অভ্র অফিসের কাজে ঢাকা যাচ্ছে ট্রেনে করে।
অভ্র নামকরা একটা কম্পানিতে জি.এম পদে চাকরি করে। কিন্তু তার চলাফেরা সাধারণ মানুষের
মতো।
খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে সে বড় হয়েছে। দারিদ্রতা কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে সে তার নিজের
চোখে দেখেছে। ছোটবেলা দেখতো বাবা সারাদিন কাজ করে দিনের শেষে পাওয়া সামান্য
টাকাগুলো দিয়ে নেশা করে বাড়ি ফিরতো। এসেই মাকে প্রচন্ড মারধোর করতো। অনেক
কষ্টে মা বাড়ি বাড়ি ছুটার কাজ করে সামান্য টাকা কয়টা দিয়ে ছেলেকে লেখপড়া শিখায়। আজ
সে প্রতিষ্ঠিত। এখন তার কাছে টাকার অভাব নেই। ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে যায়।
সাব ফুল নিবেন, ফুল। ভাবি খুব পছন্দ করবে। নেন না সাব। সারাদিন কিছুই খাই নাই।
একটা শুধু ৫ টাকা। দুইটা নিলে ৮ টাকা। তিনটা নিলে ১৩টাকায় দিয়া দিমু। মেয়েটা বলেই যাচ্ছে।
অভ্র মেয়েটাকে থামিয়ে একটা ফুল নেয়। একশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দেয়।
-এই নে। এই টাকাটা দিয়ে ভালো কিছু কিনে খাস।
মেয়েটা খুশিতে কেঁদে দেয়।
-সাব আপনি অনেক ভালো। আল্লাহ আপনের অনেক ভালা করবো।
মেয়েটা টাকা নিয়ে চলে যায়।
মাগরিবের আজান দিচ্ছে। অজু করতে হবে। নামাজ পড়ার জায়গা খোজার জন্য সিট থেকে উঠে।
কিছুদূর যাওয়ার পর ঐ মেয়েটাকে দেখে। এক কোনায়
গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকা রোগা একটা মহিলাকে খাওয়াচ্ছে। অভ্র
বুঝতে পারে মহিলাটা মেয়েটার মা।
মেয়েটা তাকে মিথ্যে বলেছিলো। সে দূরে দাড়িয়ে দেখে মেয়েটা কিনে আনা সবটুকু খাবারই
মাকে খাইয়ে দেয়। অভ্রর হটাৎ করে তার মায়ের কথা অনেক মনে পড়ে। তখন মাকে সুখ
দিতে পারেনি। টাকার অভাবে মায়ের চিকিৎসা করাতে পারে নি। আজ তার টাকা আছে, কিন্তু
মা নেই। আজ অভ্রের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে মা আজ আমার টাকা আছে অনেক টাকা।
এই মেয়েটার জন্য অভ্রের অনেক মায়া হয়.. সে আর কোনো মাকে চিকিৎসার অভাবে কষ্ট
পেতে দেখতে পারে না।
ঐ রোগা মহিলাটাকে সে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সব খরচ সে দেয়।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে... আর কোনো মাকে সে টাকার অভাবে মরতে দিবে না।
-----------------------------------