somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আহারে!

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আহমেদ বারান্দায় বসে গুড়ুক গুড়ুক শব্দে হুঁকা টানছেন,প্রচন্ড ঠান্ডা আর কুয়াশার মধ্যেও তিনি পাতলা পাঞ্জাবী আর লুঙ্গী পড়ে আছেন।বাড়ির উঠোনে বত্রিশ কেজী ওজনের পাঙ্গাশ মাছ,এখনও তড়পাচ্ছে।শামসুদ্দীন আহমেদ খুব বেশি মজা পাচ্ছেন মনে হচ্ছে না।গোপাল মাছের পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,প্রচন্ড শীতে থরথর করে কাঁপছে।শামসুদ্দীন আহমেদ কিছু না বলা পর্যন্ত গোপাল ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
হাজেরা,আসিয়া,পর্দার আড়ালে থেকে শামসুদ্দীন উকিঝুকি মারবা না।সামনে এস।এইগুলা আমার পছন্দ না।
দুইজন একসাথে বাইরে আসে,মাথায় বড় ঘোমটা।
মাছ পছন্দ হইছে তোমাদের?
দুইজন একসাথে মাথা নাড়াল।
গোপাল মাছ খুব ভালো হইছে,কোন নদী থাইকা ধরছ?
বড়াল নদী থাইকা,সুতী ফেলছি।
ঠিক আছে,দুপুরে আমার সাথে খানা খাবা।
ইয়াকুব,ভেতরে আস।মাছ দেখতে ইচ্ছা হইছে ভেতরে আইসা দেখ,বাইরে কি?
ইয়াকুব চোখমুখ বড়বড় করে মাছটার দিকে তাকিয়ে আছে।
মাছ দেখে এত আনন্দিত হওয়ার কিছু নাই,দুনিয়াতে আরও অনেক কিছু আছে যা দেখে তুমি আরও আনন্দিত হতে পার।
পড়াশোনার কি অবস্থা?
জী ভালো।
আমার বাড়ির জায়গীর কোনদিন ফার্ষ্ট ডিভিশন ছাড়া সেকেন্ড ডিভিশন পায় নাই,কথাটা মনে থাকে যেন।দুপুরে আমার সাথে খানা খাবা।এখন যাও পড়াশোনা কর।
কি হইল দাঁড়ায়া রইলা যে?
ইয়াকুব মাথা নিচু করে ফেলল।
দুপুরে খেতে এসে টাকাটা নিয়ে যেও,বাসি মুখে টাকাপয়সা নাড়াচাড়া করতে নাই।
ইয়াকুব মাথা নিচু করে চলে গেল।
বাড়ির চাকর বাকররাও এখানে ওখানে মুখ লুকিয়ে মাছ দেখছিল,শামসুদ্দীন আহমেদ এদের ডাকলেন না।অদ্ভুত কারনে এরা সবাই শামসুদ্দীন আহমেদকে ভয় পায়।
সবাই চলে যাওয়ার পর শামসুদ্দীন আহমেদ হাজেরা,আসিয়াকে ডেকে নিলেন।
হাজেরা,আসিয়া!আমার সামনে এসে দাঁড়াও
আচ্ছা তোমরা দুইজন সবসময় আঠার মত একসাথে লাইগা থাক কেন?তোমরা না সতীন?সতীনে সতীনে থাকব হিংসা,বিদ্বেষ ,চুলাচুলি।
আমরা সতীন না দুই বোন,আমাদের মধ্যে হিংসা নাই,ভাব ভালোবাসা আছে।আসিয়া উত্তর দেয়।
শামসুদ্দীন আহমেদের চোখমুখ ঝলমল করে উঠল।
সকালের খাবার কি?
আলু ভর্তা,কবুতরের মাংস,কলমী শাক, ডাল সাথে মহিষের দুধের ঘি আর শুকনা মরিচ।
আজ তোমরা দুইজনই আমার সাথে বসে খানা খাবে।
শামসুদ্দীন আহমেদের মন আজ খুবই ভালো,সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই বিশাল এক পাঙ্গাশ মাছ দেখে ফেলেছেন।দিনটা শুভ।আজ গুনে গুনে বাইশটা বছর শামসুদ্দীন আহমেদ গুনাইগাছা ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসীডেন্ট।কেউ আজ পর্যন্ত তার পদ কেড়ে নিতে পারে নাই।আজ থেকে বাইশ বছর আগের ঠিক এই দিনটাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার অভিষেক হয়েছিল।
পাবনা জেলার মধ্যে শামসুদ্দীন আহমেদের বেশ নামডাক।শুধু প্রেসিডেন্ট বলে নয়,তার বিশাল জমিদারী আছে।এলাকার মানুষ তাকে খুব ভাল বলে জানে,কোন মানুষ তার বাড়ি থেকে কোনদিন খালি হাতে ফেরত গেছে কেউ বলতে পারে না।শামসুদ্দীন আহমেদের তিন মেয়ে এক ছেলে,মেয়ে তিনজনের বিয়ে হয়েছে,ছেলেটা অল্প বয়সে বখে গেছে।শামসুদ্দীন আহমেদ আড়ালে আবডালে খবর পান ছেলে মদ গাঁজা খায়।ছেলেটা বাবাকে বেশ ভয় সহ ভালোবাসত।শামসুদ্দীন আহমেদ প্রথম স্ত্রী রেখে কিছুদিন আগে দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন আসিয়াকে,একদমই বাচ্চা একটা মেয়ে।এই বিয়ের পর থেকে শামসুদ্দীন আহমেদের ছেলে বাবার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেছে।আসিয়া বেশ চপলা।আসিয়াকে খুব মনে ধরেছে তার।দুই সতীনের গলায় গলায় ভাবও বেশ মুগ্ধ করেছে শামসুদ্দীন আহমেদকে।
শামসুদ্দীন আহমেদ খেতে বসেছেন।দুই পাশে বসেছে হাজেরা,আসিয়া।
শীতের দিনে ধোঁয়া ওঠা ভর্তা ভাত শামসুদ্দীন আহমেদের খুব প্রীয়,সদ্য নামানো ভাতের মিষ্টি গন্ধে মাথার ভেতর পর্যন্ত পরিষ্কার হয়ে যায়।
হাজেরা,আসিয়া আজ আমার বড়ই আনন্দের দিন।বাড়িতে কোন মানুষ আসলে তাদেরকে খালি মুখে ফেরাবে না।
হাজেরা,কুদ্দুস নাকি আমার বিরুদ্ধে কথা বলছে।ছোট মানুষ মাথা গরম।ও তোমার কাছে আসে আমি জানি।টাকাপয়সা ছাড়া মানুষ অচল।
হাজেরা মাথা নাড়ে।
আমার ওপর রাগ ঠিক আছে,বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কোন কারন নাই।ওকে বলবা নেশা না করতে এইসব ভালো কাজ না,মানুষ ভালো বলে না।
আপনে যে দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন,আপনাকেও মানুষ খারাপ বলে।
শামসুদ্দীন আহমেদ অবাক হলেন না।
আসিয়া তোমার সাহস আমাকে মুগ্ধ করেছে,হাজেরা কোনদিন আমার মুখের ওপর এই ধরনের কথা বলতে পারে নাই।
বোন যদি বলতে পারত তাইলে আমারে আপনি বিয়ে করতে পারতেন না।
হাজেরা আসিয়ার গায়ে খোঁচা দেয়।
এইসব আজেবাজে চিন্তা মাথায় আনবা না,এইগুলা পাপ আর জানতো স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত।
আসিয়া খিলখিল করে হেসে ওঠে ওমা ভালোই তো আমরা দুই বোন একই বেহেশতের ভেতর থাকব!
এই মেয়ে এত বালখিল্য হল কি করে?শামসুদ্দীন আহমেদ ভেবে পান না।
শামসুদ্দীন আহমেদ বাকি সময়টা নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করলেন।
হাজেরা নস্যির কৌটা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
মাছটা গাদা পেটি আলাদা করবে না,বেশী করে পেঁয়াজ দিয়ে সালুন করবে।এই টাকাটা ইয়াকুবকে দিও।আমার ফিরতে দেরী হলে তোমরা খেয়ে নিও,হাজেরা ঠিকই জানে শামসুদ্দীন আহমেদ ফিরতে পারবেন না।হাজেরা নিঃশ্বাস ফেলল বড় করে,স্বামীর সাথে বসে খাওয়ার ভাগ্য খুবই কম হয়।আজ সকালটা ছিল ব্যাতিক্রম।এমন ব্যাতিক্রম সময় খুবই কম আসে।
বাইরে গনগনে রোদ,দোতলা ঘরের মধ্যে থেকে শামুদ্দীন আহমেদ টের পাননি।কুয়াশা কেটে গেছে।লক্ষণ ভালো।বেড় হওয়ার সময় আসিয়ার মুখ দেখা গেল না।
মূল বাড়ির বাইরে বিশাল বড় উঠোন,উত্তর পাশে গোয়াল ঘর,দক্ষিণে খানকা ঘর আর পুর্বে বিশাল আবাদী জমির মাঠ।মাঠ পেরুলেই বড়াল নদী।সড়সড় শব্দে পানি নেমে যাচ্ছে।উঠোনে দাঁড়িয়েও স্পষ্ট শুনতে পান শামসুদ্দীন আহমেদ।মাঠের ভেতর একগাদা মেছো বক নোংরা পানিতে মাছ খোঁজাখুঁজি করছে।শামসুদ্দীন আহমেদ বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন মাঠের দিকে,তার চোখে পানি এসে যায়।কোথা থেকে যে হৃদয়ে এত হাহাকার জমা হয় আর কি সময়েই না তা দীর্ঘ শ্বাস হয়ে বেড় হতে চায় আল্লাহই জানেন।বেশীক্ষণ আবেগী হওয়া গেল না।
খানকা ঘরে অনেক মানূষের সমাগম।এদের সাথে কথা বলা শেষ হলে চিত্ত আর নুরুলকে সাথে নিয়ে শামসুদ্দীন আহমেদ বেড় হবেন চাটমোহরের উদ্দেশ্যে।


ইয়াকুব দুপুরের খাবার খেতে বসেছে,খেতে দিয়েছে আসিয়া।বাইরের মানুষদের ভেতর মহলে ঢোকা নিষেধ।ইয়াকুব ব্যতিক্রম।আসিয়ার অবৈধ ভালবাসায় সিক্ত সে।এই সময়টাতে হাজেরা গোসলে যায়,অনেক সময় ধরে গোসল করে।ইয়াকুবের সাথে দেখা হবার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়।
ইয়াকুব ছোট বাচ্চাদের মত খায়,মুখের চারদিক ভাতের উচ্ছিষ্ট লেগে থাকে।আসিয়া মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে।আহারে বেচারা!অভাবের সংসারে কোনদিন হয়ত ভালো করে ভাতই খেতে পারত না।
আসিয়া বড় দেখে পাঙ্গাস মাছের আরেকটা টুকরা তুলে দেয় ইয়াকুবের পাতে।
ইয়াকুব কিছুক্ষণ আসিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে খাওয়ায় মনযোগ দেয়।
মাত্রই গোসল করে আসা ইয়াকুবের গা থেকে শরিষা তেলের কটু গন্ধ টের পাওয়া যায়।
আপনি কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত?
ইয়াকুব আস্তে করে মুখ তুলে জবাব দিল কই না তো।
খাবার আস্তে খেতে হয়।
আমি কোনদিন আস্তে খেতে পারি না।বাড়িতে সবার চেয়ে দ্রুত আর বেশী খেতাম বলে সবাই আমাকে ট্যাপা ডাকত।
আপনের শরীর দেখে কিন্তু ট্যাপা মনে হয় না।
হুমম!
তুমি আমাকে প্রতিদিন লুকিয়ে খাবার দাও,দেখা কর তোমার ভয় করে না?
নাহ!তোমরা শুধু শুধুই লোকটাকে ভয় পাও।আমার বাবাও ভয় পেয়েই লোকটার সাথে আমার বিয়ে দিছে।না হলে তোমার মত পড়ালেখা করে চাকুরী করা বর থাকত আমার।এই বন্দীদশা ভালো লাগে না।
কাকা তোমাকে খুব পছন্দ করেন।
তাই বুঝি?তুমি কর না?
আমার করায় কি এসে যায়?আমি গরীবের ছেলে এসেছি পড়লেখা করতে।তোমার সাথে মেলামেশা ঠিক না,পাপ হচ্ছে আবার নেমখারামিও করা হচ্ছে।
কাকা যদি জানতে পারে কাউকে জীবিত রাখবেন না।
আমি চলে যাব!
কি বলছেন আপনি?
হ্যাঁ ঠিকই বলছি বইপত্র গুছিয়ে রেখেছি,আজই চলে যেতাম,এত বড় পাঙ্গাস মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়ার লোভ সামলাতে পারি নাই বলে থেকে গেছি।তাছাড়া যাতায়াতের জন্য কিছু টাকার দরকার।
তুমি কা পুরুষের মত কথা বলছ।
ঠিকই বলেছ আমি কা পুরুষ,আমাদের সুপুরুষ হতে নেই।তাতে অনেক বিড়ম্বনা হয়।
শুনেছি আপনি মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ষ্টার মার্ক্স নিয়ে পাশ করেছেন,আপনের সামনে অনেক বড় কিছু অপেক্ষা করছে,কয়েকমাস পরেই আই এ পরীক্ষা।এই মুহুর্তে আপনি ঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না।
আমি আর পারছি না আসিয়া।একটা অপরাধবোধ আমাকে তাড়া করছে,তাছাড়া মনের এই অবস্থা নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া ঠিক হবে না,রেজাল্ট নির্ঘাত খারাপ হবে।কাকাকে আর ঠকাতে ইচ্ছে করছে না।
আসিয়া ইয়াকুবের হাত ধরে ফেলে,আপনি এভাবে চলে যাবেন না।আমি এভাবে বন্দী হয়ে থাকলে মরে যাব,লোকটা আমাকে জোড় করে বিয়ে করেছে,কেউ জানে না আমার বাবা মাকে জিম্মী করে রেখেছে এখনও।
তোমার কথা চিন্তা করতে গিয়ে তো দুজনই মারা পড়ব,তারচেয়ে বরং দুইজনই অন্তত বেঁচে থাকি,বেঁচে থাকলে ঠিকই পথ বেড় হয়ে যাবে।ইয়াকুব নাছোড়বান্দা।
আসিয়া এবার আসল টোপ দেয়।
আপনি কি জানেন আপনের সন্তান আমার পেটে।
কি বলছ এসব!না এটা হতে পারে না।
এটাই সত্যি।
তুমি মিথ্যা বলছ!
আল্লাহ নবিজীর কসম খেয়ে বলছি।
আমারা কি আল্লাহ নবিজীর কসম খাওয়ার যোগ্য আছি?
আমি সত্যিই অন্তঃসত্তা।
আল্লাহ এটা কি করলে আমায়।পালানো ছাড়া আর কোন পথ নাই আমাদের।
কি বলছেন এসব?
পালালে লোকটা আমাদের ঠিকই একদিন খুঁজে বেড় করে ফেলবে,তাছাড়া আমাদের অনেক টাকা পয়সার দরকার।
তাহলে কি পথ আছে?
আপনার মাথায় কি কোন বুদ্ধী নাই?
কাকাকে মেরে ফেলতে বলছ!
হ্যাঁ।
না না আমি পারব না,এই লোকটা আমায় এতদিন লালন পালন করেছে,কত ভালোবেসেছে।তাছাড়া থানা পুলিশ হবে,আমার ফাঁসী হয়ে যাবে।
আপনি দেখী এক্কেবারে বোকা,কুদ্দুস নেশাখোর ওর মাথায় কোর্ট কাচারি আসবে না,মেয়েদের আর হাজেরা বোনকে আমি সামাল দেব।তাছাড়া আমার সাথে বিয়ে হওয়ার পর মেয়েরা নাখোশ ওরা মনে হয় এসব বিষয়ে আগাবে না,আর হাজেরা বোনকে এতদিন কষ্ট করে ভালোবাসলাম কি এমনি?
আপনের কাকা আমার নামে তার অর্ধ্যেক সম্পদ লিখে দিছে,কেউ জানে না এমনকি হাজেরা বোনও না।লোকটার মৃত্যুর পর আপনি আমাকে বিয়ে করবেন,আমাদের সংসার হবে,জমিদারি হবে,ফুটফুটে বাচ্চা হবে।
ইয়াকুবের মুখ হা হয়ে যায়,আসিয়া বলে কি?
আপনি আজ রাতের মধ্যে কাজ সমাধা করবেন।এখন যান হাজেরা বোন আসার সময় হয়েছে।
ইয়াকুব উদ্ভ্রান্তের মত বেড় হয়ে যায়।



চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার বেদম চীৎকার ,শামসুদ্দীন আহমেদ তার নিজস্ব লাইব্রেরীতে মুখ গুঁজে ছিলেন,পড়ছিলেন গুপিচন্দ্রের সন্যাস।বইটা অনেক মনে ধরেছে তার।লাইব্রেরীর দেয়ালে প্রাচীন দেয়াল ঘড়ি,ঘড়িটা দিল্লী থেকে আনা।শামসুদ্দীন আহমেদের প্রথম পক্ষের শ্বশুর হাজী সিরাজুদ্দীন হজ থেকে ফেরত আসার সময় ঘড়িটা সঙ্গে করে এনেছিলেন।ঘড়ির দিকে তাকালেন রাত সাড়ে এগারটা।আসিয়া হাজেরা দুজনই ঘুমিয়ে পরেছে এতক্ষণে।এটাই ইয়াকুবকে নিয়ে বেড় হবার শ্রেষ্ঠ সময়।
ইয়াকুবের চেহারা হয়েছে দেখার মত।
শামসুদ্দীন আহমেদ কোনদিন তাকে নিয়ে বেড় হননি আজ হঠাত ব্যাতিক্রম হল কেন?কাকা কি কিছু টের পেয়েছে?
শামসুদ্দীন আহমেদ অবাক হলেন না।
ইয়াকুব চল একটু হাঁটাহাঁটি করি,আচ্ছা তুমি কি জান প্রজাদের দুঃখ দুর্দশা দেখার জন্য কে ছদ্দবেশে বেড় হতেন।
ইয়াকুব আমতা আমতা করে জবাব দিল,অনেকেই করতেন তার মধ্যে হযরত ওমর রাঃ এবং বাদশাহ হুমায়ুন উল্লেখযোগ্য।
পড়াশোনার পাশাপাশি গল্প উপন্যাস পড়ার চর্চা আছে মনে হয়।
ইয়াকুব মাথা নাড়াল না।
অনেক কথা বলে ফেলেছি চল হাঁটি।
শামসুদ্দীন আহমেদ সামনে সামনে হাঁটছে,ইয়াকুব হাঁটছে পেছন পেছন।
শীতল হাওয়া বইছে,গত কয়েকদিনের মত গা জড়ানো কুয়াশা নাই।আকাশে চাঁদও উঠেছে।ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক বেড়েছে।শামসুদ্দীন আহমেদ নির্বীকার ভঙ্গীতে হেঁটে চলেছেন।সাদা ধবধবে পাঞ্জাবির ওপর ঘিয়ে রঙের শাল চাদড়।
ইয়াকুব হঠাত হঠাত কেঁপে কঁপে উঠছে।
অনেক্ষণ হাঁটার পর বড় বটগাছটার নিচে এসে শামসুদ্দীন আহমেদ থামলেন।
এই শীতের মাঝেও বটগাছের নীচটা গরম।
ইয়াকুব বটগাছের নীচটায় বেশ গরম,তুমি কি জান এর কারন কি?
জী জানি,বটগাছের শ্বাসমূল কার্বনডাই অক্সাইড নির্গত করছে,তাই।
বেশ ভালো,তোমার সাধারন জ্ঞানের দখল বেশ ভালো।
তুমি তো অনেক মেধাবী,ভালো রেজাল্ট তোমার,সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ,সমাজের বড় মানুষ হবে একদিন তাই না।
ইয়াকুব কোন উত্তর দেয় না মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও,ইয়াকুব?
ইয়াকুব চাদড়ের নীচে লুকানো ড্যাগার বেড় করে আনে,আমি আপনাকে খুন করতে চাই।
ভয় করে না শামসুদ্দীন আহমেদ
এই সুযোগটা দেবার জন্যেই আমি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি।এখন আমি কি জানতে পারি কেন তুমি আমাকে খুন করতে চাও।
ইয়াকুব হতভম্ব হয়ে পড়ে,কি বলবে খুঁজে পায় না।
আর্জান জোয়ার্দার আপনার চিরশত্রু,সে আমাকে অনেক টাকা পয়সা দিতে চেয়েছে আপনার লাশের বিনিময়ে।
শামসুদ্দীন আহমেদ হা হা করে হেসে ওঠে।
বটগাছে বসে থাকা বাদুর ভয় পেয়ে কিচকিচ শুরু করে।
ইয়াকুব,আমি বাইশ বছর গুনাইগাছা ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট।আমি মনে হয় এতটা বোকা না।নিজের বাড়ির খবর সামলাতে না পারলে গোটা ইউনিয়ন সামলাই কেমনে?
ইয়াকুব কি করবে বুঝে উঠতে পারে না।
ইয়াকুব শোন,জীবনে আসিয়ার মত অনেক মেয়ে পাবে,তোমার সামনে বিশাল সুযোগ আছে।একটা বিবাহিত মেয়ের জন্য তুমি নিজের জীবন নষ্ট করে দেবে।
তোমার জন্য আর একটা বড় সুযোগ আমি দিচ্ছি,এই ড্যাগার দিয়েই তুমি আসিয়াকে খুন করবে।বিনিময়ে পাবে আসিয়াকে লিখে দেওয়া সব সম্পদ।
ইয়াকুব মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে,হাত দিয়ে শামসুদ্দীন আহমেদের দু পা চেপে ধরে।
কাকা আমাকে মাফ করে দেন,আমি এই কাজ পারব না।
না পারলে তো,তোমাদের দুইজনকেই মরতে হবে।চিন্তা করে দেখ আরও সময় আছে।
কাকা আমি পারব না।
শামসুদ্দীন আহমেদ খুব সন্তর্পনে ইয়াকুবের পাশে পড়ে থাকা ড্যাগার তুলে নেয়।


শামসুদ্দীন হাবিব
মাওনা(১০.০৯.২০১৪)


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×