ঘটনা ১
দুই দিন আগে আমি আর আমার দুই কাজিন নিপুন আর আমিন যাই নিউমার্কেট।আমিনের উদ্দেশ্য কিছু বই কেনা।আমার আর নিপুনের উদ্দেশ্য বই কেনার ছুতোয় কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করা।নিউমার্কেট এর পিছনের দিকের গেট দিয়ে ঢোকার সময় শেষবার যখন তিনজন একত্রে নিউমার্কেট আসি তখনকার একটি ঘটনা মনে পড়ে যায়।বাকি দুইজনকে তা বলতেই তিনজন একত্রে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি।
বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা।এইচএসসি ১ম বর্ষে সবেমাত্র ভর্তি হয়েছি।কলেজের বই কেনার জন্য তিনজন একত্রে নীলক্ষেত আসি।ভাবলাম বই কেনার আগে একবার নিউমার্কেটে ঢুঁ মেরে যাই।পিছনের গেট দিয়ে ঢোকার পরে তিনজন কথা বলতে বলতে অগ্রসর হতে থাকি।আমার বামে আমিন আর ডানে নিপুন হাঁটতে থাকে।বেশ কিছুদূর এগোনোর পরে নিপুনের একটা কথা শুনে হাসি পায়।এক পর্যায়ে আমিনের পিঠে একটা চাপড় দিই।হাতটা গিয়ে পড়ে তার প্যান্টের ব্যাক-পকেটের উপর।হাতে মানিব্যাগের স্পর্শ টের পাই।মজা করার জন্য পকেটের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দেই মানিব্যাগটা বের করার জন্য।আমিন এক ধাক্কায় আমার হাতটা সরিয়ে দেয়।একটু অবাক হয়ে আমিনের দিকে তাকাই এবং ভিরমি খাই।কোথায় আমিন!তার জায়গায় দাঁড়িয়ে এক বয়স্ক লোক।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি আর নিপুন দুইজনেই থ হয়ে যাই।হাত-পা নাড়াতেও যেন ভুলে যাই।ভদ্রলোক আর আমি ১৫-২০ সেকেন্ডের মতো একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থাকি।এমন সময় আমিন পিছন থেকে ডাক দেয়।পিছনে তাকিয়ে দেখি আমিন এক জায়গায় বসে জুতার ফিতা বাঁধছে।কখন সে আমাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দুইজনের একজনও টের পাইনি।
দৌড়ে আমিনের কাছে যাই।যত দ্রুত পারি তিনজনে গেট দিয়ে বের হয়ে যাই।পিছনে তাকিয়ে দেখি ভদ্রলোক তখনো একদৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।আমি স্যরি বলার জন্য হাত তুলি।ভদ্রলোকও দেখি মাথা নাড়লেন।মনে মনে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা আর ওই ভদ্রলোককে হাজারটা ধন্যবাদ দিতে থাকি।কারণ ওই জায়গায় আমি থাকলে কি করতাম বলা মুশকিল।হয়তো “পকেটমার পকেটমার” বলে চিৎকার শুরু করতাম।ওই সময় ওই ভদ্রলোক এই চিৎকারটা করলে আমার পরিণতি কি হইত কে জানে!কারণ ঢাকা শহরে পাবলিকের পিটুনির থেকে ভয়ঙ্কর কিছু আর নাই।আর নিউমার্কেটের মতো জায়গায় তো পাবলিক চোর ধইরা মাইর দেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে।ওইদিনের সম্ভাব্য পরিণতির কথা মনে পড়লে এখনো ভয় পেয়ে যাই।
ঘটনা ২
এই ঘটনার সাথে আগের ঘটনার কোন সম্পর্ক নাই।তারপরেও এই ঘটনাটি শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছি না।এই ঘটনাটি অবশ্য এলাকার অন্যদের কাছ থেকে শোনা।
এটিও বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা।নতুন বাসা শিফট করেছি মাত্র।এলাকার এক বড় আপুর নতুন বিয়ে হয়।তার হাজবেন্ডকে আমরা ভাইয়া বলেই ডাকতাম [নামটা নাহয় গোপন থাকুক]।তিনি বিয়ের পরে তিন মাস তার শ্বশুরবাড়িতে থেকে লেখাপড়া করেন।লেখাপড়া শেষ হলে শ্বশুরবাড়িতে থেকেই চাকরি খুঁজতে থাকেন আর মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিতে থাকেন।কয়েকদিন পরে এলাকায় একটি ভিডিও ক্যাসেট-সিডির দোকান খোলা হয়।দোকানটির উদ্যোক্তা ছিলেন এলাকার কয়েকজন বড় ভাই।এই উপলক্ষ্যে তারা সেই ভাইয়ার কাছে গেলেন।
“ভাইয়া, আমরা নতুন একটা সিডির দোকান খুলতেছি।”
“ও আচ্ছা।ভালোই।”
“তো আমরা চাচ্ছিলাম যে দোকানটা আপনি উদ্বোধন করেন।”
(খুশি হয়ে)“আমি কেন?এলাকায় তো আরো অনেকে আছে।”
“কয়েকজনকে বলা হইছে।সবাই ব্যস্ত।আপনি তো মনে হয় ফ্রি আছেন।”
ভাইয়া হয়তো মনে একটু কষ্ট পেলেও মুখের অভিব্যাক্তিতে তা বোঝা যায় না।
“কখন আসতে হবে?”
“কালকে বিকালে।ফ্রি আছেন না?”
“হ্যাঁ।দোকানের নাম কি ঠিক করলা?”
“ঘরজামাই ভিডিও ক্লাব।”
তারপরে ভাইয়ার অনুভূতি জানা আর সম্ভব হয় না।পরের দিন সকালেই তাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে দেখা যায় এবং পরবর্তী ৬ মাসে এলাকায় আর তাকে দেখা যায় না।পরের দিন কোন অনুষ্ঠান ছাড়াই দোকানটা যাত্রা শুরু করে।নামটা অবশ্য অপরিবর্তিত থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




