somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাম না দেয়া এক গল্প- আসলে কি নাম দেব বুঝতে পারছিনা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- হ্যালো
- বল, শুনতে পাচ্ছি।
- তুমি কি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছ আর ফিরবেনা?
- হ্যাঁ, তোমাকে তো বলেছিই। তোমার বাবা- মা আর বোন টাকে আলাদা করে দাও আমি ফিরে আসব তোমার সংসারে।
- বাবা- মা আর বোনটাকে যদি আলাদাই রাখি তবে সংসারে আর কেই বা থাকলো?
- দেখ আমি এত কিছু বুঝিনা। আমি চাই তোমার আর আমার একটা আলাদা সংসার। সেখানে আমি আর আমার স্বামী অর্থাৎ তোমাকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে চাইনা। তোমার বাবা, মা আর বোনকে গ্রামে পাঠিয়ে দাও।
- কেন?
- আবার কথা বাড়াচ্ছ। আমি তো বলেছিই আমি চাই এমন একটা নির্ভেজাল সংসার যেখানে থাকব শুধু তুমি আর আমি। উটকো কাউকে আমি আমার সংসারে দেখতে চাইনা।
- আমার বাবা- মা আর বোন কি উটকো লোক?
- হ্যাঁ, অন্তত আমার দৃষ্টিতে।
- কেন? বাবা- মা কি কখনও তোমাকে অনাদর করেছেন? বা আমার বোন কি কখনও তোমাকে অসম্মান করেছে?
- দেখ, আমি আমার কথা বলে দিয়েছি। এখন সংসার টিকাতে চাইলে যা করার কর।
- আমি তোমার জন্য আমার বাবা-মা-বোনকে দূরে ঠেলে দিতে পারবনা।
- তাহলে আমিও আর ফিরবনা।
- তবে আলাদা হয়ে যাই। আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও।
- আমি দেব ডিভোর্স? খেপেছ? আমার কথা না শুনলে তোমাকে ঘুঘু দেখিয়ে ছাড়ব।
- ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়।
- দেখ, আর আমার জিনিসপত্র কিছু রয়ে গেছে ওখানে। বিশেষ করে আমার জামা-কাপড় গুলো। ওগুলো পাঠিয়ে দিও।
- তোমার ছোট ভাইকে পাঠিয়ে দিও। আমি দিয়ে দেব।
- আমার ছোট ভাই মানে। রবির নাম বলতে কি তোমার লজ্জা লাগে? স্ত্রীর ছোট ভাই কি তোমার ছোট ভাই না। ভাববা কিভাবে? নীচু জাতের লোক তোমরা। তোমাদের মধ্যে কি এসব আছে?
- দেখ সাথী, অনেক কথাই বল আমি নির্বিবাদে শুনে যাই। হজম করে যাই। তোমার কি মনে হয়না মানুষের একটা সহ্য সীমা আছে?
- কেন কি করবা তুমি? আমার গায়ে হাত তুলবা?
- আসলে সমাজে সামাজিকতার ভয়ে অনেক কিছুই করতে পারিনা। বাদ দাও। আমি রাখছি। কি করব তা পরে জানাচ্ছি।
- হুম, জানাইও। আর একটা কথা শুনে রেখ রফিক সাহেব। আমি সাথী কিন্তু সহজে ছেড়ে দেবার পাত্রী নই। খুব শীঘ্রই তোমার বাবা- মাকে আর ছোট বোনটাকে গ্রামে পাঠিয়ে দাও।
- কি করব তা জানবা শীঘ্রই। অপেক্ষা কর আর কিছু মুহুর্ত।
ফোন কেটে দিল রফিক। একদিকে বাবা- মা- বোন আর অন্যদিকে স্ত্রী। উভয় সংকটে এখন সে। স্ত্রী চায় আলাদা সংসার যেখানে রফিকের বাবা- মা- বোনের কোন স্থান নেই। রফিকের বাবা- মাও বিষয়টা জেনে গ্রামে চলে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার আগে রফিক সময় চেয়েছে বাবা মায়ের কাছে একটা দিন যদি স্ত্রী সাথীকে মানানো যায়। কিন্তু সাথী অনড় তার অবস্থানে। এখন কি করবে সে? ভাবতে ভাবতে চিন্তার জগতে প্রবেশ করে রফিক।

১.
ফ্ল্যাশব্যাক
৫ বছর আগে
অনার্স পাশ করা সদ্য গ্রাজুয়েট ছাত্র রফিক। সুঠাম দেহধারী, মিষ্টভাষী এক যুবক। চাকরীর সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছে এদিক সেদিক। আত্মীয়- স্বজনদের কাছ থেকে কোন সাহায্য না নিয়ে এতদুর এসেছে শুধুমাত্র নিজের যোগ্যতায়। আর চাকরীর বাজার এখন এতটা খারাপ মামা- চাচা ছাড়া কোন ব্যবস্থা হয়না। তবু আশায় আছে রফিক নিজ যোগ্যতায় যদি কোন কাজের ব্যবস্থা হয়। আপাতত, টিউশনি করে ঢাকায় নিজে চলছে সাথে মাঝে মাঝে মান্না- সালওয়া পাঠিয়ে গ্রামে বাবা- মা আর বোনটাকে বাচিয়ে রাখার কঠিন সংগ্রাম করছে সে। টিউশনি থেকে সামান্য কিছু আয় হয় তবে হিমশিম খাচ্ছে দুই দিন পর পর চাকরীর জন্য ব্যাংক ড্রাফট করতে হয় বলে।

জীবনের বাসন্তী একটা দিক থাকে প্রতিটা যুবকেরই। বিশেষত এই বয়সে। রফিকেরও আছে। সেও ভালবাসে এক নারীকে। যাকে কল্পনা করে নিজের প্রেমিকা হিসেবে। কিন্তু দারিদ্রের কঠিন বাস্তবতায় অনেক না বলা আবদার বা ইচ্ছের মত এটাও মনের মাঝেই কুলুপ এটে রয়েছে। কখনও মুখ ফুটে আর বলা হয়নি সাথীকে। সাথীর যে অজানা বিষয়টা তা না। একই সাথে পড়ত ওরা। রফিক আর সাথী ভাল বন্ধু ছিল। রফিক হাজারো ব্যস্ততায় সময় গুজরান করত তা জানত সাথী। তাই সে রফিক কে পড়াশোনা বা অন্যান্য যেকোন ব্যাপারে সহায়তা করত অনেক বেশি। অন্য যে কারো চেয়েই বেশি। রফিক এখনও বুঝে উঠতে পারেনা সাথী কেন তাকে এতটা সাহায্য করে। একি ভালবাসা? না দয়া? নাকি শুধুই বন্ধুত্ব? মাঝে মাঝে যখন কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা রফিক তখন দুইটা র‍্যালী সিগারেট টেনে বুকটাকে হাল্কা করে আর অপেক্ষা করে ভবিষ্যতের।

সাথী বড়লোকের মেয়ে। বন্ধু বানানো আর তাকে ভালবাসায় বাধ্য করে একটা আল্টিমেট শক দেওয়া তার কাছে নেশার মত। স্কুল জীবন থেকে সে এ কাজটা করে আসছে অত্যন্ত সফলতার সাথে। আজ পর্যন্ত কারো কাছে ধরা খায়নি সে। তাই ভিতরে ভিতরে একটা গর্ব কাজ করে তার। সে যে অথৈ জলের মাছ তা ভেবে সে নিজে তৃপ্ত হয়। গত তিন বছর যাবত রফিকের বন্ধু হয়ে আছে। রফিকের জন্য সে অন্তঃপ্রাণ। এই তিন বছর পর্যন্ত আসা লাগতোনা যদি রফিক একটু ঐ টাইপের ছেলে হত। এই ছেলেটা কেমন বোকা ধরনের। কথা বলে কম। শুধুমাত্র চোখের ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চলে যায়। মাঝে মাঝে চোখে প্রেম প্রেম একটা দৃষ্টি দেখা যায় কিন্রু তা স্বল্প সময়ের জন্য। সাথীও বুঝতে পারেনা আদতে রফিক নামের এই ছোট মাছটা তার জালে আটকেছে কিনা! আরো ঘনিষ্ট হবার অভিনয় করতে হবে ভাবে সাথী আর নতুন নাটকের প্ল্যান করতে থাকে মনে মনে।

৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×