চোখের ওপরে সরাসরি সুর্যের আলো পড়ছে সোহাগের। ঘুমটা ভেঙ্গে গেল তার। আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানা ছাড়ল সে। আজ অনেকদিন পরে এতক্ষন ঘুমুতে পারলো ও। অনেকদিন মানে কতদিন ভুরুখানি খানিকটা কুচকে মনে করার চেষ্টা করছে সোহাগ। মনে পড়ছেনা সঠিক সময়কালটা। তবে এতটুকু সোহাগ নিশ্চিত আড়াই বছর পার হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
আজ শুক্রবার। জুম্মার নামাজে যেতে হবে আজ। এটাও কত সপ্তাহ পরে তা ঠিক মনে করতে পারছেনা সোহাগ। ব্যস্ততার একটা সীমা থাকে। সোহাগের ব্যস্ততার কোন সীমা নেই। গ্রাজুয়েট হবার পর ৬-৭ মাস বাবামায়ের গালাগাল খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। এরপর একটা চাকরী পেল। সেই যে ব্যস্ততার শুরু আজও সে ব্যস্ত। নামাজের পরপরই যেতে হবে নীলখেতে সেখানে এবার আজ একটু বিশেষ ব্যস্ততা আছে। না, গার্লফ্রেন্ড সংক্রান্ত ব্যস্ততা নয়। অফিসের এক সিনিয়র স্যার পার্টির আয়োজন করেছেন ওখানে একটা রেস্টুরেন্টে সাথে বলাকা সিনেমা হলে সিনেমাও দেখাবেন তিনি। মানে মন ভাল করবার জন্য একটু চেষ্টা আরকি। সোহাগের অবশ্য বাসায় শুয়ে শুয়ে ঘুমানোই বেশি পছন্দের। কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে এইসব পার্টি-টার্টি এটেন্ড করে। এমনি এমনি তো আড়াই বছরে দুইটা প্রমোশন হয়নি।
আঠের হাজার টাকা বেতনে আরম্ভ করে এখন তার বেতন নব্বই হাজারের কাছাকাছি। আয় বেড়েছে যেমন খরচাও বেড়েছে তেমনি। পরিবারকে এনেছে গ্রাম থেকে। পরিবার বলতে বাবা-মা আর ছোট দুই ভাই-বোন। বিয়ের কথাটা গত চার বছর ধরে বাবা-মা বলছেন কিন্তু কার্যকরী কোন উদ্যোগ এখনও লক্ষ্য করেনি সোহাগ। প্রেম এর ব্যাপারে তার রাশি এভারেজ বলা যায়। ২৪ তম বার প্রেমে সফল হবার পর ক্ষান্ত দিয়েছে সে আজ থেকে বছর তিনেক আগে। তাকে একসময় প্রেমের ব্যাপারে ফ্রীক বলা যেতো। কাউকে প্রপোজ করে সে রাজি হলে মাস ছয়েক প্রেম প্রেম খেলা এর পরে ব্রেক আপ ছিল তার কাছে এক প্রকারের খেলার মত। শেষ বারেরটায় কি উপলব্ধি হল কে জানে, সব কিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে গেল। এখন সে মিস্টার পারফেক্ট। জিম-টিম করে নিজের মোটা শরীরটাকে একটু সাইজে এনেছে। আলস্য ত্যাগ করেছে সে কঠিন ভাবেই। নিজের পুরাতন সব বদঅভ্যাসকে ত্যাগ করে এখন সে নিজেকে দিন দিন অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। সোজা কথায় আদর্শ ছেলে বলতে যা বোঝায় সে আসলে তাইই।
কিন্তু এতক্ষন যা বললাম তা তো সবার চোখের সামনের ব্যাপার। আলসে, মোটামাথার এক মানুষের এভাবে বদলে যাওয়াটা সবার কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হলেও আমার কাছে তা না। কারন আমি ওকে ভালবাসি। আর আমি জানি আমিই ওর বদলে যাবার কারন। সারাটাক্ষন ওর পাশে থেকে আমিই ওকে মন্ত্রনা দেই। যদিও আমাকে ওর পাশে কেউ কখনও লক্ষ্য করেনা। কারন বাস্তব জগতে আমার কোন অবস্থান নেই। আমি মারা গেছি আজ থেকে দুই বছর আট মাস আগে। সোহাগও জানতোনা আমি ওকে ভালবাসি। হয়ত তাইই আমাকে ঘৃণা করত। যাই হোক মরার পরে বুঝতে পেরেছি আসলে আমায় কে বেশি ভালবাসত। বেঁচে থাকতে তো আর পাশে থাকার সৌভাগ্য হয়নি। মরেই ওর পাশে পাশে থাকছি। লিখে ফেলব ভাবছি সব। হুম লিখে রাখা উচিৎ। আমার মৃত হওয়া আর সোহাগের জীবন্মৃত হবার ইতিহাসটা বোধ করি অনেকেরই জানা উচিৎ। কে জানে আমাদের মত ইগো সংক্রান্ত জটিলতায় আর কতোজনই না ভুগছে!