somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের তুই (To The Child) – পঞ্চম পর্ব

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঝুম বৃষ্টিতে ভেজার মাঝে অন্যরকম একটা মজা আছে, কিন্তু তোমার জন্য আমরা এই আনন্দটা মিস করছি, বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর টর হয়ে গেলে সেটা তোমার জন্য মোটেও ভাল হবেনা, তবে শৈশবের বেড়ে উঠার সময় মাঝে মাঝে এই বৃষ্টিতে হারিয়ে যাওয়া মন্দ নয়, শরীরটাও সেই সাথে ঝড় বৃষ্টিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে, অবশ্য তোমার মা তোমাকে এইসব পারমিট না করলে আমার কিছু করার নেই, আমি শুধু বলতে পারি মাঝে মাঝে ভিজে অভ্যস্ত হওয়া দরকার, শরীরের সহ্য ক্ষমতা বাড়বে।

একটা ব্যাপার নিয়ে আমি বেশ চিন্তিত, তোকে সাঁতার শিখানোর কোন উপায় আমি দেখছিনা, এই ঢাকা শহরে এখন কোন পুকুরইত চোখে পড়েনা। সাঁতার জানাটা খুবই কাজের জিনিস, তবে সুইমিংপুলে শেখা সাঁতার দরকারের সময় খুব একটা কাজে আসবেনা। চারদেয়ালের ঘেরা পুলে সাহসের দরকার হয়না কিন্তু বড় দীঘি কিংবা নদীতে সাঁতার কাটার জন্য সাহসটাই আগে দরকার। আমি সাঁতার শিখেছিলাম বড় দীঘিতে, আমার দাদা আর তোর দাদা আমাকে সাঁতার শিখিয়েছেন। একবার আমার দাদু আমাকে নিয়ে গেল পুকুরে গোসল করার সময়, তিনি তার গোসল সেরে উঠে গেছেন, আমি তখনও পানিতে সাঁতার প্র্যাকটিস করছি, হঠাৎ করে আমি তালগোল পাকিয়ে ডুবে যেতে নিয়ে ছিলাম, পানির উপরে শুধু হাত টা দেখা যাচ্ছে, দাদুর চোখে পড়ায় সাথে সাথে তিনি এক লাফে পানিতে নেমে আমাকে তুলে আনেন আর অল্প কিছু সময় দেরী হলেই জান চলে যেত, এই ঘটনার পর বেশকিছুদিন তোমার দাদীমা আমাকে পুকুরে যেতে দেননি। অবশ্য পরে তোমার দাদু আমাকে তার সাথে করে পুকুরে নিয়ে যেত আর সাঁতারের প্রশিক্ষন দিত, একসময় দেখা গেল আমি নিজে নিজে বেশ ভাল সাঁতার কাটতে পারছি, আর এই জিনিস তুমি একবার শিখলে জীবনে কখনোই ভুলবেনা।

এমনই আরেকটি জিনিস হল সাইকেল চালানো, যেটাতে ভাল দখল থাকলে পরবর্তীতে মোটর সাইকেল চালানো বা ড্রাইভিং এ বেশ ভাল কাজ দেয়, এটাও একবার শিখলে আর জীবনে ভোলার চান্স নেই।

একটু বড় হলে প্রতিটি শিশুর মত তোমারও পছন্দের একটা বিষয় হবে কার্টুন দেখা, এই ব্যাপারে তুমি অবশ্য অন্যদের তুলনায় নিজেকে একটু লাকি ভাবতে পার, কারন অন্য বাচ্চাদের মারা কার্টুন বাধ্য হয়ে দেখলেও, তোমার মামনি এখনও খুব আগ্রহ নিয়ে এই জিনিসটি দেখে থাকে, এতে তার কোন ক্লান্তিও নেই। তার সমবয়সীরা যেখানে নানা ধরনের সিরিয়াল দেখায় ব্যস্ত সেখানে সে বেশীর ভাগ সময় আমার পছন্দের চ্যানেল ডিসকোভারি বা ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফি দেখে থাকে, আর তার হাতে রিমোট থাকলে সেটার গন্তব্য হয় কার্টুন চ্যানেল!!!! অযথা সিরিয়াল দেখে সময় নস্ট করার কোন অভ্যাস নেই তোমার মামনির, তার এ ব্যাপারটি আমার খুবই ভাল লাগে, জীবনি শক্তি সিরিয়াল দেখে নস্ট করার কোন মানে নেই। কার্টুনের ক্ষেত্রে 'টম এন্ড জেরী' হলে দেখার সময় আমাকেও পাশে পাবা এই কথা হলফ করে বলতে পারি, যেকোন পরিস্হিতিতে হাসতে চাইলে এটার যে কোন বিকল্প নেই ।

তোর সাথে এমনও হাজার কথা হয় প্রতিদিনই, নতুন নতুন কথা নানান বিষয়ে, তবে ইদানিং একটা জিনিস খেয়াল করলাম কথা বলার সাথে সাথে আমি আমার নিজস্ব কিছু ব্যাপার তোর উপর চাপিয়ে দিচ্ছে, মানে হল কোন একটা বিষয়ে কি করতে হবে বা কি করা উচিত, কিংবা কোন ডিসিশান নেয়ার ব্যাপার হলে তুই কোনটা নিবি- আমি বলছিনা আমার ভাবনাগুলো সবই সঠিক, তোকে কোন বিষয় জোর করে চাপিয়ে দেয়ার পক্ষপাতি আমি নই, আমার ভাবনাগুলো-আমার অভিজ্ঞতাগুলো তোর সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে হেল্প করবে, তোকে সঠিক ডিসিশান নেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবে -এমনটি হলেই আমি খুশী।

ব্যক্তিজীবনে আমি অতিমাত্রায় আউটগোয়িং, হইহুল্লোড় আড্ডা, শেয়ারিং এইসব নিয়েই কেটে যায় দিন, তোর মামনি আর আমি দুজনে একা একা পথ চলার চেয়ে সবাইকে নিয়ে আড্ডা দেয়া হইহুল্লোড় করা , ঘুরে বেড়ানোটাকেই বেশী পছন্দ করি। আবেগ উচ্ছাস চেপে রাখার কোন বিষয় থাকেনা। হস্তরেখা বা রাশিচক্র এই বিষয়গুলোর বাস্তব কোন ভিত্তি নেই যদিও তাদের কোন কোন বিষয় দেখা যাবে বাস্তবের সাথে মিলে যায় । যেমন, আমার এক বন্ধু শিবাজী আমার হাত দেখে বলল একটা জিনিস তোমার ব্যাপারে বেশ কনফিউজিং, তোমার হাত বলছে তুমি অতি মাত্রায় আত্মকেন্দ্রীক, চাপা স্বভাবের- কিন্তু বাস্তবেত তুমি তা না।

মজার ব্যাপার হচ্ছে এই চাপা স্বভাবটা যেন আমার মধ্য ইদানিং ভর করেছে, বিশেষ করে তোর বিষয়ে। তোর আগমনি সংবাদের শুরুতেই ঠিক করেছিলাম তোকে নিয়ে আমাদের দিনলিপি লিখে রাখব , আস্তে আস্তে তা করছিও। কিন্তু তোর মামনির সাথে এই ব্যাপারটা আমি শেয়ার করিনি তাকে সারপ্রাইজ দিব বলে। যার ফলটা হয়েছে কি তোর ব্যাপারে কোন কিছুই, কোন অনুভূতিই আমি তোর মামনির সাথে শেয়ার করছিনা, ভাবছি সবই আগে লিখে ফেলি, সে পড়বে আর অন্যরকম ভাললাগা তার মাঝেও ছড়িয়ে পড়বে।

এই ব্যাপারটা তোমার মামনি মোটেও হজম করতে পারছেনা। তোমার ব্যাপারে তার সামনে আমি কি করে এত নিস্পৃহ থাকছি সেটা কোন ভাবেই তার মাথায় ঢুকছেনা, সে কথা সে অকপটে আমাকে জানাচ্ছেও । আমি কি ভাবি, আমার কেমন লাগে, আমার কোন পরিকল্পনা...............আমার থেকে তেমন কোন সাড়া না পেয়ে সে খুব হতাশ হয় ।

অবশ্য এখানে আরেকটি বিষয়ও আছে, আমার মনে হয়কি তোমাকে নিয়ে আমি অনুভূতি বলতে গেলে সেটা আসলে যথার্ত ভাবে মনে হয় ফুটিয়ে তুলতে পারবোনা। জানিনা এইভাবে লিখেও ঠিকমত প্রকাশ করতে পারছি কিনা।

বড় হলে তুমি অবশ্য আরেকটি জিনিস আবিষ্কার করবে, বাবা মার প্রতি সন্তান কিংবা বড় হয়ে যাবার পর সন্তানের প্রতি ভালবাসার প্রকাশটা আমাদের সমাজে যথেস্ট কম, যদিও অন্তরে ভালবাসার কোন কমতি নেই।

ভালবাসা প্রকাশে আমাদের বাঙ্গালী সমাজ বেশ নীরব।ভালবাসাটা বুঝতে না দেয়ার মাঝেই যেন ভালবাসার সার্থকতা।

চতুর্থ পর্ব
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৮

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্যারাভান-ই-গজল - তালাত আজিজ

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৬:৩১


ভারতীয় অন্যতম গজল শিল্পীদের তালিকায় তালাত আজিজের নাম অবশ্যই থাকবে বলে আমার ধারনা। তার বেশ কিছু গান আমার শোনা হয়েছে অনেক আগেই। জগজিৎ সিং, পঙ্কজ উদাস ও গুলাম আলী সাহেবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×