somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনভর উপেক্ষিত মুক্তিযুদ্ধা সিকান্দর : প্রশাসনের উদাসীনতায় মৃত্যুর পরও জোটেনি গার্ড অফ অনার

২৪ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিকান্দর মিয়া (৭৩) জীবদ্দশায় ছিলেন উপেতি। রোগে কাতর হয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভূমিহীন এ মুক্তিযোদ্ধা বাস করতেন সরকারি খাস ভূমিতে। কোনদিন তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, ভিজিডি ভিজিএফ পাননি। জীবদ্দশায় সরকারি সব সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এই মহান মুক্তিযোদ্ধা বুকে পাহাড়সম অভিমান নিয়ে রবিবার সকালে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার শুখাইর রাজাপুর ইউনিয়নের নোয়াগাও গ্রামে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসনকে তার মৃত্যুর খবর দিলেও তার ভাগ্যে জোটেনি মরনোত্তর গার্ড অফ অনার। অবশেষে সহযোদ্ধারা গ্রামবাসীর সহায়তায় গার্ড অফ অনার ছাড়াই তাকে দাফন করেন।
জামালগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাক ইউনিয়নের ইনাথনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সিকান্দর মিয়া নিত্য অভাবের তাড়ণায় এলাকা ছেড়ে পার্শবর্তী উপজেলা ধরমপাশার নোয়াগাও গ্রামে সরকারি খাশ ভূমিতে কোন মতে খুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করতেন। জামালগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নামও রয়েছে। তার মুক্তিবার্তা নম্বর ০৫০২০৭০০। তবে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও সরকারি অন্য সুযোগ সুবিধা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি অভাবতাড়িত হয়ে নিজের গ্রাম ছেড়ে পার্শবর্তী উপজেলার সরকারি খাশ ভূমিতে আবাস গাড়েন। স্ত্রী, ১০ বছরের এক পুত্র সন্তান এবং তিন মেয়ে নিয়ে তিনি কষ্টে দিনমজুরের কাজ করে দিনাতিপাত করতেন। রবিবার সকালে তিনি রোগের কাছে হার মেনে মারা যান। তার মারা যাবার পরই গ্রামের লোকজন জামালগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রেজ্জাককে খবর দিলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাফিজকে পাঠান। আব্দুল হাফিজ গ্রামবাসীর সহায়তায় আছরের নামাজের আগে তাকে নোয়াগাও গ্রামে গার্ড অফ অনার ছাড়াই জানাজা শেষে দাফন করেন। তবে এর আগে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রেজ্জাক জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাশেমকে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানান। এক পর্যায়ে গ্রামবাসী ধরমপাশা থানাকেও মৃত্যুর বিষয়টি অবগত করেন। কিন্তু প্রশাসনের কেউ না আসায় মুক্তিযোদ্ধা সিকান্দরকে গার্ড অফ অনার ছাড়াই দাফন করা হয়। জানাযায় অংশ নেওয়া এলাকার যুবক শাহ কামাল বলেন, গ্রামবাসী ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের লোকজন প্রশাসনকে খবর দিয়েছিলেন। কিন্তু সবাই বিষয়টি উপো করে গেছেন। যার ফলে গ্রামবাসী গার্ড অফ অনার ছাড়াই তাকে দাফন করেন।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রেজ্জাক বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা সিকান্দরের মৃত্যুর খবরটি শোনে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাই। তিনি জামালগঞ্জ উপজেলার বাইরে মৃত্যুবরণ করায় তার কিছুই করনীয় নেই বলে তাকে জানান। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সিকান্দর জামালগঞ্জে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
দাফনে অংশ নেওয়্ াসহযোদ্ধা আব্দুল হাফিজ বলেন, দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা জীবনেও উপেতি ছিল-মড়ণেও। উপোষ করে দিনমজুরি করে সে পরিবার চালালেও সহায়তা পায়নি। যে দেশের জন্য সে অস্ত্রহাতে নিয়েছিল সেই দেশ ও সরকার মৃত্যুর সময় তাকে দেয়নি গার্ড অফ অনার। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারেনা।
ধরমপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার এলাকায় যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা মুত্যুবরণ করেছেন সেহেতু খবর পেলে আমরা তাকে গার্ড অফ অনার দিতাম। তাছাড়া আমি সৃনামগঞ্জে মিটিংয়ে ছিলাম। কেউ আমাদের খবর দেয়নি। জামালগঞ্জ থানা ও উপজেলা প্রশাসন থেকেও আমাদের খবর দেওয়া হয়নি।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমাকে বিষয়টি অবগত করলেও মৃত মুক্তিযোদ্ধা অন্য উপজেলায় মারা যান। যার ফলে আমাদের কিছু করার ছিলনা। তবে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নিজে বিষয়টি তদারকি করবেন বলে আমাদের জানানোয় আমরা নিশ্চত ছিলাম। পরে খবর পেলাম দাফনের আগে মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় সম্মান পাননি। ধরমপাশ্ াউপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
##
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×