somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পের সাথে গল্প করতে না পারলে গল্প হয়না

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যারা গল্প লেখে তাদের মধ্যে একটা ব্যাপার প্রায়শই ঘটে থাকে। কোন গল্প পড়ার সময় তারা ভাবে, "এটা তো আমার গল্প। আমার চিন্তা ভাবনা। সে কি করে এটা লিখলো?" এই ব্যাপারটা অবশ্য পাঠকদেরও হয়। আবার আরেকটা ব্যাপারও দেখা যায়। তারা লিখতে গিয়ে ভাবে, "আচ্ছা এটা কি আমার গল্প। অন্য কোথাও কি গল্পটা পড়েছি, যা আমার অবচেতন মনে রয়ে গিয়েছিল। আমি অন্য কারো গল্প লিখছি না তো?"
.
এটা খুবই স্বাভাবিক একটা চিন্তাভাবনা। প্রায় সবারই হয়ে থাকে। কিন্তু কেন হয়? তা হয়তো আমরা জানি না। আমার প্রিয় লেখক জুল ভার্নের একটা কথা এই বিষয়ে আমার যথার্থ মনে হয়, "একজন মানুষ যা কল্পনা করে তা বাস্তবে রূপ দেয় অন্যজন।"
.
আমার কাছে বিষয়টাকে আমি নিজের মতো করেই সাজিয়ে নিয়েছি। যারা প্লট বানিয়ে গল্প লিখে তাদের ব্যাপারটা আমি জানিনা। কারণ আমি নিজেও প্লট নিয়ে গল্প লিখতে পারিনা। গল্প আপনাতেই আসে আর আমি লিখে যাই।
.
এই সুযোগে আরেকটা কথা বলে রাখি। আমি টুকটাক কবিতা লিখা শুরু করি ২০০৩/০৪ এর দিকে। যা হয় শুরুর দিকে। দুই লাইনের শেষের শব্দের সাথে বিয়ে দিয়ে ছন্দ কবিতা লেখার চেষ্টা। আমরা সবাই শুরুতেই ভাবি যে ছন্দ দিয়েই কবিতা লিখতে হয়। তবে এই ব্যাপারটা খারাপ না। আমি বলব কেউ এভাবেও যদি লিখে যায় তো লিখতে থাকুক। বাল্যশিক্ষায় আমরা যেমন কাঁচা কাঁচা হাতে অ,আ লিখেছি; লেখালিখির ব্যাপারটাও তেমনই। কাঁচা হাতে লিখতে লিখতেই একটা সময়ে গিয়ে একেক জনের হাতের লেখা একেক রকম হয়। একটা নিজস্বতা দাঁড়িয়ে যায়। গল্প কবিতার ব্যাপারটাও ঠিক তাই। লিখতে লিখতেই এক সময় একটা নিজস্বতা তৈরি হয়ে যায়। কোন লেখা পড়লেই তখন বলে দেওয়া যায় এইটা বোধহয় উনার লেখা।
.
সাথে আরেকটা বিষয় একটু যোগ করি। সেটা হলো- প্রভাব। হাতের লেখা যখন শিখেছিলেন তখন যিনি আপনাকে হাতে ধরিয়ে ধরিয়ে শিখিয়েছেন তাঁর হাতের লেখার লেখার প্রভাবও আপনার মধ্যে চলে আসতে পারে। এটা স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। আবার না আসাটাও স্বাভাবিক। এমনও হতে পারে যে আপনার হাতের লেখা আপনার পছন্দ না। কিন্তু অন্য কারো হাতের লেখা আপনার খুব পছন্দ। আপনি উনাকে অনুসরণ করলেন অনুকরণের মাধ্যমে। দিনের পর দিন উনার হাতের লেখার মতো আপনি চেষ্টা করে গেলেন। এটাকেই বলে চর্চা। এক সময় আপনি সফল ও হলেন। কিন্তু তাও দেখা যাবে উনার মতো একই ভাবে আপনি লিখছেন না। ঐ যে বললাম অনুসরণ করেছিলেন অনুকরণের মাধ্যমে। অনুসরণ করাটায় ক্ষতির কিছু নাই। কারণ অনুসরণ করলেও আপনি কিন্তু ঠিকই আপনার একটা নিজস্বতা তৈরি করতে পেরেছেন। কাউকে আসলে পুরোপুরিভাবেঅনুকরণ করা যায় না। কিন্তু সচেতন ভাবে যদি আপনি তা করে থাকেন এবং এই চেষ্টা অব্যাহত রাখেন তাহলে আপনার আর নিজস্বতা বলে কিছুই থাকবেনা। এমনও দেখা যায় যে অনেকের হাতের লেখার সাথে অনেকেরই মিলে যায়। এটাও স্বাভাবিক একটা ঘটনা। এই গুলো কোনটাই দোষের নয়।
.
ব্যাপারটা এতোক্ষণে অনেকেই ধরে ফেলেছে। লেখালিখি করার ব্যাপারটা আর হাতের লেখা শিখার ব্যাপারটার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। একটা কথা আমাদের গুরুজনরা সব সময়ই বলে থাকেন লেখালিখির ব্যাপারে যে,ভালো লিখতে হলে প্রচুর পড়তে হবে। পড়ার কোন বিকল্প নাই। প্রচুর পড়লে প্রচুর শব্দ আপনার শব্দভাণ্ডারে জমা হবে। সবার কিন্তু আবার সব লিখা পড়তে ভালোও লাগে না। এটা অভিরুচির পার্থক্য। ধরুন আপনার যার লেখা ভাল লাগে তার লেখাই আপনি বেশি পড়লেন । উদাহরণ হিসাবে আমাদের সাহিত্যের রাজপুত্র হুমায়ূন আহমেদকে আনা যায়। যেহেতু উনিই আমাদের দেশের বেশিরভাগ পাঠকের কাছেই পৌঁছে গেছেন। যা বলছিলাম, আপনি হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর গল্প পড়লেন। আপনার ভাল লাগার দিকটা উনার লেখার মাঝে খুঁজে পেয়েছেন বলেই আপনার ভাল লাগার মাত্রাটাও বাড়তে থাকলো। একটা সময়ে গিয়ে আপনি যখন গল্প লিখতে বসলেন আপনার গল্পেও দেখা গেল উনার প্রভাব থাকতেই পারে। এটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। এটা নিয়ে বিচলিত বা মনঃক্ষুণ্ণ হওয়ার কিছুই নেই। অন্যরাও হয়তো আপনার গল্প পড়ে বলছেন, "আরে এটাতো হুমায়ূন আহমেদের লেখার মতো। উনাকে কপি করে লেখা।" কান দিবেন না। তাদের কথায় মোটেও কান দিবেন না। আপনি লিখে যান। আপনার একটা নিজস্বতা দাঁড়িয়ে যাবে। যদি না দাঁড়ায় আর যদি আপনি সচেতন ভাবে হুমায়ূন আহমেদকে অনুকরণ না করে থাকেন তাহলে বুঝবেন; ঐযে বললাম অনেকের হাতের লেখার সাথে অনেকের মিল থাকে। তেমনি আপনার লেখার ধরণটাও হুমায়ূন আহমেদ এর মতো। কিন্তু? কিন্তু যদি আপনি সচেতন ভাবে হুমায়ূন আহমেদকে অনুকরণ করে থাকেন তাহলে সময়ই আপনাকে সাহিত্য জগৎ থেকে ছুড়ে ফেলে দিবে। আপনার গল্পে কার প্রভাব আছে এটা মোটেও মুখ্য নয়। প্রভাব কাটিয়ে লেখক একদিন নিজস্বতায় এসে দাঁড়ায়, দাঁড়াবেই।
.
এই সুযোগ নিয়ে যে কথা বলতে চেয়েছিলাম সেটা বলে ফেলি। আমি গল্প লিখছি মাত্র দুই বছর এক মাস হচ্ছে। অনেক গ্রুপে গল্প পোস্ট করায় অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীও পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ্‌। কেমন লিখি বা কি লিখি সেটার বিচার আমি নিজে করতে চাই না। কিন্তু অনেকেই কেন জানি না আমাকে প্রশ্ন করে যে, গল্প কি করে লিখি বা গল্পের প্লট গুলো কিভাবে সাজাই; মোটামুটি এই বিষয়ের উপরেই বিভিন্ন রকম প্রশ্ন। তো সবাইকেই আমি একটাই উত্তর দেই, "আমি গল্প লিখি না। গল্প আমার কাছে আসে। আমি শুধু টাইপ করে যাই। গল্পই ঠিক করে যে কি করে বর্ণমালা দিয়ে নিজেকে গড়বে। কতোখানি হবে তার আকার, বিস্তার। কি হবে তার শিরোনাম। আমি কেবল টাইপ করে যাই। আর এই টাইপ করার সময় আমি একটা মিনিটের জন্যও থামিনা। কেউ সেই সময় আমাকে দেখলে ভাববে আমি মনে হয় মুখস্ত করে রেখেছিলাম। তাই এক নাগারে টাইপ করে যাচ্ছি।" আমি বার বার টাইপ করার কথা এই কারণেই বলছি যে আমার দুই একটা ছাড়া সব গল্পই আমি সেলফোনে লিখেছি। কাগজ কলমে না। তো, গল্প বা কবিতা আমার মাঝে এলেই আমি লিখি। ভেবে কিংবা প্লট সাজিয়ে লিখতে পারি না। অনেকেই এই জবাবে সন্তুষ্ট হন, অনেকেই হন না। কেউ বা ব্যাপারটা বুঝতেই পারেন না যে গল্প কি করে ধরা দেয়।
.
কোন একটা শব্দ বা হঠাৎ মনে চলে আসা একটা লাইন থেকেই আমি একটা গল্প বা কবিতা লিখি। যেমন, মাধবীলতা। এই শব্দটার মধ্যে আমি অনেক রকম গল্পের, কবিতার গন্ধ পাই। সময়ের বিভিন্নতায় তার আবেদন থাকে ভিন্ন। তাই লিখলেও ভিন্ন ভিন্ন লিখাই হবে। কয়েকমাস আগে আমার এক বড় আপুর সাথে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলছিলাম। যতটুকু মনে পরে উনাকেও এমনটাই বলছিলাম যখন যা মাথায় আসে তা নিয়েই গল্প লিখতে হয়। উনি আমাকে বললেন, "মাথায় কোন গল্প আসছে না কি যে করি।" আমি বললাম এইতো আপু চলে আসছে। এইটাই তোমার গল্পের প্রথম লাইন। এরপরে লাইনও লিখে ফেলো। তো আপু তখন গাড়িতে বসেছিলেন। বাসায় যাচ্ছিলেন। আমাকে বললেন, "গাড়িতে বসে আছি। বাসায় যাচ্ছি।" আমি বললাম, "এইতো আপু এটা তোমার গল্পের দ্বিতীয় লাইন। এরপরে লিখে ফেল। তোমার মাথায় কোন গল্প আসছে না, তুমি গাড়িতে বসে আছো বাসায় যাচ্ছো।" আপু বলল আমাকে দিয়ে হবে না, তুই লেখ। তো আমিই এরপরে লিখলাম অণুগল্পটা "ট্রাফিকজ্যামের গল্প" শিরোনামে।
.
গল্প হলো আমার কাছে হলো দু'টো মানুষের মধ্যে কথোপকথনের মতো। ধরুন আপনার সাথে আমি আড্ডা দিচ্ছি। আমরা কি কেউ বলতে পারবো আমাদের আড্ডাটা আজ কোথায় গিয়ে শেষ হবে। বা পাঁচ মিনিট পরে আমরা কি নিয়ে কথা বলব। এটা জানাটা অসম্ভব। গল্পও তাই। গল্প লিখার সময় আপনাকেও গল্পের সাথেই গল্প করতে হবে। তুমুল গল্প। যেন এই পৃথিবীতে আর কেউই নাই। আপনি আর গল্পই শুধু আছেন। লাইনের পরে লাইনে গল্প গড়াবে। আড্ডার মতো গল্পও এক সময় থেমে যাবে। তবে একটা এজেন্ডা নিয়ে যেমন আড্ডা চালানো যায় তেমনি চিন্তাভাবনায় একটা গল্প পুষেও গল্প লিখা যায়। আপনার মাথায় হয়তো গল্পের শেষটাই মাথায় এলো আগে যে, হ্যাঁ ঠিক এমন একটা গল্প লিখতে হবে যার শেষটা হবে এমন। তখন আপনার গল্পের পুরো আয়োজনটাই থাকবে গল্পের এই শেষ অংশে আসার জন্য। এভাবে গল্পের শুরু বা মাঝখানের কিছুও আপনার মাথায় আসতে পারে। মোট কথা যে কোনো লেখার সাথেই আপনাকে জমিয়ে গল্প করতে হবে। গল্পও যেন আপনার সাথে গল্প করে মজা পায়। আপনাদের কথোপকথনে যদি আন্তরিকতা না থাকে তাহলে সেই গল্পটা হয়ে যাবে বোরিং। হয়না এমন, কিছু গল্প আছে ঠেলে ঠেলেও আগানো যায়না। কারণ গল্পের সাথে গল্পকারের গল্পটা জমেনি।
.
অনেক কথা বলে ফেললাম কথার পিঠে কথায়। এবার একেবারে মূল কথায় চলে যাই। কেন আমাদের মনে হয় যে, যেই গল্প পড়ছি ,সেটা কি অন্য কোথাও পড়েছি কিনা বা যা লিখছি ,সেটা কি অন্য কোথাও আমি শুনেছি কিনা।
.
আমার যেটা মনে হয় ব্যাপারটা হলো বৃষ্টির মতো।যেমন বৃষ্টি এলে বৃষ্টির প্রথম ফোটা সেটাতেই পরে যেটা সবচেয়ে উপরে থাকে। পাহাড় থাকলে পাহাড়ে কিংবা গাছে ,ছাদে, ঘাসে বা মাটিতে । গল্প ও তেমনি যখন পৃথিবীতে নেমে আসে বৃষ্টির মতো করে সেও গল্পকারের ভাবনাকে গিয়ে ছুঁয়ে দেয়। আচানক আসা সেই ভাবনাটা যদি সেই গল্পকার লিখে তো একটা গল্প দাঁড়িয়ে গেল। আর সে এটাকে তাড়িয়ে দিলে সেটা অন্য কারো কাছে চলে যায়। আবার কারো কারো ঘুমে চোখ লেগে আসার মুহূর্তে গল্পটা গল্পকারের দরজায় কড়া নাড়ে। গল্পকার ভাবেন, "প্লটটা তো দারুন। এখন না, সকালে ঘুম থেকে উঠে লিখবো।" বিশ্বাস করুন সেই গল্পকারের সেই প্লটের বিন্দুবিসর্গ কিছুই মনে থাকবেনা ঘুম থেকে উঠার পরে। কারণ গল্প তো তার জন্য অপেক্ষা করবে না। সে অন্যের কাছে চলে যাবে। সেই গল্প একদিন যখন প্রকাশ পাবে ,সেই ঘুমকাতুরে লেখক সেই গল্প পড়ার সময়, তার মনেও সেই প্রশ্নই শুধু খেলবে, "এই গল্পটা তো আমার গল্প। আমার চিন্তা ভাবনা। উনি লিখলেন কি করে।" গল্পটা পড়ার সময়ই তার সব মনে পরে যাবে।
.
এভাবে প্রত্যেকটা ভাবনাকেই সবসময় যখন কেউ গুরুত্ব দেয়, নিজের করে নেয় মনের অজান্তেই তার নিজস্ব একটা উঁচ্চ অবস্থান তৈরী হয় আর সব গল্প তার দিকেই ধেয়ে আসে ।
.
তো গল্প যখন আসবে সেটাকে কখনোই ফিরিয়ে দেবেন না। আদর করে ঘরে এনে বসাবেন। আপ্যায়ন করবেন বর্ণমালা দিয়ে। বাক্য দিয়ে তার সাথে গল্প করে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করুন। সে তৈরি হয়ে গেলে তার একটা নাম দিন। একজন মানুষের প্রথম পরিচয়ই হলো তার নাম। যেই গল্পের জন্ম হলো আপনার হাতে তার নামটাও আপনি দিন। আপনি দিতে না পারলে যোগ্য মানুষ খুঁজে বের করুন যিনি ভালো একটা নাম দিতে পারবেন। ঐ যে হয় না বাচ্চার নাম নানা-নানি বা দাদা-দাদিরা দেন অমন আরকি। তবে অবশ্যই নামটা আপনারই মন মতো হতে হবে ।
.
গল্প লিখুন প্রাণ খুলে। মনকে ছেড়ে দিয়ে। গল্প ভাল হচ্ছে নাকি খারাপ হচ্ছে সেটা কখনোই আপনি ভাবতে যাবেন না। ভাল খারাপের হিসেব পাঠক সমালোচকরাও সবসময় সঠিক সময়ে করতে পারেন নি। পারবেও না। সময় নিজেই হলো এর স্থায়িত্ব নির্ধারক। জীবনানন্দ দাশ, কাফকা- এদেরকে পাঠকরা মূল্যায়ন করতে পারেনি তাদের সময়কালে। আপনিও লিখে যান মন খুলে। কেউ যদি খারাপ লিখে তো লিখুক। তাকে আরো লিখতে উৎসাহিত করুন। সে লেখক হওয়ার যোগ্য হলে সে এক সময় তার ভুল আপনাতেই বুঝতে পারবে। তবে কৌশলে তার মনে আঘাত না দিয়ে বুঝিয়ে বলে দিন কোথায় তার দুর্বলতা। এমন ভাবে বলুন যেন আপনার কথা শুনে সে আপনাকে তার শুভাকাঙ্ক্ষী ভাবে। বলা তো যায় না সেই হয়তো একদিন একজন বড় লেখক হয়ে যাবেন আর সেইদিন শ্রদ্ধার সাথে আপনার কথা সরণ করবেন।
.
সমালোচনা লেখালিখির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এই ব্যাপারে আমার জ্ঞান সীমিত। আজকাল অনেককেই দেখা যায় যে সমালোচনাকে ভুল ভাবে সঙ্গায়ীত করে থাকেন। আমি যা বুঝি তাই লিখছি। আমি যদি ভুল ভেবে থাকি তাহলে আমার ভুলটা ধরিয়ে দেবেন, আমি নিজেকে শুধরে নেবো। কারো কোন লেখাকে খারাপ বলাটাকেই অনেকে ভেবে থাকেন যে সমালোচনা করা। অনেকে বেশ গাল ভরে এই কথাটাও বলে থাকেন যে, "আমি তো সমালোচনা করি। কিন্তু অনেকে সেটা নিতে পারেন না।" যাকে এই কথা বলতে দেখবেন চোখ বন্ধ করে আপনি বলে দিতে পারবেন সে আসলে সমালোচনার মোড়কে নিন্দা করেছে। কথা প্রসঙ্গেই বলছি, গ্রাফিক্স এর উপরে ডিপ্লোমা করার সময় আমাদের কিছু ব্যাপার শিখানো হয়েছিলো। যেমন, আমাদের কিছু ডিজাইন দেখিয়ে বলা হতো ডিজাইনটা কেমন। ভাল হলে বলতে হতো কেন ভাল। বুঝিয়ে দিতে হতো কেন সেটা ভাল লেগেছে। খারাপ হলেও বলতে হতো কেন খারাপ লেগেছে আর কি করলে ডিজাইনটা ভাল হতে পারতো। তো, কোন লেখার সমালোচনাটাও অনেকটা এমনই হওয়া উচিৎ। লেখাটা খারাপ হলে কেন খারাপ হলো আর কি করলে সেটা ভাল একটা লেখা হয়ে দাঁড়াবে সেটাও বলে দিতে হবে। কোন গল্প ভাল লাগলে কেন ভাল লাগলো সেটাও কিন্তু সমালোচনা। এটা ভাবার কোন কারণ নাই যে লেখার নেতিবাচক দিক নিয়ে কথা বলাটাই সমালোচনা। সমালোচনা হলো গল্পের গঠনমূলক আলোচনা। আর এই আলোচনাটা করার জন্য আপনার নিজের জ্ঞানের বিস্তারের লেভেলটাও উন্নত হতে হবে। যদি তা আপনার না থাকে আপনি বড়জোড় পাঠ প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। সেই প্রতিক্রিয়াও সমালোচনার একটা অংশ। কিন্তু সমালোচনা আরো গভীরের কিছু। আর সবাইকে সমালোচক হতে হবে এমন কোন কথা নেই।
.
লেখালিখি করলে বা অনেক বেশি পড়লেই কেউ সমালোচক হতে পারেন না। সমালোচক হওয়া এতো সস্তা না যে চাইলেই হয়ে গেলেন বা কিছু একটা বললেই হয়ে গেলেন, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। কিন্তু পাঠ প্রতিক্রিয়ার সাথে আপনি কিছু কথা জুড়ে দিতে পারেন। গল্পের বিস্তার নিয়ে বলুন। লেখকের গল্পটা আপনার কেমন লেগেছে তা মোলায়েম ভাবে বলুন। তিনি উৎসাহ পাবেন। আপনার সামান্য এই উৎসাহই তাকে অনেক বড় লেখক বানিয়ে দিতে পারে। যাই লিখুক সে। খারাপ লিখলে তাকে বুঝিয়ে দেন। তার একজন বন্ধু হয়ে উঠুন। সমালোচনার নামে নিন্দা ঝেড়ে নিজেকে "একটা কিছু" মনে করলে দিন শেষে আপনি ঐ "একটা কিছু" হয়েই এক কোণায় পরে থাকবেন।
.
লেখালিখির ক্ষেত্রে একটা ব্যাপারে হয়তো অনেকেই আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন। কিন্তু আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি কথাটা। যদি সম্ভব হয় সব সময় কাগজে কলমে লিখুন। সেলফোনে কিংবা কম্পিউটারে নয়। অনেকেই ভেবে থাকেন যে কাগজে লিখার পরে আবার তো কম্পোজ করতেই হবে এরচেয়ে কম্পিউটারে/সেলফোনে লেখাই ভাল। ঝামেলা কম। কিন্তু কাগজে কলমে লেখার যে একটা আমেজ, যে মান তা আমি টাইপ করে পাইনি। আমি যদি আমার গল্প গুলো কাগজে কলমে লিখতাম নিশ্চয়ই সেগুলো অন্যরকম হতো। যদি সম্ভব হয়তো কাগজে কলমেই লিখুন।
.
আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীর সেরা গল্পটি এখনো লেখা হয়নি। হয়তো গল্পটি এখনো ঘুরছে এক গল্পকারের কাছ থেকে আরেক গল্পকারের কাছে বা এমন একজন কে খুঁজছে যাকে সে গল্প করে গড়ে তুলবে। হয়তো সে একজন সামান্য পাঠক। কিন্তু কোন একসময় তার কাছে গল্প চলে যেতে পারে। গল্প যে শুধু গল্পকার লিখে তা নয়। গল্পও বেশিরভাগ সময় কাউকে গল্পকার বানিয়ে দেয়। যে গল্পটি আপনার কাছে এসেছে তা হয়তো সামান্য মনে হতে পারে । তুচ্ছ জ্ঞান করে শুঁয়োপোকার মতো সেই গল্পকে কেউ হয়তো ঘরে তুলে নেয়নি। আপনি তুলে নেন। যদি যত্ন করে তাকে আপন করে গড়ে তুলতে পারেন তাহলে সে প্রজাপতি হয়ে ডানা মেলবেই রোদ্দুরে। আপনার বাড়ির আঙ্গিনা যখন প্রজাপতির বাহারি রঙের আভায় ভরে যাবে, পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মানুষ কিন্তু তাকাবেই আপনার বাড়ির দিকে, আপনার দিকে।
.
হ্যাঁ ,আপনার দিকেই।

২৮০২১৭

#শাকিল_রনির_পোস্ট_সমগ্র
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৫২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×