somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঐ দূর পাহাড়ে লোকালয় ছেড়ে - মন হারিয়ে ছিলাম রাঙ্গামাটির রং এ

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হুমায়ুন আহমেদকে আমরা যেভাবেই বিচার করিনা কেন এখনও আমাদের দেশের লেখকদের মাঝে একমাত্র তারই ক্ষমতা রয়েছে পাঠককে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবার। বই পড়তে খুব বেশী বেগ পেতে হয়না, হালকা ঢংএ শেষ পর্যন্ত গিয়ে শেষে একটা মন খারাপ করা সমাপ্তি, অধিকাংশ বই এমনই, তবু একবার শুরু করলে শেষ না করে ভাল লাগেনা- পড়া শেষে যায় বলিনা কেন। শুভলং যাবার পথে কাপ্তাই হ্রদের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগের পাশাপাশি পড়ছিলাম "যদিও সন্ধ্যা " বইটি, কেমন আয়েশি বিলাসি ভাব এসে গিয়েছিল, কিন্তু লেখক যথারিতী সে মন খারাপ করা দিয়েই শেষ করলেন।/:)

বইটি নিয়ে এসে ছিলাম ওলির মামার বাসা থেকে। রাতে পুরো শেষ করতে পারিনি , তাই যাবার সময় ফেরৎ দিয়ে যাব বলে নিয়ে এসেছি। রাঙ্গামাটি যেতে যেতে ভাবছিলাম কোন হোটেলে সিট পাব কিনা, পেলে কেমন হয়। বাস থেকে নেমে বেনজির আমাদের এক পাহাড়ি বন্ধুকে ফোন দিল কোন হোটেল ম্যানেজ করে দিতে পারবে কিনা। সে ম্যানেজ ও করে দিল। ওলি বলল দাঁড়া না তোদের কে ফাইভ স্টার হোটেলের ব্যাবস্হা করে দিচ্ছি। কিছুক্ষন পরে ওলি এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল আমার মামা। বুঝে নিলাম ঘটনা কি। ব্যাগ নিয়ে মামার বাসায় হাজির আমরা। হাত মুখ ধুয়েই বিশাল খানাদানা। বের হয়ে আমরা লেকের ধারে কিছুক্ষন বসলাম। তারপর শহরে একটা ঘুরান দিলাম।রাতে আরেক দফা বিশাল খাওয়া দাওয়া। আমরা খেয়েই টায়ার্ড হয়ে গেলাম।

বিবাহিত বন্ধুরা বউ ছাড়া ট্যুরে যাবে এই কথা বিশ্বাস করার কোন মানে নাই। হাজার হলেও কে চায় ঘরের শান্তি নষ্ট করতে। রাতে আরজু ফোন দিল আমি সকালে তোদের সাথে যোগ দিব। জামিল ও তাই জানাল। আমরা প্ল্যান করেছিলাম খুব ভোরে উঠে বোট ভাড়া করে শুভলং যাব। ওদের বললাম ঠিক আছে তোরা রাতে আরেকবার জানা, শিউর কর, তাহলে আমরা সকালে তোরা না আসা পর্যন্ত ওয়েট করব।আমাদের বিশ্বাস কে সত্য পরিণত করে তারা মধ্যরাতে জানাল আসতে পারবেনা। :D

রাতে ঝুম বৃষ্টিতে টিনের চালের উপর ঝমঝম শব্দ। কতদিন এমনটি শোনা হয়নি। ঝমঝম শব্দ আর হাতে হুমায়ুন আহমেদ। ওলির যন্ত্রনায় বেশিক্ষন পড়তে পারলামনা। আমাদের ভোর হল সকাল নয়টায়।:-*

আরেক দফা ভরপেট খেয়ে আমরা পৌঁছালাম ঝুলন্ত ব্রীজে, রাঙ্গামাটির ট্রেড মার্ক। ওপারে কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করে বোট ভাড়া করলাম শুভলং এর উদ্দশ্যে।




চল্লিশ হাজার আদিবাসির চোখের জলে ভরে থাকা কাপ্তাই হ্রদের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে আমরা এগিয়ে চলি। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া জমিদারের পুরোনি বাড়ির অস্তিত্ব জানা গেল পতাকা উড়ানো একটা এলাকা দেখে।


মিঠা পানির মাছের একটা বিশাল জলাধার এই হ্রদ। জেলেরা মাছ ধরছে।




প্রায় দুঘন্টার যাত্রা শেষে পৌঁছালাম শুভলং।
ছোট্ট একটা ঝিরিমুখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তেমন শক্তিশালী নয় এই ঝরনা। তবুও পাহাড়ের বুক চিড়ে নেমে আসা এই জলধারা দেখতে ভালই লাগবে। দুপাশের আঁকাবাঁকা পাহাড়ি জলপথ ভাল লাগা আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দেবে। ঝর্না দেখে ফিরতি পথ পেদা টিং টিং। হ্রদের মাঝের পাহাড়ি দ্বীপে তৈরি হয়েছে এই রেস্তোরা। পেদা টিং টিং মানে পেট ভরে খাওয়া। যদিও পর্যটকের ভীড়ে সেখানে আমাদের আর খাওয়া হয়নি।





































মনটা যখন খুব ভাল থাকে অথবা অনেক বেশী রিফ্রেশ থাকি তখন কেন জানি মন খারাপ নিয়ে লেখা গান গুলি শুনতে বেশ ভালই লাগে। দুপাশ দেখতে দেখতে গুংগুন করছিলাম সানী জুবায়ের এর গান-

আজ আমার মন ভাল নেই
বসছেনা মন কিছুতেই
খোলা জানালায় দাঁড়িয়ে
সুদূর আকাশ থেকে
কিছু রং এনে দাওনা
...........................................
যদিও চারিদিকে রং এর কোন কমতি নেই। তবুও আরও আরও ছুটে যেতে চায় মন.....হারাতে চায় নতুন দিগন্তে।



সেখান থেকে ফিরে রাজবাড়ী।রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের একমাত্র জায়গা যেখানে রিক্সা চলেনা। ফোরস্ট্রোক ই ভরসা , যদিও ভাড়া অনেক বেশী, তাদের দাবি অকটেনে চলে তাই ভাড়া বেশী।

রাজা দেবাশীষ রায় এর বাড়ী। পাহাড়ের বুকে ওয়াল ঘেরা টিনের ছাদ, যদিও এসি আছে সব রুমে। কদাচিৎ আসেন বিভিন্ন উৎসবে। তার বাবা রাজা ত্রিদিব রায় কিন্তু একজন স্বাধীনতা বিরোধি X(

সেখান থেকে খেয়া নৌকায় করে আমাদের যাত্রা বৌদ্ধবিহার। স্বর্গের সাত স্তর বিশিষ্ট একটা মডেল আছে বৌদ্ধবিহারে , আছে বুদ্ধের পদচিহ্নের ছাপ।



সেখান থেকে মামার দোকানে ফিরে আসলাম। বইটা ফেরৎ দিয়ে বাসের টিকেট কাটলাম। পনের মিনিট আছে। এমন সময় মামার ফোন তারা বিকালের নাস্তা রেডী করেছেন। বাধ্য করলেন টিকেট ফেরৎ দিতে। কি আর করা আবার ও এক দফা ভরপেট খাওয়া B-)
পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা পাড়ি দিয়ে অবশেষে নীড়ে ফেরা।

ঘরে ঢুকতেই আম্মুর হুঙ্কার তোমরা দুই ভাইত দেখি পুরা উড়নচন্ডী হয়ে গেছ। ঈদের পরদিন একজন সাত সকালে যায় সাগরে আরেকজন যায় পাহাড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৪
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×