somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চরিত্রহীনা

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আড্ডায় বসে ছিল কয়েকজন প্রবীন ব্যাক্তি। সবাই চাকরী জীবন শেষে এখন অবসর জীবন যাপন করছে। মাঝে মাঝে নিজেদের মত আড্ডায় বসে এরা সকালে জগিংএর পরে। আড্ডার সবচেয়ে মুখর ব্যাক্তি হায়দার খান সাহেব। ভদ্রলোক অতিমাত্রায় মিশুক এবং এই কলোনির প্রতিটি সংসারের হাড়ির খবর রাখেন। বলতে গেলে তিনিই এই বৃদ্ধদের মাঝে পুরনো দিনগুলোর আস্বাদ দিয়ে থাকেন তার রসে ভরা গল্পগুলোর মাধ্যমে।

ইদানিং কলোনিতে এক 'চরিত্রহীনা' মেয়েকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। তার দোষ সে তার চেয়ে কম বয়সী এক যুবক কে বিয়ে করেছে তার প্রাক্তন স্বামী কে তালাক দিয়ে। এই ইস্যু তে প্রবীনদের দুই পক্ষ দারুন ভাবে বিতর্কে লিপ্ত আজ। তাদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে আজকের এই বিতর্কের উপরে নির্ভর করছে আগামী সরকার কে গঠন করবে তার সিদ্ধান্ত। হায়দার খান সাহেব সহ আরও ৫ জন আছেন মেয়েটিকে চরিত্রহীনা হিসেবে কলোনি ত্যাগ করানোর পক্ষে। এর বিরোধিতা করছেন আজাদ কালাম সাহেব আর দুয়েকজন। যাদের মুখনিঃসৃত কথা সচরাচর শোনা যায়না। হায়দার খান সাহেব তো আড়ালে আজাদ কালাম সাহেব কে মনমোহন সিং বলে ডাকেন। তবে আজ মেয়েটার পক্ষে দাঁড়ানো আর তার কথার উত্তর দেওয়া দেখে হায়দার সাহেব কিছুটা অবাক ই হলেন। তবে মনে মনে ভাব্লেন আজ আজাদ সাহেব কথা যখন বলেছেন কাল থেকে সে হয়ত গলা ফাটাবেন। তাই কাবু করার জন্য তিনি বললেন 'আপনার যুক্তিখানা দেন তো আজাদ ভাই আপনি কেন এর সমর্থন করেন?'

আজাদ সাহেব হয়ত মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলেন। তাই তিনি সবাইকে বললেন,'আজ একটা সত্য ঘটনা আপনাদের বলব... তবে আগেই আপনাদের বলে রাখছি একজন ৩ সন্তানের জননীর আপন সন্তানদের ত্যাগ করে অন্য কাউকে বিয়ে করাকে আমি নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থন করিনা। তবে তাকে চরিত্রহীনা বলার মত ধৃষ্টতাও আমি দেখাতে পারিনা। আজ আপনাদের কথার বিরোধিতা করছি শুধু এই একটি মাত্র শব্দ এর ব্যাপারে। চরিত্রহীনা কাকে বলে, তা মনে হয় আমার চেয়ে ভালো কেউ জানেনা... আজ আপনাদের বলছি আপনাকে চরিতেহীনার কথা। তারপর না হয় বিচার করে দেখবেন আজ যাকে চরিত্রহীনা বলছেন সে কি আদৌ সেই চরিত্রহীনার চরিত্রের কাছাকাছি যায় কি না?'

'আমি তখনও বিয়ে কঋনি। চাকরী করছি আমার পোস্টিং সিলেটে। আমার সাথেই পোস্টিং ছিল এক মেয়ের। মাঝারী মানের সুন্দরী। গল্পের প্রয়োজনে ধরলাম মেয়েটার নাম কনা। তবে তার ছিল মানুষকে আকৃষ্ট করার এক বিশেষ খমতা। আমার অফিস সহ আশে পাশের অনেকেই সেই রমনীর পাণিপ্রার্থী ছিল তা আমি জানতাম। তবে আমাদের অফিসের উচ্চপদস্থ এক কর্মচারীর সাথে তার ভাল সখ্যতা দেখতাম।
আমি প্রেমে পড়লাম আমাদের অফিসারের মেয়ের। কনা স্বপ্রনোদিত হয়েই আমাকে সাহায্য করতে আসলো। বিভিন্ন বুদ্ধি, কৌশল শিখিয়ে দিত আমায় কনা। আমিও এপ্লাই করতাম। তবে অন্যান্য ব্যাপারের মত এতটা জ্ঞ্যানী ছিলাম না আমি এই ইস্যু তে। তাই আর প্রেম করা হলনা। তবে অফিসারের মেয়েটা আমায় আস্বস্ত করল সে এই কথা কাউকে বলবেনা।

প্রেম না হলেও কনার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়ল বন্ধু হিসেবে। খুব ভাল বন্ধু ভাবতাম তাকে। এরি মধ্যে আমাদের নিয়ে গুঞ্জন আরম্ভ হল। দেখলাম সবাই আমাদের নিয়ে কানাঘুষা করছে। দেখলাম অবস্থা তো বেগতিক। বাধ্য হয়ে কনার সেই পুরোনো সখার সাথে বন্ধুত্ব করতে হল। অফিসার তৈলমর্দন করিতে ওস্তাদ। আর অতি মাত্রায় ক্যারিয়ার সচেতন। বুঝতে পারতাম এ প্রোমোশনের জন্য নিজের বউকেও বসের সাথে বিছানায় পাঠাতে দ্বিধা করবেনা। তবে তার কথা বার্তা ছিল মারাত্নক মিশুক। গল্পের খাতিরে ধরে নিলাম লোকটার নাম অনুপম।

কনা খুব ভাল বন্ধু ছিল আমার। খুব সাহায্য করত আমায়। অনুপমদাও আমার কাছে এসে নানা রকম গল্প করত। একদিন অনুপম আমায় বলল কনার সাথে তার সম্পর্ক ছিল। এখন তা ভাঙ্গার পথে আর তার পেছনে কারন হিসেবে সে দায়ী করে আমায়। আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এর আগে উড়ো উড়ো শুনতাম আমায় নিয়ে এরকম কথা হচ্ছে। আজ দেখি এই ছড়ায় সব!!!! আমি দেরি না করে গেলাম কনার কাছে। কনাকে খুলে বললাম সব। কনার কাছ থেকে আশ্বাস পেলাম সে এরকম কথায় কিছু মনে করেনা। তবে আমার মনের মধ্যে ঠিকই খচখচ করতে থাকলো এই ব্যাপারটা নিয়ে। সিদ্ধান্ত নিলাম দূরে থাকব।হঠাত দেখলাম কনাই আমার থেকে দূরে থাকছে... ভালই লাগলো ব্যাপারটা। তবে কিছুদিন যেতেই সে আবার আমার সাথে মেশার জন্য মরিয়া হয়ে গেল... আগের চেয়ে আরও গভীর ভাবে।

এরই মধ্যে অনুপম একদিন আমায় জানালো, কনার সাথে তার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে বার কয়েক। জানতে চাইলাম আমাকে কেন এসব বলছে সে... রহস্যে রেহে আমাকে সে জানালো সে শুধু আমায় সতর্ক করতে চায়। একদিকে এর অত্যাচার অন্য দিকে কনার রহস্যময় আচরন আর অন্য দিক থেকে বাকি সবার তীর্যক মন্তব্যে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে উঠেছিলাম। এক সময় সিদ্ধান্ত নিলাম এর শেষ দেখেই ছাড়ব। এক সময় দেখলাম অনুপম কে সম্পুর্ন এড়িয়ে চলছে কনা। অনুপম কে মন থেকে ঘৃণা করতে আরম্ভ করেছিলাম আমি... তাই খুশিই হলাম।

তবে ভুল ভাংতে সময় লাগলো না। কিছুদিন পর দেখলাম কনার সাথে অনুপম কে। একবার না... বার কয়েক। বুঝে গেলাম সবই। এর মধ্যে কনাও হয়ত আমায় বিশ্বাস করে ফেলেছিল খুব... আসলে আমাআয় ভেড়ুয়া ভেবেছিল। ওর কাছ থেকে জানলাম ওর কাহিনি। বুঝলাম ভোলাভালা চেহারার মাঝে কি এক ডাইনী রুপ আছে তার বেজি (জেএসসি) এর মত। এর মধ্যে আরেক চরিত্রের আগমন ঘটল... এ ভেড়ুয়ার নাম ধরলাম আবুল। ৪ বছর ধরে কনার পেছনে পড়ে ছিল। কনা ছিল অনুপমের কাছে আটকা। অনুপমের সামনে আমায় দাড়া করিয়ে দিয়ে, ওর দ্বারা আমাকে খারাপ করিয়ে, এই ফাকে আরও ১০/ ১২ জনের শয্যাসংগী হয়ে নিজের কামনা চরিতার্থ করে আবুলকে কাছে চলে গেল সে।

মাঝ থেকে আমি হলাম বিশ্বাসঘাতক, অনুপম ও বাড়াবাড়ি করার সুযোগ পেলনা, ওরও কামনা চরিতার্থ হল। কি এক মাস্টারপ্ল্যান করে সে এগোল। এরপর যদ্দিন ওখানে ছিলাম মাঝে মাঝে শুনতাম আবুল তাকে চায়ের বাগান কিনে দিয়েছে, অমুক বাংলোয় চা এবং চো খাইয়েছে। বদলী হয়ে একসময় ঢাকায় চলে এলাম। আর এই মেয়েটার ঘটনা দেখুন। এ তো বৈধ উপায়ে তালাকের মাধ্যমে এক জনকে ত্যাগ করেছে... পরে আরেক জনকে বিয়ে করে নতুন সংসার পেতেছে। আর খবর নিয়ে জানলাম এই মেয়েটার স্বামী তাকে অত্যাচার করত। তাছাড়া এই স্বামীপ্রবর ব্যাভীচারী।এখন আপ্নারাই বলুন ভাইয়েরা... সত্যিকারের চরিত্রহীনার গল্প শুনে কি মনে হয়? কনা নামের অই চরিত্রহীনার কাছে কি এই মেয়েটার কোন তুলনা চলে?'

হায়দার সাহেব সহ বাকিরা চুপ হয়ে রইলেন... হয়ত তারাও ভাবছেন তাদের চোখে দেখা এমন কোন চরিত্রহীনার কথা। যে তার সামনে দিয়েই একসময় চলা ফেরা করত। কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত সে ভাবতেও পারেনি যে এ 'চরিত্রহীনা'।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×