somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদেরও দোষ আছে

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাচক্র ১
নিরীহ মাষ্টার আবুল হোসেন।ছেলে মেয়ে বউ আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে তার সুখের সংসার।ছেলেটা ভার্সিটিতে পড়ে ঢাকায়।মেয়েটা চাটমোহর ডিগ্রী কলেজে পড়ে।এই মেয়ের সাথে এলাকার এক ছেলের সম্পর্ক ছিল।ঘটনাচক্রে মোবাইলে ধারিত দুজনের কিছু আপত্তিকর দৃশ্য ফাঁস হয়ে পড়ায় মেয়েটা আত্ম হত্যা করে।আবুল হোসেন যখন থানায় কেস ফাইল করতে গেলেন পুলিশ প্রথমেই তাকে বলে বসল আপনের মেয়ে ছেলেটার সাথে অকাম কুকাম করতে গেছে কেন?আর গেলই বা সেটা আবার মোবাইলে ভিডিও করতে গেল কেন?

ঘটনাচক্র ২
আবুল হোসেনের ছেলে মাত্রই ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।ফার্ষ্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে বাড়িতে ছুটিতে এসেছিল তখন এই ঘটনা ঘটল।টগবগে তরুন মাথায় আবেগ আর উত্তেজনা।সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস শুরু হলেও ভার্সিটিতে যাওয়া আপাতত হচ্ছে না।দুই মাস চার মাস যায়,কেসের তদন্তের কোন অগ্রগতি হয় না।আসামী চোখের উপর দিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়।রাত বিরাতে ভিকটিমের বাড়িতে হামলা হয়,সবারই বোঝার ক্ষমতা আছে কেন হামলা হয়,কেস তুলে নেওয়ার জন্য চাপ আসে।এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তি মীমাংসায় যেতে বলে আবুল হোসেনকে।আসামীর কি ধরনের ক্ষমতা আছে তা এখানে বলাই বাহুল্য।পরিস্থিতি সবদিক দিয়ে উপকূলে দেখে এই তরুন ছেলেটা একদিন হারিয়ে যায়।কেন যায় কেউ জানে না।এই ছেলেটা গিয়েছিল আসামীকে খুন করার উদ্দেশ্যে।জীবন বানিজ্যিক বাংলা সিনেমা না।নিজেই লাশ হয়ে পড়ে থাকে বড়াল নদীর পাড়ে।সবাই বলে আরে বাপ ওর যাওয়ার দরকার কি ছিল?আমরা তো দেখছিলাম ব্যাপারটা।সত্যিই প্রশ্ন?কেন গেল ছেলেটা?

ঘটনাচক্র ৩
তারা সাংবাদিক দম্পতি।দুজনে একই টিভি চ্যানেলে কাজ করত।একজন নিউজ প্রেজেন্টার আরেকজন নিউজ রিপোর্টার।বিয়ের প্রথম বছরেই ঘর আলো করে এক ছেলে সন্তান জন্ম নিল।সপ্নের মত চলছিল তাদের জীবন।ভাড়া বাসায় একদিন এই ছেলেটার চোখের সামনে খুন হল বাবা মা।কি করেছিল তারা?এটা কমবেশী সবাই জানে।তাদের মৃত্যু রহস্য কোনদিন খোলাসা হবে না।আসামীরাও কোনদিন ধরা পড়বে না।তারা কেন এই ধরনের রিপোর্ট করতে গেল?

ঘটনাচক্র ৪
রামুর বৌদ্ধপাড়া।দেশের এক কোণে পড়ে থাকা এদের খুব বেশী চাওয়া পাওয়া নেই।সাঁথিয়ার হিন্দুপাড়া এদের অবস্থাও একই।এরা কাজ করে খায় দায় ঘুমায়।ঝগড়া হৈ হুল্লোড় হাসি তামাশা যা করে এরা নিজেদের মধ্যে।এক রাতের বিভিষীকায় নিজেদের অস্তিত্ত তারা নতুন করে টের পেল।তারা কেন হিন্দু বা বৌদ্ধ হতে গেল?

ঘটনাচক্র ৫
ছেলেটা ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ে।প্রচন্ড আধুনিক আর প্রগতিশীল ছেলেটা টিএসসিতে আড্ডা দেয়,ছবির হাটে বসে,পাবলিক লাইব্রেরীতে বই পড়ে,জলের গান শোনে,শাহবাগে আন্দোলনে সবার সামনে থাকে,ব্লগে লেখালেখী করে আর সবকিছুর সাথে জড়িয়ে থাকে তার দেশমাতৃকা।দেশের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক অবস্থা,জনগন সবকিছু তার চিন্তা আর মননে ফুটে ওঠে।ব্লগে সেটাই সে প্রকাশ করে দ্যার্থহীনভাবে।ছেলেটা একদিন দোয়েল চত্বর থেকে হেঁটে আসছিল টিএসসির দিক।হঠাত পেছন থেকে আসা চাপাতির আঘাতে মাথার খুলি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ছেলেটার।কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে খুন হতে হল।এই ছেলেটা কেন ব্লগ লিখতে গেল?

ঘটনাচক্র ৬
আকবর আলী মাষ্টার,বিন্যাবাড়ি প্রাথমিক স্কুলের হেড মাষ্টার রিটায়ার করেছেন।চুল দাঁড়ি পেকে সাদা হয়ে গেছে।এককালীন পেনশনের টাকা দিয়ে হজ করবেন আর একটা দেয়াল পাকা করে ঘর তুলবেন এটাই তার অন্তিম ইচ্ছা।চাকুরীর বেতন দিয়ে যৌথ পরিবার চালাতে গিয়ে বেচারা নিজের বাড়িটাও ঠিকমত করতে পারেন নাই।এই লোকটা যখন রেজিষ্ট্রী অফিসে গেল টাকা তুলতে,তাকে জানানো হল পেনশনের টাকা তুলতে প্রচুর কাপজাপ,এক লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে।এমনিতেই শান্তশিষ্ট আকবর আলী ক্ষেপে গেলেন ঘুষের কথা শুনে,অফিসারের সাথে বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে মাইনর ষ্ট্রোক করে শরীরের একপাশ প্যারালাইজড হয়ে গেল তার।কেন তিনি উত্তেজিত হয়ে বাকবিতন্ডায় গেলেন?

ঘটনাচক্র ৭
জরীর মায়ের কয়েকদিন হল খুব অসুখ।জরীর বাবা পরিচিত ডাক্তার বন্ধুদের পরামর্শ নিয়ে এতদিন ঠেকা কাজ চালিয়েছে।এখন আর পারা যাচ্ছে না হাসপাতালে নিতেই হবে।হরতাল অবরোধের মাঝে রাস্তায় জরীর মাকে নিয়ে বেড় হতে বড়ই অনীহা জরীর বাবার। আজ আর পারা গেল না।অফিস শেষ করে সন্ধ্যার পরে বেড় হলেন স্ত্রীকে সাথে করে।শাহজাহানপুর ইসলামিয়া হাসপাতাল খিলগাঁও থেকে বেশী দূরে নয়।সি এন জি নিয়ে বেড় হল তারা।হাসপাতাল চোখে দেখা যাচ্ছে,এমনসময় আচমকাই তরল পেট্রলের বোতল আর আগুন এসে পড়ল সি এন জির ভেতর।কিছু বুঝে ওঠার আগেই চালকসহ জরীর বাবা মার শরীরের বেশীরভাগ যায়গা পুড়ে গেল।অসুখ হতেই পারে তাই বলে হরতালে বেড় হতে হবে কেন?আর সি এন জি ড্রাইভারদেরই বা কি বলব!একদিন না খেয়ে থাকলে কি হয়?এই হরতাল অবরোধের ভিতরেও বেড় হতে হবে?

ঘটনাচক্র ৮
কাদের জনতা ব্যাঙ্কের চাটমোহর শাখায় জমানো টাকা তুলতে এসেছে।সারা জীবন ভিক্ষে করে জমানো পঞ্চান্ন হাজার টাকা।একমাত্র মেয়ের বিয়েতে খরচ করবে সে।বাজারের ব্যাগে টাকা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কমবয়েসী এক ছেলে বলল এহে!চাচা আপনের পাঞ্জাবীতে গোবর ভরে আছে,আহারে বেচারা বুড়ো মানুষ।চাচা ভেবে পায় না তার পাঞ্জাবীতে গোবর আসল কোথা থেকে।চাচা আসেন আমার সাথে পাশেই টিউবয়েল আছে ধুয়ে দেই,চাচা ভালো মনে ছেলেটার সাথে যায়।টিউবয়েলে চাচা পেছন ফিরে পাঞ্জাবী পরিষ্কার করছে ছেলেটা টিউবয়েলের হ্যান্ডেলে চাপ দিচ্ছে,টাকার ব্যাগ পাশে রাখা।হঠাত তার খেয়াল হল কই পানি তো পড়ছে না!কাদের পেছন ফিরে দেখল ছেলেটাও নেই আর তার টাকার ব্যাগটাও নেই।সবাই ঘটনা জানার পর বুঝে গেল এটা আসলে গোবর গ্যাং এর কাজ।লোকটা কেন ছেলেটার মিষ্টি কথায় ভুলতে গেল?

ঘটনাচক্র ৯
আনছার মোল্লা গুনাইগাছা ইউনিয়ন পরিষদে এসেছে রিলিফের গম নিতে।এই প্রথম সে রিলিফের কার্ড পেয়েছে।কার্ডে লেখা আছে প্রতি ছয় মাস পর পর সে বারো কেজী গম পাবে।একটা ব্যাপার সে খেয়াল করল বারো কেজী দেওয়ার কথা থাকলেও সবাইকে দশ কেজী করে দেওয়া হচ্ছে।আজব! কেউ কিছু বলছেও না,পোটলা নিয়ে কেটে পড়ছে।বিপত্তি বাধাল আনছার মোল্লা নিজে,তার পালা আসলে বেঁকে বসল বার কেজি ছাড়া সে নেবে না।নেবে না তো নেবেই না।শেষ পর্যন্ত গলা ধাক্কা খেয়ে গম না নিয়েই তাকে তাকে পরিষদ থেকে বেড় হয়ে আসতে হল।আনছার মোল্লা কেন ঠ্যাটামী করতে গেল?

ঘটনাচক্র ১০
ইবু খেতে বসেছে।ইলিশ মাছের বড় পেটি তার পাতে।কয়েকদিন হল ছেলেটা খুব করে ইলিশ মাছ খাবে খাবে করছিল।বিপত্তি হল মাছ খেতে গিয়ে ইয়া বড় কাঁটা বিধল তার গলায়।ভাতের দলা,বিড়ালের পা ধরা কোনকিছুতেই কাজ হল না।গলা ফুলে গেল।পরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে সমস্যার সমাধান করা গেল।আরে বাপ এত প্যানা দিবি তো ইলিশ মাছ খাস কেন?


মহামতি নিউটন,আলবার্ট আইনষ্টাইন,এডিসন আরও অসংখ্য মহামতিরা কেনর উত্তর খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করেছেন অনেক কিছুই পৃথিবী পালটে দেওয়ার মত।এমনই অসংখ্য কেনর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে আমাদের জীবন,কিন্তু এইসব কেনর কোন উত্তর নেই।গলায় কাঁটা ফুটবে বলে আমরা মাছ খাব না,খুন হব বলে ব্লগে লিখব না,পেট্রল বোমা,ছিনতাই,প্রতারনা হবে বলে আমরা বাইরে বেড় হব না।অন্যায়ের প্রতিবাদ করব না,মুখ বুজে সহ্য করব সব,হিন্দু বৌদ্ধ হব না,খুন হতে হয় এমন রিপোর্ট করব না।শুধু ছোটবেলায় পড়া সেই নন্দলালের মত ঘরে বসে বসে খাব আর নিজের মাথার চুল ছিঁড়ব।তাহলে হয়ত গলা ধাক্কা খেতে হবে না,খুন হতে হবে না,পেট্রল বোমায় দগ্ধ হতে হবে না,উত্তেজিত হয়ে ষ্ট্রোক হবে না,জমানো টাকা খোয়াতে হবে না।শেষ বেলায় স্বাভাবিক মৃত্যুর একটা সম্ভাবনা পাওয়া যেতেও পারে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×