somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাপ

০২ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আবু সাঈদ অনেকক্ষণ হয় ওয়েটিং লাউঞ্জের একপাশে গুটিশুটি মেরে বসে আছে।
একেকবার কলিং বেল বাজছে আর চমকে উঠছে,কখন তার সিরিয়াল আসবে? মনে হচ্ছে যেন অনন্তকাল ধরে সে হাসপাতালে বসে আছে।
হাসপাতালের ক্লিনার,মেইন্টেনেন্সের লোকজন;ঝাড়ু,বালতি হাতে ছোটাছুটি করছে,বিশাল হাঙ্গামা। অপেক্ষারত রোগীরা নাকে রুমাল চেপে উসখুস করছে, কেউ কেউ কাউন্টারে গিয়ে আক্ষেপ ঝাড়ছে, ভাই এটা কোন কথা হল? নামকরা একটা হাসপাতাল,ভেতরে দুর্গন্ধ! সবাই তো মারা পরবে!

আর দেরি করা যায় না,যা ঘটার ঘটতে শুরু করেছে।
এই মুহুর্তে কলিং বেলটা চিৎকার করে উঠল;
চিন্তার সময় নেয় না আবু সাঈদ;কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই,সিরিয়াল ভংগ করে লাফ দিয়ে চেম্বারে ঢুকে যায়।

ড.সাদেকুল ইসলাম চোখ না তুলেই হাতের ইশারায় বসতে বললেন।
আবু সাঈদ চেয়ার টেনে বসে পড়ল।
সাদেকুল ইসলাম প্রথমে খেয়াল করেন নি,এবার চোখ মেলতেই হো হো করে হেসে উঠলেন।
এ কি করেছেন আপনি? এই চাঁদি ফাটা গরমে এসব কি পরে এসেছেন? দেখি খুলে ফেলু্‌ন, এসব জঞ্জাল!

আবু সাঈদের সারা শরীরে ভারী শীতের পোশাক,মাথায় ঊলের কানটুপি।
আবু সাঈদ খুব একটা আগ্রহ দেখায় না।
কি রে ভাই!এভাবে সমস্ত শরীর ঢেকে বসে থাকলে আপনার সমস্যা দেখব কি করে?
অগত্যা চাপের মুখে কানটুপি খুলে ফেলতে হল।
আবু সাঈদের বিদ্ধস্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে সাদেকুল ইসলাম ভুত দেখার মত চমকে উঠলেন; টকটকে লাল চোখ,ঝুলে পড়া চোয়াল,বদ্ধ উন্মাদের মত চেহারা দেখে সহজেই অনুমান করা যায় কত রাত হয় ঘুমায় না।
কি বুঝে সাদেকুল ইসলাম কলিং বেলে চাপ দিলেন,
কম্পাউন্ডার ঢুকল সাথে সাথেই; জী স্যার
স্যুয়ারেজ লাইনে সমস্যা হয়েছে নাকি?
কই না তো!
তাহলে এমন দুর্গন্ধ আসছে কোথা থেকে?
স্যার বুঝতে পারছি না,কিছুক্ষন আগে ওয়েটিং লাউঞ্জ এ ও এমন গন্ধ ছিল;এখন একটু কমেছে।
এ গন্ধে বেশিক্ষন টেকা যাবে না,মেইন্টেনেন্সে খবর দাও।
কম্পাউন্ডার বেড় হয়ে যাবার পর আবু সাঈদ আচমকা ডাক্তারের পায়ে হাউমাউ করে কেদে পড়ল,স্যার আমারে বাঁচান।
আরে আরে করেন কি?পাগল নাকি?
সাদেকুল ইসলামের রামধমকে চমকে গেল আবু সাঈদ।
চেয়ারে বসে বলুন কি সমস্যা?
আবু সাঈদ চীৎকার করে বলে ওঠে স্যার ওই দুর্গন্ধ আমার শরীর থেকে আসছে,স্যার আমারে বাঁচান ।
সাদেকুল ইসলাম যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেন না,মুখ দিয়ে অজান্তেই বেড়িয়ে যায় ও হলি শীট!

স্যার আমি বি.এস.টি.আই এ চাকরি করি,বাংলাদেশের সব পন্য আমার হাত দিয়ে অনুমোদন পায়।গত মাসে বিশ লাখ টাকার বিনিময়ে “কুদরত এনার্জি ড্রিঙ্কস” নামে এক ভেজাল পানীয়র অনুমোদন দেই।সেই রাতে ক্যাশ টাকা নিয়ে বাসায় ঢুকতেই আমার স্ত্রী প্রথম দুর্গন্ধ টের পায়।
আমার চাকরী জীবনে এমন দেড় শর ও বেশি ভেজাল পন্যের অনুমোদন দিছি।
আগে কোন সমস্যা হয় নাই?

কিছুদিন আগে বাচ্চাদের দুধে মেলামাইন পাওয়া গেল না? সেবার একটু সমস্যা হইছিল,তবে উপরে টাকা ঢেলে ঠিক করে নিয়েছিলাম।
আপনি নিজে আপনার শরীরের গন্ধ পান?
না স্যার।
স্যার আমারে বাঁচান,এই দুর্গন্ধের কারনে আমার স্ত্রী,মেয়ে,ড্রাইভার,পি এস সবাই ছেড়ে গেছে।অফিসে যেতে পারিনা,বাইরে বেড় হই এই শীতের পোশাক পরে,তবুও গন্ধ ঠেকাতে পারি না,মানুষ ঘেন্নার দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।
সাদেকুল ইসলাম কিছুক্ষন সময় নেন,
দেখুন এ সমস্যার সমাধান মেডিক্যাল সায়েন্সে আছে কি না আমার জানা নাই,আপনি বরং কোন পীরের সাথে যোগাযোগ করুন।পাপের কারনেই এটা হয়েছে।
সাদেকুল ইসলাম আর পারছেন না গন্ধে নাড়ি ভূড়ি উল্টে আসছে।
আবার কলিং বেলে চাপ দিলেন
বদর আজ আর রোগী দেখব না,বল স্যার অসুস্থ।

সাদেকুল ইসলাম গাড়ীর পেছনের সীটে বসে ক্রমাগত ঘামছেন।
আবু সাঈদের ঘটনায় সে খুব চিন্তিত,ভীত।
সে ও কি জীবনে কম পাপ করেছে?
কমিশন,ফলস টেষ্ট,ভুয়া ক্লিনিক! ওফ! সাদেকুল ইসলাম আর কিছু মনে করতে চাচ্ছে না।
আচমকা ব্রেকে পার্থিবতায় ফেরে সাদেকুল ইসলাম।
চীৎকার করে ওঠে,কি হচ্ছে এসব?ঠিকমত গাড়ী চালাও।
ড্রাইভার উসখুস করছে-
কি হয়েছে তোমার?
স্যার গাড়ীর মধ্যে দুর্গন্ধ!
দুর্গন্ধ?! কিসের?
স্যার মানুষের মলের!
সাদেকুল ইসলামের গলা শুকিয়ে আসে,প্রচন্ড ভয়ে হাত পা কাঁপতে শুরু করে।
গন্ধটা বাড়ছে মনে হয়-
ড্রাইভার ইতোমধ্যে মুখে মাস্ক পরে নিয়েছে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×