১.
আঁচল চরম মাত্রায় কনফিউজড ৷ তার এত্তোগুলা লাল শাড়ি ৷ সব গুলাই সুন্দর ৷ কিন্তু কোনটাতে
অন্নেক সুন্দর লাগবে নিজেকে সেইটা বুঝে উঠতে
পারছে না সে ৷ আঁচল দেখতে ভয়ংকর সুন্দর ৷ ভয়ংকর সুন্দর মেয়েদের প্রায় সব কাপড়েই ভালো
মানায় ৷ শাড়িতে তো বটেই ৷ তবে আজকে কেবল সুন্দর নয় বরং অন্নেক সুন্দর লাগা জরুরী ৷ কারণ
আজ আঁচল স্পেশাল একজনের সাথে প্রথমবারের মতো দেখা করবে ৷ স্পেশাল মানুষটার নাম বৃত্ত
৷ নামের মতোই ছেলেটার মুখটা কিছুটা গোলগাল ৷ আঁচল ওকে গুলু গুলু বয় বলে ডাকে ৷ গুলু গুলু বয়
একটু আগে মেসেজ দিয়েছে পাঁচটার মধ্যে রেস্টুরেন্টে উপস্থিত থাকে যেনো ৷ আঁচল গত ঈদে
কেনা লাল শাড়িটাই বেছে নিলো ৷ মনে খুশখুশ থাকলেও উপায় নেই, সময় কম আঁচলের হাতে ৷
ঝটপট নিজেকে সাজাতে শুরু
করেছে আঁচল ৷
.
বাহিরে কুয়াশা পড়া শুরু হয়েছে ৷ রেস্টুরেন্টের এক কোণায় চেয়ারে বসে আছে আঁচল ৷
সামনে টেবিলের ওপারে বৃত্ত ৷ অনলাইন আর অফলাইনে কোনো পার্থক্য নেই ছেলেটার ৷
ফেসবুকে ছেলেটা যেমন ভদ্র সদ্র ভাবে চলে ৷ আজকেও একদম ভদ্র গেট আপ নিয়ে এসেছে ৷ চুল
গুলো একপাশে আচড়ানো, ফুল হাতা
শার্টের হাত সামান্য গুটানো, ক্লিন সেভড ৷ আঁচলের এসব ভালো লাগে ৷ ফেসবুকে পরিচয়ের
প্রথম থেকেই এই ছেলেটাকে পছন্দ করে আঁচল ৷ এমন ভদ্র নম্র ছেলেদের সাধারণত কেউ পাত্তা
দেয় না ৷ কিন্তু আঁচলের কেনো জানি মায়া লেগেছে ছেলেটার জন্যে ৷ সেই মায়া থেকে
কখন যে ছেলেটার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তা বুঝে উঠা হয় নি তার ৷
.
- আঁচল কি খাবে?
-না এখন না ৷
- কিছু তো খাও! কফি?
- কফি তেমন খাই না তো ৷
-খেয়ে দেখো ভালো লাগবে ৷
-তুমি যে একটা কফি খোর বলোনি তো কখনও গুলুগুলু বয় ৷
-আরে নাআ মানে... এই ওয়েটার কফি
দাও তো দুটা ৷
.
বৃত্ত লজ্জা পাচ্ছে ৷ ব্যাপারটা দেখে মজা পাচ্ছে আঁচল ৷ একটু কিছুতেই ছেলেটা লজ্জা পায় ৷
লজ্জা পাইলেও যে কোনো ছেলেকে অসম্ভব কিউট লাগা সম্ভব সেটা আজ হারে হারে দেখতে
পাচ্ছে আঁচল ৷
.
ওয়েটার কফি রেখে গেছে ৷ কফিতে চুমুক দিচ্ছে দুজন; সাথে চলছে টুকটাক কথা, ভালবাসার কথা
৷কথায় কথায় দুজন দুজনকে আরও বুঝতে শুরু
করেছে, জানতে শুরু করেছে ৷
.
.
২.
সন্ধ্যা নেমে এসেছে শহড়ে ৷ কুয়াশায় ধীরে ধীরে চারপাশ ঢেকে যাচ্ছে ৷ আঁচলের ইচ্ছে
হচ্ছিলো আরও কিছুক্ষন গল্প করবার কিন্তু রাত বাড়ছে,আর হঠাৎ শরীরটাও ক্লান্ত লাগছে ৷
আঁচলকে বাসায় পৌছে দিবে বৃত্ত ৷ শরীর খারাপ অবস্থায় একা একা বাসা যাওয়া ঠিক না এসব
বলে দিয়েছে ছেলেটা ৷ আঁচলও বাধ্য
মেয়ের মতো বৃত্তের কারে ওর পাশে বসে আছে ৷
আঁচলের শরীর আরও খারাপ হচ্ছে ৷ শরীরটা দূর্বল লাগছে তার ৷ ঘুমাইতে পারলে ভালো হতো
বোধহয় ৷
.
-দেখি তোমর জ্বর কিনা !
.
আঁচলের সারা শরীর কেপে উঠলো ৷প্রথমবারের মতো বৃত্ত স্পর্ষ করলো তাকে ,তার কপালে
বৃত্তের হাত ৷ একটা কেয়ারিং হাত ৷ ভালো লাগা ব্যাপারটা কাজ করা উচিত কিন্তু আঁচলের
ভালো লাগছে না মোটেই ৷ নিজের সাথে যেনো লড়ছে আঁচল ৷ চোখ দুটো ভালোভাবে খুলে
রাখতে পারছে না ৷ রাজ্যের ঘুম তার চোখে ৷ তবু এটুকু বুঝতে পারছে গাড়িটা তার বাসার
রাস্তায়
যাচ্ছে না, যাচ্ছে ভিন্ন একটা অচেনা পথে ৷
আঁচল চোখ খোলা রাখতে পারছে না ৷ কপালে এখন আর বৃত্তের হাত নেই ৷ বৃত্তের হাত এখন
তার বাম ঘাড়ে ৷ আঁচল কড়া কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু শরীরটা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে ৷
প্রায়
অচেতন আঁচল বুঝতে পারছে সে এখন একদম ঘুমিয়ে পড়বে আর ঘুমের পরে কি হবে তা ভাবতে গিয়ে
নিজেকেই ধিক্কার দিচ্ছে বারবার ...
.
.
৩.
গাড়িটা শহরের সবচেয়ে নির্জন রাস্তায় চলছে ৷ সামনে একটা পুরোনো দালান ঘর ৷ বৃত্ত
গাড়িটা
দালান ঘরের সামনে থামিয়ে দিলো ৷ পাশে ঘুমে অচেতন আঁচল ৷ বৃত্ত জানে মেয়েটা প্রায় এক
ঘন্টার মতো ঘুমাবে ৷ কফিতে ঘুমের ঔষুধ
মিশানো ছিলো ৷ ওয়েটারের সাহায্যেই কাজটা সম্ভব হয়েছে ৷ বৃত্ত তাকিয়ে আছে আঁচলের
ঘুমন্ত
শরীরটার দিকে ৷ বহুদিনের অভিনয়ের পর আরেকটা শিকার তার হাতের মুঠোয় ৷
.
রাত গভীর হচ্ছে ক্রমশ ৷ কুয়াশা বাড়ছে ৷ চারপাশ অন্ধকার ৷ নিস্তব্ধতা ভেদ করে মাঝে মাঝে
শব্দ শোনা যায় কিছু রাত জাগা পাখিদের আর
কুকুরের ডাক আর. .আর সম্ভবত একটা মেয়েলী আর্তনাদ ...