somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈশ্বর বিহীন হিমু ও মিসির আলি - (৪)

২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুখোমুখি বসে আছেন মিসির আলি এবং রুপা । রুপা চোখ বড় বড় করে মিসির আলিকে দেখছে। মিসির আলি একমনে সিগারেট টেনে চলেছেন। নেশা টেশা কিছু না, কেন জানি তার টানতে ভাল লাগছে, তাই তিনি একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছেন। রুপা এই দৃশ্য আগে কখনো দেখেনি, ভীষনরকম অবাক হয়ে আছে সে, কি কারনে মিসির আলি সিগারেট ধরেছেন সেটা জানতে চাইবার সাহস ও পাচ্ছেনা। এই লোকটা তার সাথে খুব ভাল আচরন করলেও সে কেন জানি মিসির আলিকে ভয় পায়, তার কাছে মনে হয় মিসর আলি যেকোন সময় রেগে যেতে পারেন। কথা শুরু করবে কিনা রুপা বুঝতে পারছেনা, আবার মিসির আলিও বুঝতে পারছেননা এই মেয়ে তার কাছে কি চায় , আগে যে সে এসেছিল এই বিষয়ে তিনি নিশ্চিত, না হলেত আর মোবাইলে নাম সেভ করা থাকতোনা , কিন্তু আগেইবা কেন এসে ছিল তিনি মনে করতে পারলেননা। তার বাসায় এমন একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে এসেছে , অবশ্য আগেও এসেছে- এই বিষয়টাকে এলাকাবাসী ঠিক কি ভাবে দেখে তিনি এই জিনিসটি বুঝে উঠতে পারছেননা। খারাপ ভাবে দেখে বলেও মনে হলনা, কারন তাহলে তারা নিশ্চয় প্রতিবাদ করত ।

রুপা এখন মাথা নিচু করে বসে আছে। মিসির আলী কে কিছুটা বিরক্তই মনে হচ্ছে। মেয়েটা কেন আসছে কিছুই বলছেনা, এইদিকে তার নিত্যনতুন হোটেলে খাওয়ার মিশনে দেরী হয়ে যাচ্ছে। দুপুরের খাবার সময় প্রায় হয়ে এল বলে।

তোমার টিপটা দেখি ঠিক কপালের মাঝখানটায় , একদম যেন মেপে মেপে বসানো মিসির আলি বলে উঠলেন ।
রুপা মাথা তুলে তাকাতে তাকাতে বলল এই একটা কাজ আমি খুব যত্ন নিয়ে করি। কেন করি জানেন?
মিসির আলি না সূচক মাথা নাড়ল।
আমাদের গ্রামে প্রবাদ আছে যেসব মেয়েদের টিপ বামে কিংবা ডানে হেলে থাকে তাদের কপালে সতীন জোটে।

তোমাকে দেখেত মনে হচ্ছেনা তোমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছা আছে, তুমিত মনে হয় যেমনটি আছ সারাজীবন তেমনই থাকবে পণ করেছ। শোন মেয়ে, পাকা ফল আর যৌবন দুটাই একরকম, কখন যে টুপ করে ফল পরে যাবে আর যৌবন শেষ হয়ে যাবে সেটা কেউ টেরও পাবেনা।সময় থাকতে মনের মত কাউকে বেছে নাও। কথাটা বলে মিসির আলি আরেকবার রুপার দিকে তাকালেন । একই সাথে এমন মায়াবতি আর রুপবতী এই দুটা গুন আছে এমন আর কারো কথা তিনি মনে করতে পারছেননা।

আপনি কি আমার উপর বিরক্ত হচ্ছেন, হলেও কিছু করার নেই, আমি আপনার সাথে কিছুক্ষন গল্প করতে এসেছি, গল্প শেষ হলে চলে যাব ।
মিসির আলিকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি কিছু একটা বলবেন।
তখন রুপা বলে উঠে, ঠিক আছে আমি একটা বিশ মিনিটে আপনার এখান থেকে বের হয়ে যাব।
একটা বিশ মিনিটে কেন?

আজ আটাশে মে, এই দিন ঠিক একটা বিশ মিনিটে সূর্য তার গতিপথের মাঝ বরাবর থাকবে।মাথায় সূর্য নিয়ে বের হবার একটা মজা আছে। আমার মা সামনে থাকলে বলতেন মাথায় সূর্য নিয়ে ঘর থেকে বের হতে নেই, আর তার সাথে জেদ করে ঠিক ঐ সময়টায় আমি বের হতাম। ভালবাসার মানুষকে কস্ট দেয়া, ক্ষেপিয়ে তোলার মাঝেও একরকম আনন্দ আছে। আজ কি রান্না করেছেন ?

কিছুই রান্না করিনি।
আমি কি আপনার জন্য রান্না চড়িয়ে দিব।
না, এখন থেকে আমি আর বাসায় খাবনা, নতুন নতুন হোটেলে খাব। কথাটা বলেই মিসির আলি ভাবছেন, শুধু শুধু একে তার পরিকল্পনার কথা বলার দরকার কি।
আজ কোন হোটেলে খাবেন।
রাস্তায় নেমে হাঁটতে থাকব, যে হোটেলটা পছন্দ হবে সেটায় ঢুকে যাব।তুমি এখন যাও আমি বের হব।

বলেছিত একটা বিশ মিনিটে বের হয়ে যাব।মনে মনে রুপা কিছুটা অবাক হয়, যতই বিরক্ত হউননা কেন মিসির আলি কখনো মুখের উপর না বলতে পারতেননা, আজকে তিনি তাকে সরাসরি চলে যেতে বলছেন। মরার পৃথিবীর কি হয়েছে। সবাই তার নিজ নিজ খোলস ছেড়ে অন্য খোলসে ঢুকে যাচ্ছে, কেবল সেই আঁটকে আছে তার পুরনো খোলসে।
আমি ঠিক করেছি আপনার সাথে যাব, হোটেলে বসে খাব, অনেকদিন এমন রাস্তার পাশের হোটেলগুলোতে খাওয়া হয়না।

মিসির আলি বুঝলেন তিনি যতই বকাঝকা করেননা কেন এই মেয়েকে ভাগিয়ে দিতে পারবেন বলে মনে হয়না। থাক , যতক্ষন ইচ্ছা তার পাশেই থাকুক এই মেয়ে। এমন রুপবতী মেয়েকে নিয়ে পাশাপশি হাঁটতে থাকা বিষয়টাকে উপভোগ করাই শ্রেয়।

ঠিক একটা বিশ মিনিটে মিসির আলি আর রুপা রাস্তায় নেমে এল। গলির মুখের হোটেলের ম্যানেজার ছোকরাটা একদৃস্টে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে , অবশ্য রুপা তাকিয়ে থাকার মতনই মেয়ে। ইভ টিজিং করলে শাস্তির নানান রকম আইন আছে, তাকিয়ে থাকার জন্যত কোন আইন নেই । তদুপরি এমন রুপবতী সামনে দিয়ে যাবার সময় তার দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে না থাকাটায় বরং শাস্তিযোগ্য হউয়া উচিত। সুন্দর সবাই হয়ত ছুতে পারবেনা, ধরতে পারবেনা, তাই বলে দেখতেও পারবেনা-এটাত হতে পারেনা। রুপার মত রুপবতী নিয়ে হাঁটছেন , রাস্তার সব লোকজন তার দিকে তাকিয়ে আছে, মিসির আলি কি কিছুটা অহমিকায় ভুগছেন। এই মেয়েটিত আগেও এসেছিল, তখনও কি এমন সবাই তাকিয়ে ছিল, তিনি মনে করতে পারলেননা। একটা ফুলের দোকান ক্রস করার সময় মিসির আলির খুব ইচ্ছা হল রুপাকে একগুচ্ছ রজনীগন্ধার মালা কিনে দিতে, মালাটা খোঁপায় গুজে দিলে এই মেয়ের দিক থেকে আর চোখ ফেরানো যাবেনা, অবশ্য এখনও যে যাচ্ছে তাও না।

শাপলা হোটেল ' মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন , রুপার খারাপ লাগছেনা এটাতে বসে। কৈ মাছটায় নাকি সবচেয়ে ভাল হবে , বেয়ারার কথা অনুযায়ি তারা দুজনেই কৈ এর অর্ডাল দিল। বেশ ভাল সাইজের কৈ বলতেই হবে। রুপা কিছুটা ভয়ে আছে, কৈ মাছ খেয়েছে আর তার গলায় কাঁটা আঁটকায়নি এমন ঘটনা কখনো হয়নি। সে কাঁটা বের করার জন্য কোন ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগতোনা, বন্ধু জুঁই কে ফোন দিয়ে বলত তোর বাবাকে বলিস আমার গলায় কৈ মাছের কাঁটা আঁটকিয়ে গেছে, তিনি যেন দোয়া পড়ে দেন। জুঁই এর বাবা নাকি কিছু দোয়া দরুদ জানেন, যেগুলো পড়লে যার নাম করে পড়া হয় তার গলায় কোন মাছের কাঁটা আঁটকালে সেটা নিজে থেকেই নেমে যাবে। তারা সব বান্ধবীই এটার সাক্ষী যে ঘটনা সত্য, কাঁটা সত্যি সত্যি নেমে যায়, তারা জুঁই এর বাবার কাছে সে দোয়া দরুদ লিখে নিতে চেয়েছিল, তিনি দেননি, বলেছেন এটা শুধু একজনকেই দেয়া যাবে, তিনি মৃত্যুর আগে ঠিক করবেন কাকে দিবেন। রুপা মোবাইল বের করে দেখে নিল জুঁই এর নাম্বারটা আছে কিনা !
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×