এই চুর... চুর... চুর...!
আশপাশের লোকজন একত্র হয়েছেগেছে। কিছু ছেলেরা অনেক দৌড় ঝাপের পর চোরটাকে ধরল
মাত্র। চোরটাকে ওরে মোটামুটি ভালোই গুতাইছে! এখনও অনেকে ইচ্ছা মত মারছে। কেমন যেন যার
যার রাগ সে এসে ঝেরে যাচ্ছে। চোর বেচারার অবস্থা পুরাই তেরটা! দাদার শরীরের অনেক
জায়গা থেকেই রক্ত ঝরছে। চেহারা থেকে আরো বেশি ঝরছে। চেহারাটা চেনার কোন উপায় নেই।
গনধোলাই যাকে বলে।তার পুরাটাই তার উপর পতিত হইছে। ভাগ্য ভালো বেচে আছে দাদায়। আমার
তো মনে হয় ওর হায়াত অনেক। এতো গুতা খাওয়ার পরও চোখে এক ফোটা পানি তো আসলই না।
কাঁদারও ভান করল না!
ওর আক্রান্ত চেহারা দেখে আমার খুব মায়া লাগছিল।
দাদারে গাছের সাথে কষে বেধে রেখেছে। ছোটার কোনই উপায় নেই। লোকমুখে শুনলাম মহল্লার
বড় মিয়ারা এর একটা হেস্তনেস্ত করবে। কখন যে মিয়চাবরা বইবো? আর কখন বেচারা এই গনধোলাই
থেকে রেহাই পাবে, আল্লাই জানে। সত্যি কথা বলতে কি, মোর ওরে দেইক্কা, হেইয়া দরদ
লাগতা ছিল।
সকাল ন'টা বাজে। বড় মিয়ারা অনেকেই উঠানে চেহার পেতে বসেছেন। মজলিস পুরা গরম। আমার
দাদাজান আর বাবাজান বাড়ি না থাকায় এ কঠিন কাজে আমাকেই অংশ নিতে হচ্ছে। যদিও
এগুলো খুব অপছন্দ করি। কিন্তু কি আর করার, চাচাজানের ঝারি খেয়ে এক পর্যায় আমাকে আমার
বাড়ি থেকে বড় মিয়া হিসাবে উঠানের চেহার দখল করতে হল। যেসব বড় মিয়ারা বসে আছেন
তাদের তুলোনায় আমি কিছুই না। বেজাই ছোট। যাইহোক দায়িত্ব ঘারে পড়লে উপায় থাকে না.
পালন করতেই হবে।
চোরটাকে উঠোনের মাঝে বসানো হয়েছে। মিয়াছাবরা তাকে ঘিরে বসে আছে। বিভিন্নজন
বিভিন্ন প্রশ্ন করছে।
>>ঐ বেটা! তুই কিতাল্লাই এনো চুরি করবার আইছস?
(কোন উত্তর নেই! মারের ভয় দেখালে বলতে শুরু করল।)
>>দাদা আই এনো চুরি করবারলাই আইতান্নো!
>>তো কিতাল্লাই আইছস?
>>দাদা! আই কোলারতন যাইতাছিলাম। কিচু পোলাপাই আরে জোর কইরা ধইরা আনচে!
চেযারমেন ছাব হেইয়া জোরে একটা চকটান মারল। আর বলল।
>>তোর এমতেই ধইরা অনচে? সত্যি কইরা ক...!
>>না! দাদা! আই হাচা কইতাচি। আই এগুন জীবনেও করিলাই! আন্নেরা আরে একবার বিশ্বাষ যান!
>>তোর বাড়ি কই!
>>উত্তর পারা!
>>পশ্চিম পারায় আইছস কে?
>>দাদা! আই পশ্চিম পারার স্যারে দারে পড়ি।
>>ভোর ছয়টার সময় আবার পড়া কিসের?
এই বলে চেয়ারমেন ছাব দুইটা চটকানা মারলেন।
ছেলেটা এবার জোরে হাওমাও করে কেঁদে উঠল।খুব কাদতে লাগল। কাহীনিটা কেমন
ঝাপসা মনে হচ্ছে।
কিছু পোলাপান এ অবস্থায় চোরটাকে উত্তম মাধ্যম দিল।
মিয়াছাবরা কোন মিমাংশা তো করতে পারলই না, বরং চোরটাকে আচ্ছামত মারল।
দুপরে চোরটাকে পুলিশে দিয়ে দিল। আর বেজাই খারাপ লাগছিল। কিছু করার নাই। চুপ
করে বয়সা রইলাম। মিয়াছাবরা কি করল? কিছুই করতে পারল না।
দুমাস পর। কাহীনি ফাঁস। আসলে চুরি করছে অন্য লোকজন। হেতিরা আমগোর চেয়ারমেনের লোক
লষ্কর। যারা ছেলেটাকে তুমুল দৌড় ঝাপ করে ধরছিল, তারাই আসল চোর।
এখন আর কোন বিচার নেই। মিয়াছাবগো কোন মাথা ব্যাথা নেই! অথচ নির্দোষ
ছেলেটাকে মারছে তো ফাওঁ আবার পুলিশেও দিয়েছে। এখানেই থামেনি। যা চুরি হয়েছে , সব ওর
থেকে আদায় করে ছেড়েছে! আর মান-ইজ্জত তো গেছেই। এটা তো আর গোনায় পড়ে না।
¤¤¤¤¤
আজব পৃথিবী। তার ঘটে যাওয়া কান্ডগুলোও আজব ও র্স্পষকাতর। আমাদের গ্রাম বাংলায় এমন
ঘটনা অহরহ ঘটেছে। এখনও ঘটছে।
ধরলাম সে চুরি করেছে। কিন্তু তার উপর এমন নির্যাতন চালানো হবে কেন? তার জন্য কি কোন
রাস্ট্রিয় আইন নেই? তার কোন শাস্তি নির্ধারিত নেই? অবশ্যই আছে। তারপরও আমরা কেন এমন
নেক্কারজনক কাজ করছি। কেমন যেন মনে হয়, চোর ধরা খেলে আমরা মাইরের প্রাক্টিস শুরি করি!
মনে হয় মাইরের সুযোগ পাইয়াগেছি। সুযোগের কেউ হাত ছাড়া করে?
হায়রে মানবতা! হায়রে মানুষ! আজব প্রাণী!
আমাদেরকে আসলেও এগুলো বর্জন করা দরকার!