রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীলতা শুধুমাত্র রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ এখনও ক্ষমতায় থাকত। রাজনীতি গড়ে উঠে গণমানুষের পারসেপসনের উপর ভিত্তি করে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির বৈঠকের পর একটি বিষয় পরিস্কার, বৈঠকের পরিবেশ অনেকটাই ফরমাল বা আনুষ্টানিক ছিল। বর্তমান চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষপটকে সামনে রেখে প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপির পক্ষ থেকে লিখিত দাবীনামা দেয়া প্রমান করে এ বৈঠক খোলা মনে ছিলনা। বিএনপির তিনটি দাবী মূলত সেনা প্রধানের দরবার হলে দেয়া ভাষণের অনুকরণ:
১) ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ২) সংস্কার এবং বিচার চলমান প্রক্রিয়া, ৩) দুই ছাত্র উপদেষ্টা এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ।
সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে বিএনপি নেতাদের বিশেষ করে সালাউদ্দিন সাহেব এবং আমির খসরু সাহেবের বডি ল্যাংগুয়েজ ছিল কিছুটা আক্রমনাত্নক।
এতে এখন অনেকটাই পরিস্কার বিএনপি, সেনাপ্রধান, এবং বিদেশী একটি এজেন্সির মধ্যে সমাঝোতা হয়েছে। এবং, বর্তমান এই সরকারকে টিকিয়ে রাখা বিএনপির প্রায়োরিটি নয়। তবে সরকার যদি টিকে থাকে বিএনপি তাকে ছাপের মধ্যে রাখবে। অরেকটি বিষয় পরিষ্কার বিএনপি জাতীয় সরকার মানবে না। এসরকারকে টিকিয়ে রাখা এখন অনেকটা জামাত-এনসিপিের প্রায়োরিটি।
হঠাৎ কেন এই সংকট? এর মূলে রয়েছে তিনটি কারণ: ১) আওয়ামীলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কারণে রাজনৈতিক ল্যান্ডস্ক্যেইপের পরিবর্তনের সম্ভাবনা রোধ করা ২) প্রভাবশালী শিল্পপতিদের স্বার্থরক্ষা ৩) বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঠেকানো।
৫ই আগষ্ট ২৪ এর পর বিগত ১০ মাসে বাংলাদেশের প্রসাষণ ব্যবস্থায় তেমন বড় পরিবর্তন আসেনি, শুধু কিছু ক্ষেত্রে বিএনপি এবং জামাতের নিয়োগ ব্যাতিত। প্রসাষনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিএনপি, এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে জামাত বিএনপি প্রায় সমভাবে পদগুলো বাগিয়ে নিয়েছে, এর বাহিরে সরকার ব্যবস্থায় তেমন পরিবর্তন আসেনি। সাম্প্রতিক কালে উপদেষ্টা আসিফ স্হানীয় সরকারে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিলেন, বিএনপি এটিকে হুমকি হিসাবে দেখছে।
যেহেতু বিএনপি মধ্যম ডানপন্থি ( ডানপন্থিদের বামে, বামপন্থিদের ডানে) রাজনীতি করে এবং বিএনপির মাঝে প্রাক্তন বাম নেতারা প্রতিষ্টিত, বিএনপি তাই চায়না আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক দৃষ্টপটের বাহিরে চলে যাক। বিএনপি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে দূর্বল আওয়ামীলীগকে চায়। বিএনপি মনে করে আওয়ামীলীগের অনুপস্থিতিতে ডানপন্থি রাজনীতির নেতৃত্ব জামাত-এনসিপি-এবি পার্টি বা এমন সহায়ক জোটের কাছে চলে যেতে পারে। আর তাহলে বিএনপি রাজনৈতিক ভাবে অপ্রাসংগিক হয়ে যাবে। এই সমীকরণ থেকেই বিএনপি আওয়ামীলিগের নিষিদ্ধ চায়না। আর এর ভিত্তিতেই সেনাপ্রধান, বিএনপি এবং পার্শ্ববর্তী একটি দেশের মধ্যে সমাঝোতা হয়েছে বলে মনে করি। এই সমীকরণে অবশ্যই বিএনপির তৃণমূল এবং নেতৃবৃন্দের এক অংশ অন্তর্ভুক্ত নয়। আওয়ামীলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কারণে রাজনৈতিক ল্যান্ডস্ক্যেইপের পরিবর্তনের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তাকে রোধ করার জন্যই পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ৫টি বড় ব্যবসায়ী গোষ্টি যারা দানবীয় হয়ে উঠেছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তারা প্রচন্ড চাপে আছে। রাজনৈতিক সরকার আসলে এই চাপ তাদের জন্যে অনেকাংশে কমে যাবে, কারণ বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজৈনৈতিক নেতাদের পকেট ভরার মাধ্যমে তারা সহজেই তাদের উপর চাপ কমাতে পারবেন, যেমন এসআলমের জন্যে আছ সালা উদ্দীন আর আমির খসরু।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১১:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


