মোবাইলেই ভাঙ্গা ভাঙ্গা নেট দিয়ে মহানগর ২ দেখলাম খুব মনোযোগ দিয়েই। দারুণ উপভোগ্য লাগলো। প্রায় বারো ঘন্টার জার্নি শেষে এখন বাসায় ফিরলাম। আক্ষরিক অর্থে এখনই। কাপড় না পাল্টে, কেবল লাগেজ বাসায় উঠিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসলাম। মহানগর ২ সম্পর্কে কিছু লেখার তাগিদে সরাসরি লিখতে বসলাম। আশফাক নিপূণকে এবং পুরো টিম করে অভিনন্দন। এ বিষয়ে ব্যস এতটুকুই।
আমার নিজের সমালোচোনা আমার উপভোগ্যতা নিয়েই। কেন এত উপভোগ করলাম আমি? কেন আমি এত যুক্ত বোধ করলাম ওসি হারুনের সাথে? যেই ব্যক্তি হিরোকে আমি চাই সিস্টেমের কোণায় কোণায় তাকে পর্দায় দেখতে পারার আনন্দ? একটা সাময়িক গণতান্ত্রিক সুখ? কি সম্পর্ক এর সাথে ফ্যাসিজমের? এই প্রশ্নগুলো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতেই থাকলো। ডাইরেক্টরের সাহসের বিষয়টা নিয়ে বাহাস করতে চাইছেন কেউ কেউ আমি মনে করি সেই “সাহসের” তালিটুকু তার প্রাপ্য। বিশেষ করে এই সময়ে এসে। প্রবল সেন্সরের এবং আত্ম সেন্সরের এই কালে।
আরেকজনের ব্যখ্যায় দেখলাম তিনি ওটিটি-র স্বর্ণযুগের কথা বলছেন, “ব্লগের স্বর্ণ যুগের” একজন হিসেবে সেখানেও কিছুটা কানেক্ট করতে পারলাম।
তবে অভিনেতা, কলাকূশলী, বা ডাইরেকশনের বাইরে না গেলে আমার মত করে জিনিসটা বোঝা মনে হয় হবে না।
১. প্রথমত মহানগর ২ এর বাস্তব ঘটনাজনিত যোগাযোগে যে উচ্ছাস এবং পরিণতি সেটা ভীষণ অবদমিত এক সময়েরই ইঙ্গিত দেয়।
২. কেন তাহলে শনিবারের বিকেল আটকা? কেন তাহলে শামসুজ্জামান আটক হন? সেই আটক হওয়াটাকে আরো নাটকীয় করে তোলা হয়?
আমার মনে হয় পুলিশের ইমেজ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এসবের গণতান্ত্রিক ইমেজের জন্য যে রাষ্ট্রীয় নাটকের দরকার হয় সেসবের জন্য এসব কন্টেন্ট নিয়ে উচ্ছাসের এক লহমা ঈদ বিনোদনে একরকমের গণতান্ত্রিক আশা তৈরি করে। আবার এটারও ইঙ্গিত করে যে কোণায় কোণায় ওসি হারুনের মত চরিত্ররা আছেন। কিন্তু আদৌ কি আছেন? থাকতে পারছেন? থাকলে কতদূর তার সীমানা? যদিও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে ফ্যাসিজম কায়েমে এই বাহিনীর সবচেয়ে অপব্যবহার হয়েছে এবং স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। একটা ভীষণ নির্ভরশীল সিম্বায়োটিক সম্পর্ক তৈরি করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত ডাইরেক্টর সে বিষয়ে ভীষণ ওয়াকিবহাল এবং সেগুলোকে এম্বিয়েন্ট সাউন্ড হিসেবেই রেখেছেন। ফলে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নয় বা প্রোজেক্ট হিসেবে উনাকে আমি বিচার করতে চাই না। তবে ফ্যাসিজমের অর্ন্তনীহিত স্রোতধারা যা আমাদের অবচেতনকে গ্রাস করে রেখেছে তাকে আমাদের দেখতে পারতে হবে।
আয়না ঘরের অস্তিত্ব নিয়ে সিনেমা বানালেই, একস্ট্রা জুডিশিয়াল কিলিং-কে হাজির করলেই ফ্যাসিজমকে বোঝা যাবে তা নয় (যদিও কাজটুকু ভীষণ প্রশংসার)। আমি মনে করি ফ্যাসিজম আশফাককে ক্রমাগতভাবে ব্যক্তির হিরোইজমের দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। আমার মনে হয় ওসি হারুনের বদলে যদি দেখানো হত ছাত্র সমাজ দলে দলে এসে থানা ঘেরাও করে সেই ফাসিয়ে দেয়া মাসুমকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে তাহলেই ওটিটি এটাকে দেখাতে দিতো না।
আমি মনে করি এইসব ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে যেসব বাস্তবিক সমাধান তার ঈঙ্গিতমাত্র থাকলেও এই সিরিজ আরো বিরুদ্ধতার মুখোমুখি হোত। এটা হল সেই মেলাংকলি যা থ্রীলারের উত্তেজনা দেয় এবং হিরোও তৈরি করে। কিন্তু আমাদের এখন একক হিরোর দরকার নেই। আমাদের দরকার বোকাবোকা সামষ্টিক মানুষ যারা নিজেরা বিভক্ত না হয়ে সরাসরি ফ্যাসিজেমর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৩:১০