-------------------------------
রুপালি জোৎস্নার রাত্রি| রেল
লাইনের পথ ধরে হাঁটছে কাব্য| মন
খারাপের কোনো কারণ
খুঁজতে নেই,তবুও কাব্য
রুপালী জোৎস্নার
রাত্রিগুলোতে সেই মন খারাপের
কারণগুলো খুঁজে বেড়ায় এই রেল
লাইনের পথ ধরে|মানুষ
বলে পৃথিবী নাকি রহস্যময়,আমার
তো মনে হয় মানুষের মাথায় ই
রহস্যময়|
কি ব্যাপার! কুকুরটা গেল কই?
হয়তো কুকুর ও চায়না আমার
সাথে থাকতে| কাব্য
আনমনে রেললাইনের পথ
ধরে সামনের দিকে হাঁটছে|
সামনে হাঁটতেই একটি দৃশ্য তার
চোখে পড়ল, ছোট
একটি ছেলে তার
সমবয়সী কিংবা তার ছোট হবে এমন
একটি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে|
কাছে যেতেই আঁতকে উঠল সে| এই
ছেলেটিই সেদিন এক মহিলার
ভেনিটি ব্যাগ ছিনতাই
করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিল|
-কিরে এইভাবে কাঁদছিস কেন?
-খবরদার আমার বইনটার গায়ে হাত
দিবেন না| যা মারার
আমাকে আমাকে মারুন…
-আরে ভয় পাইতেছিস ক্যান?
আমি বাঘ-ভাল্লুক কেউ না,তোর
মতই একজন খুব সাধারণ ছেলে| আচ্ছা,
তোদের দুজনের নাম কি?
-আমার নাম সাকিব আর ওর নাম
তুলি|
-তোর নামটা অনেক সুন্দর| তুই
কি জানিস যে,তোর
নামে বাংলাদেশের একজন বড়
ক্রিকেটার আছে কিন্তু তুই
তো তার নামেরy
অমর্যাদা করতেছিস| কি করুম
ভাইজান? পেট তো আর
চলে না| এই যে আমার সাথে ছোট
বইনটারে দেখতাছেন,ও কাল রাত
থেকে কিছু খায় নি| শুধু
মা মা বলে কাঁদতেছিল| তয় হেয়
জন্য কিছু টাকা জোগাড় করার জন্য
বের হইছিলাম| যা পাইছিলাম
সেইটা ইদ্রিস ভাই নিয়ে গেছে|
-ইদ্রিস ভাইটা আবার কে? তোর
বাবা-মা কোথায়?
-আমার বুদ্ধি হবার পর থেইক্যা বাপ-
মারে চোখের দেখা দেহি নাই|
ইদ্রিস ভাই
আমারে নাকি ডাস্টবিনের কাছ
থেইক্যা তুইল্যা আনছিল| এই
যে তুলিরে দেখছেন,একেও
আমি আমি ডাস্টবিনের পাশ
থেকেই তুইল্যা আনছি|এদিক
থেইক্যা আমাগো দুজনের মধ্যে খুব
মিল আছে,তাই না ভাইজান?
-হুম(চোখের পানি লুকিয়ে)
-ভাইজান আজ সকালে এক মহিলার
ব্যাগ থইক্যা দুইশত
টাকা মারছিলাম,সেইটাও ইদ্রিস
ভাই নিয়া গেছে| কি করুম কন?
না দিলে রাইতে ভাবি ভাত দিব
না| কাল রাইতে খুব জ্বর আইছিল|
ভাই রে কইছিলাম,বলছিল
যে বেশি প্যান প্যান
করবি কইয়্যা দিলাম|এখনো জ্বর
আছেই| আচ্ছা ভাইজান কারেন্ট কহন
যাইবো?
-কেন?কারেন্ট গেলে কি হবে?
-কারেন্ট গেলে অন্ধকারের
মধ্যে ইনকাম বেশি হয়|কেউ
সহজে ধরতে পারে না| শরীর টাও
ভালা নাই| দুপুরে কিচ্ছু খাই নাই|
-তোর আর আমার অবস্থা একই|পার্থক্য
হলো তোর বাবা-মা নেই আর
আমার আছে|এই যে তোর হাতে এখন
যেমন টাকা নেই তেমনি আমার
পকেট শূন্য| ভালোবাসার
মানুষটি একমাত্র এই শূন্য
মানিব্যাগের কারণে চলে গেছে|
-কি কন ভাইজান?
-১৪ই
ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে সে একটি ফোন
গিফ্ট চাইছিল| আমার কাছে তখন
কোনো টাকা ছিল না,তাই
গিফ্টটা দিতে পারি নাই| আর
সেজন্য
সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে|
আসলে জানিস কি,আমাদের
মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের
ছেলেদের কাউকে ভালোবাসার
অধিকার নেই....
-ভাই কাইন্দেন না| এখন
মানিব্যাগে টাকা না থাকলে মেয়েরা আফনেরে ভালো-
টালো বাসবো না,আমি কইলাম...
-ঠিক বলছিস রে...
-ভাইজান কিচ্ছু খাইছেন?আফনের
মুখখানা শুইখ্যা রইছে?
-সকালে খেয়েছি|
দুপুরে খালা আসছিল কিন্তু চাল
নেই তাই রান্না হয় নাই|
বাড়িতে টাকার জন্য ফোন
করেছিলাম| বাবা বলল যে,এখন
কাছে এক কানা করিও নাই|গরু
বিক্রি করে টাকা দিবে বলছে|
এবার বন্যাতে যেটুকু ফসল ছিল,তাও
নষ্ট হয়ে গেছে...
-ভাইজান দেহেন আল্লার
কি কাম,আমাগো দিকে মুখ
ফিরাইছে,কারেন্ট চইল্যা গেছে|
এই তুলি চল,এই সুযোগে কিছু ইনকাম
কইরা নিয়া আসি| ভাইজান
থাকেন,জলদি যাইতে হইবো নইলে আবার
কারেন্ট আয়া পড়ব...
কাব্য হাঁটছে রেল লাইনের পথ
ধরে| কুকুরটাও চলে এসেছে|
-কিরে তুই কিছু খাইছিস?(ঘেউ
ঘেউ করে লেজ নাড়াইতেছে)
তার মানে কুকুরটা আমার
কথা বুঝতে পেরেছে আর তার
উত্তর দিল,হ্যা খাইছি…
আসলে কুকুর আর আমাদের
মাঝে পার্থক্য
হলো সে কথা বলতে পারে না আর
আমরা পারি|আমাদের
মতো তার ও বোঝার
ক্ষমতা আছে|
কুকুরটা তার আগে আগে যাচ্ছে|
কাব্য হাঁটছে| চাঁদটাও তার
সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে তার
সাথে সাথে চলছে....