চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর তিনবারের নির্বাচিত টানা প্রায় ১৭ বছর মেয়রের দ্বায়িত্ব পালন করা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ২০১০ এর নির্বাচনে ভরাডুবির সর্বশেষ চিত্রঃ
নাগরিক কমিটি মনোনীত এবং আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চোধুরীর প্রাপ্ত ভোট - ৩,৮৩,৬১৭ চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন মনোনীত এবং বিএনপি সমর্থিত মঞ্জুর আলমের প্রাপ্ত ভোট - ৪,৭৯,১৭৫, ব্যবধান ৯৫,৫৪৫। আজ সকালে রিটার্নিং অফিসার জেসমিন টুলি মঞ্জুর আলমকে বেসরকারীভাবে বিজয়ী ঘোষনা করেন।
অর্থাৎ চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আপাতঃ দৃষ্টিতে মহিউদ্দিন যুগের অবসান হলো। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই, চট্টগ্রামের রাজনীতির নিয়ন্ত্রনকর্তা বনে যাওয়া মহিউদ্দিন ক্রমশই সেচ্ছাচারী হয়ে উঠছিলেন। বিশেষ করে স্থানীয় আওয়ামীলীগের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি এবং দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশ না মানা সহ, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ন্ত্রনে নিয়ম বহির্ভুত হস্তক্ষেপ ইত্যাদি অভিযোগ ছিল মহিউদ্দিনের বিরূদ্ধে।
যদিও নির্বাচনী প্রাচরনার সময় এবারও জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন তিনবারের নির্বাচিত মেয়র মহিউদ্দিন এবং আত্নবিশ্বাসী ছিলেন তার প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী মঞ্জুর আলমকে প্রতিদ্বন্দী হিসেবে পেয়ে। উল্ল্যেখ্য, মঞ্জুর আলম আওয়ামী সমর্থিত কাউন্সিলর ছিলেন এবং মহিউদ্দিনের অবর্তমানে প্রায় ২২ বারের মতন ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন, এতে করে অনুমান করা যায় তিনি মহিউদ্দিনের যথেষ্ট ঘনিষ্ট ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি গত সাধারন নির্বাচনে স্বতন্ত্র পদে এমপি নির্বাচন করেন এবং মেয়র পদে নির্বাচন করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন। বিএনপির দলীয় কোন্দলের পাকে-চক্রে তিনি মেয়র পদে মহিউদ্দিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দী হিসেবে মনোনয়ন পান। মহিউদ্দিনও যথেষ্ট আত্নবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন যে, এই নবীন মুখ এর সাথে প্রতিদ্বন্দীতা করে তিনি অতি সহজেই নির্বাচনে জয়লাভ করবেন। কিন্তু গতকাল ভোটের দিন মহিউদ্দিনের সব হিসেব নিকেশ পাল্টে যায়।
অনেকেই অনেক কথা বলছেন, অনেক বিশ্লেষন। আমার মতে এখানে কিছু স্থানীয় ইস্যু ফ্যাক্ট হিসেবে কাজ করেছে। কেন তার এই ভরাডুবি সে বিষয়ে আমার কিছু ব্যক্তিগত বিশ্লেষনঃ
১। মহিউদ্দিনের অতিরিক্ত স্বেচ্ছাচারিতা ও আত্নবিশ্বাস, সাধারন জনগন পছন্দ করেন নি। ব্যক্তি মহিউদ্দিনই প্রার্থী মহিউদ্দিনকে ডুবিয়েছে। এখানে আওয়ামীলীগ কোন ফ্যাক্ট নয়।
২। আওয়ামী সমর্থক ভোটাররা ভোটদানে উৎসাহী ছিলেন না, তাও মহিউদ্দিনের বিগত কয়েক বছরের স্বেচ্ছাচারী আচরনের কারনে। এদের অনেকেই আবার মঞ্জুরকে ভোট দিয়েছেন।
৩। মঞ্জুর অবশ্যই প্রার্থী হিসেবে যেকোন বিএনপি নেতা (নোমান, খসরু, নাসির) থেকে এগিয়ে ছিলেন, এখনো অনেকের কাছে তিনি আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে পরিচিত।
৪। সবচেয়ে বড় ফ্যাক্ট এবার প্রায় ৪ লাখ এর উপরে নতুন ভোটার এই হিসেব নিকেষে প্রার্থক্য গড়ে দিয়েছে। তারা প্রকৃত অর্থেই সচেতন।
তবে আমি মনে করি, এই নির্বাচন প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের রাজনীতিবিদের জন্যে একটা শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরী করেছে। জনগণ আগের থেকে এখন অনেক বেশী সচেতন, তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে জানে। আর অবশ্যই চট্টগ্রাম বন্দর এবং আওয়ামীলীগ মহিউদ্দিনের প্রভাব মুক্ত হলো এবং এটাই আশার কথা!
লেখাটি আমার ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১০ বিকাল ৩:৪০