বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে আজ আমার উপলব্ধি, ৭ই মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতায় উজ্জীবিত করেছিল, কিন্ত এটি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতন্ত্রে উজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর তাই বর্তমান বাংলাদেশ পেশি শক্তি নির্ভর, বন্দুক নির্ভর দখলদার রাজনীতির কাছে পরাভূত।
আমি রাজনিতিজীবি নই কিন্তু রাজনীতি সচেতন মানুষ। আমার মধ্যে রাজনীতি সচেতনতা আসে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শুনে। ১৯৮৬ সালে আমি তখন চাটখিল হাইস্কুলের ৮ম শ্রেনীর ছাত্র। চাটখিল দক্ষিন বাজারের মুখে বেলায়েত (সম্ভবত) ভাইয়ের লন্ড্রি দোকানে এই ভাষণের ক্যাসেটটি প্রায়ই বাজানো হত। এই ভাষণটির প্রায় প্রতিটি কথাই আমার মুখস্ত ছিল তখন। একদিন, বেলায়েত ভাই থেকে ভাষণের ক্যাসেটটি এক সপ্তাহের জন্যে চেয়ে নিই নিজে বাড়িতে বসে শুনব বলে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মূল শব্দটি ছিল, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।
৭ই মার্চের ভাষণই ছিল বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পথ নির্দেশক। এটি বাংলাদেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল সময়ের প্রয়োজনে। সে সময়ে ৪০ ঊর্ধ্ব প্রায় সব মানুষই ছিলেন কোন না কোন ভাবে ১৯৪৫ সালের পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে জড়িত বা সমর্থক। মাত্র ২৩ বছর আগে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে যে রাষ্ট্রটি তারা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যে রাষ্ট্রের অনেক কিছুই তখনো অপূর্ণ সে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, সে রাষ্ট্রটিকে ভেঙ্গে নতুন স্বাধীন দেশের আন্দোলন করা, এটি ছিল অনেক বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বংবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল দিক নির্দেশনা মূলক। যারা তখনও পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান খুজছিলেন, পাকিস্তানের মোহে বিভোর ছিলেন, তাদেরকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দিক্ষা দিতে, প্রণোদিত করতে এ ভাষণ ম্যজিকের মত কাজ করেছিল। এই ভাষণ গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়, মুক্তির স্বপ্ন, অর্থনৈতিক মুক্তি, জুলুম নির্যাতন আর স্বাধিকারের প্রশ্নে এক অনন্য মাইল ফলক।
কিন্তু বর্তমান আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ৭ই মার্চের ভাষণের উল্টো স্রোত। অনেকে বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ সরকার বাকশালের আধুনিক সংস্করণ। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ফিরে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত বাকশালের রাজনীতির কুশলী বাস্তবায়নে। ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যান্য রাজনৈতিক দল ভেঙে দিয়ে 'বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ' (বাকশাল) নামে জাতীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন। বলা হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে যে স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন, ১৯৭৫ সালের ২৪ই ফেব্রুয়ারি তিনি সে স্বপ্নের কবর রচনা করেছেন। স্বাধীনতা পূর্ব বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীনতা উত্তর বঙ্গবন্ধু মুদ্রার এপিট ওপিট। স্বাধীনতার পূর্বে বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রধান রাজনৈতিক নেতা, যিনি বাংলাদেশের মানুষের আবেগের পারদ সফল ভাবে উস্কে দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রানিত করেছেন। আর, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু হলেন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি - তিনি মানুষের অধিকার হরণ করলেন, অন্যায্যতার কাছে নিজেকে সপে দিলেন।
আজ ৭ই মার্চে প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে, দখল ও জুলুমতন্ত্রের অবসান ঘটাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৭:৩১