো সেট)
১১. কেন ক্যামেরার ক্রস হেয়ার ঢাকা পড়ে যায় বিভিন্ন বস্তু দিয়ে, যা বাস্তবে কখনোই সম্ভব নয়।
১২. কীভাবে নভোচারীরা ভ্যান হেলেন বেলট-এর মারাত্মক রেডিয়েশন থেকে বেঁচে গেলেন, যেখানে মরণ নির্ঘাত্।
পরবর্তী সময়ে নাসা তাদের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করলেও কেসিংয়ের ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব এখনও অনেকে বিশ্বাস করে। ষড়যন্ত্রমূলক তাত্ত্বিকরা মনে করেন, স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঘায়েল করতে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করার লক্ষ্যে নাসা কৃত্রিমভাবে চন্দ্রজয়ের ঘটনা তৈরি করে। অনেকে বলেন, নভোচারী গাস গ্রিসাম এই ভাঁওতার গোমর ফাঁক করতে চাওয়ায় তাকে সুকৌশলে হত্যা করা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, এসব কীর্তি করা হয়েছিল এরিয়া ৫১-এর গোপন শুটিং স্পটে, যে কারণে ওখানে সাধারণ মানুষের ঢোকার অনুমতি নেই। এসব তথ্য পড়লে যে কেউই ভাবতে পারেন, মার্কিন চন্দ্রাভিযান মিথ্যা ছিল।
নাসার বক্তব্য
তবে নাসা এসব বিষয়ের যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাও কিন্তু অগ্রহণযোগ্য নয়। যেমন চাঁদের আকাশে তারা না দেখা প্রসঙ্গে নাসা বলে, বেশিরভাগ আলোকচিত্রী একমত হবেন যে একটি খুবই উজ্জ্বল বস্তু এবং একটি তুলনামূলকভাবে খুবই অনুজ্জ্বল বস্তুর ছবিকে একসঙ্গে ফুটিয়ে তোলা যথেষ্ট কঠিন। অভিযাত্রীদের উজ্জ্বল স্পেসস্যুটের কারণে চাঁদের আকাশে অনেক তারাই ফিকে হয়ে গিয়েছিল। আবার বাতাসে পতাকা ওড়ার ব্যাপারেও নাসার ব্যাখ্যা রয়েছে। পতাকা ওড়া বা আন্দোলিত হওয়া কেবল বাতাসের ওপর নির্ভর করে, তা নয়। আসল ব্যাপার হলো, অভিযাত্রীরা সেই পতাকার খুঁটিকে মাটিতে গেড়ে দেয়ার জন্য এটিকে নাড়ায়। আর পতাকাটিকে একটি আনুভৌমিক দণ্ডের মাধ্যমে সোজা করে রাখা হয়েছিল। এ কারণেই মনে হয়েছে পতাকাটি উড়ছে। সন্দেহবাদীদের ধারণা, বায়ুপ্রবাহের কারণেই এই আন্দোলন ঘটেছিল। কিন্তু অ্যানিমেশনে দেখা যাচ্ছে, নিল আর্মস্ট্রংয়ের হাতের অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে বটে, কিন্তু সেই সময়ে পতাকার ভাঁজে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাছাড়া চাঁদে যদি বাতাস থাকত তাহলে তো সেখানে ধুলোবালি ওড়ারও প্রশ্ন ওঠত। কিন্তু কোনো ভিডিওতে এমনটি দেখা যায়নি।
চাঁদের পাথর নিয়েও বিভ্রান্তি!
এ প্রসঙ্গে নাসার জনসন স্পেস সেন্টারের বিজ্ঞানী ড. ডেভিড ম্যাককে বলেন, চাঁদের পাথর আসলেই পৃথিবীর পাথরের তুলনায় ব্যতিক্রম। চাঁদের পাথরের স্ফটিক কাঠামোতে পানির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। সেই সঙ্গে পৃথিবীর পাথরে প্রাপ্ত খনিজ, কাদামাটি এগুলো চাঁদের পাথরে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। চাঁদের পাথর বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে, তিন বিলিয়ন বছর আগের অগ্ন্যুত্পাত এবং গবঃবড়ত্রঃব প্রভাবের কারণে সৃষ্ট বিশেষ ধরনের কাচের কণা। কিন্তু পৃথিবীতে পানির উপস্থিতির কারণে এই ধরনের কণার অস্তিত্ব মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছরেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। যা প্রমাণ করে এই পাথর নাসার বানানো নয়, এই পাথর চাঁদেরই। চাঁদের পাথরগুলো গবঃবড়ত্ড়রফ ওসঢ়ধপঃ-এর কারণে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে—ব্যাখ্যা করেন ড. ম্যাককে। এই প্রভাব কোনো গ্রহের পাথরের ওপর তখনই পড়ে যদি ওই গ্রহে কোনো বায়ুমণ্ডল না থাকে। আরও কিছু জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করে প্রমাণ করা হয়, অ্যাপোলো-১১ এর নভোচারীদের সংগৃহীত পাথরগুলো অবশ্যই চাঁদের। উল্লেখ্য, নাসা চন্দ্রাভিযানের ক্ষয় হয়ে যাওয়া ভিডিওচিত্র পুনরুদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কাজে দায়িত্ব নিয়েছেন হলিউডের ‘লাউরি ডিজিটালের’ বিশেষজ্ঞরা।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×