বাংলা চলচ্চিত্র দেখিনা কিছুটা অজ্ঞতাবশেই অনেকদিন। বাংলা চলচ্চিত্র মানেই কিছু অশ্রাব্য চিল্লাচিল্লি আর একি কাহিনিবিন্যাসের পুনরাবৃত্তি। এমন একটা ধারনাই সবসময় পোষন করে এসেছি এতকাল। আর প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখবার কথাও কখনও মাথায় আসেনি।
তবে যখন মাথায় এল তা ভুত হয়েই চাপলো। শনিবার দেখতে যাব যাব করে যাওয়া হয়নি। তাই রোববারে ১০০% গ্যারান্টি সহকারে অনিকে বললাম আজ যাবই। এর মধ্যে বাসার কাছে গীত সঙ্গীত প্রেক্ষাগৃহে দেখেছিলাম চলচ্চিত্রের পোস্টার। তাই অতি দ্রুত চলে এলাম এখানে। তবে দুঃখের বিষয় সেখানে চলছিল কাছের শত্রু। তাই অনতিবিলম্বে ফোন করলাম মিরপুরে অবস্থানকারী বাংলা চলচ্চত্রের একনিষ্ট দর্শক রাশেদ ভাইকে। তিনি সম্মতি জানালেন। তখন ঘড়িতে ৫ টা বেজে ২০। তবু মিরপুরের উদ্দেশ্যেই রওনা হলাম যাত্রাবাড়ী থেকে। পথিমধ্যে মধুমিতা হলে সিনেমাটা চলছে দেখে মতিঝিলেই নেমে গেলাম।
শুনতাম প্রেক্ষাগৃহে নাকি লোকসমাগম কম হয়, ফাঁকা থাকে অধিকাংশ সময়। তবে সন্ধ্যার সময় দেখলাম মোটামুটি অনেক মানুষেরই ভিড়। এর মধ্যেই টিকেট কাটলাম সারিতে দাঁড়িয়ে। মুলত আমি দাড়াইনি, দাড়িয়েছিল অনি। দুখানা টিকেট হাতে প্রদর্শনী কক্ষে ঢুকলাম। অনি আর আমি বসলাম মাঝের দিকের দুই আসনে। বসে প্রথমে দেখলাম একটা আসন্ন চলচ্চিত্রের ট্রেইলার। সাকিব খানের ফাঁদ- দা ট্রাপের ট্রেলার। অনি হলে প্রথমবার গিয়েছে আমার জন্য দ্বিতীয়বার। তবে এই দ্বিতীয়বারটাই প্রথম হিসেবে ধরা যেতে পারে কারন আজ থেকে ১০ বছর আগে ১৬০ মিনিটের ছবির প্রথম ১৫ মিনিট দেখার পর বাকি সময় ঘুমিয়ে ছিলাম।
অনি প্রদর্শনী কক্ষে ঢুকে কিছুটা হলেও মুগ্ধ (যদিও আসনের কম ব্যাপ্তির জন্য খানিকটা নাখোশ)। সে সাকিব খান আর নায়িকার মারাত্নক একশন দৃশ্য দেখে বলেই ফেলল ‘দোস্ত, এই মুভিডা দেখতে আইতে হইব’। যাই হোক সিনেমা শুরু হল। এপার বাংলা ওপার বাংলার কলাকুশলীদের দ্বারা বানানো চলচ্চিত্র ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’। চলচ্চিত্রটা হল তেলুগু চলচ্চিত্র ‘আরিয়া ২’ এর ৮০ শতাংশ নকল, সেই হিসেবে বলছি আরিয়া ২ এর নকল। বাকি ২০ শতাংশ পরিচালক এর কৃতিত্বে হয়েছে।
চলচ্চিত্রের মাঝখানে দুইটা গান মনে হয়েছে জোর করে ঢুকানো হয়েছে। হৃদয় খানের দুইটা গান ছিল চলচ্চিত্রে। মাথা নষ্ট গান। নায়ক-নায়িকা কোলকাত্তাইয়া, অঙ্কুশ-বিক্রম (বিক্রমের চেহারা ৯০% কবিবন্ধু ফাতিন আরফির মত) আর শুভশ্রী। বাংলাদেশি নায়িকা ছিল একজন মেঘলা। তাকে দেখার পর মনটাও মেঘলা হয়ে গেল। কাহিনি বিন্যাস সত্যিই সুন্দর ছিল। তবে তার চেয়ে বেশি সুন্দর ছিল অন্যান্য দর্শনার্থীদের ছোড়া মন্তব্য। কিছু মন্তব্য লেখার লোভ সামলাতে পারছিনা...
দৃশ্য ১ঃ নায়ক নায়িকাকে চুমু খাচ্ছে
মন্তব্য- এত আস্তে চুমাইতে হয় নি আবাল!
দৃশ্য ২ঃ এখনই পালানোর সময়। চলো... চলো... তারাতাড়ি চল। (নায়ক নায়িকাকে হাত ধরে টানছে)
মন্তব্য- হালার পোতে গরম হইয়া গেছে। অহনি পারলে নায়িকারে টুট টুট টুট।
নাহ আর লেখা যাবেনা। কি-বোর্ডটাও লজ্জায় কালো থেকে বেগুনী হয়ে গেছে!
পুনশ্চঃ বাংলা ছবি মানেই খারাপ এমনটা ভাবার দিন বোধ করি শেষ। এই সিনেমাটা প্রেক্ষাগৃহে যেয়ে দেখে আসতে পারেন। পয়সা উসুল হবে নিশ্চয়তা দিচ্ছি। পয়সাও যে খুব খসবে তা না। আমি তো ৬০ টাকায় ৬০০ টাকার মজা পেলাম। আপনারাও পাবেন এই বিশ্বাস আছে বলেই তো লিখলাম!!!!!!