গত পরশু দুপুরে আমি তোমার মাকে স্বপ্নে দেখেছি। স্বপ্ন মোটেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। মানুষ যখন নিদ্রা যায় তখন মস্তিস্ক তার স্মৃতিগুলো নাড়াচাড়া করে। যাচাই বাছাই করে, কিছু পুনর্বিন্যাস করে,তারপর স্মৃতির ফাইলে যত্ন করে রেখে দেয়। এই কাজটা সে করে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। মস্তিস্কের এই কাজ কর্মই ধরা দেয় আমাদের কাছে স্বপ্ন হিসেবে। ফ্রয়েড সাহেব বলেছেনে সব স্বপ্নের মূল্যে আছে যৌনতা। এই ধারনা কতটুকু ভুল তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না।
যাই হোক, এখন স্বপ্নের কথা বলি।আমি তোমার কিশোরি মাকে স্বপ্নে দেখলাম।এটা কিভাবে সম্ভব হল জানিনা। কারন তাকে আমি কিশোরী অবস্থায় কখনো দেখি নাই।যখন তাকে বিবাহ করি তখন তার বয়স বাইশ।
সে একজন তরুণী।
আমি দেখলাম সে তার গ্রামের বাড়িতে। কুয়ার পাড়ে বসে আছে। তার সামনে এক বালতি পানি। সে চুখেমুখে পানি দিচ্ছে। তোমার মা অতি রূপবতীদের মধ্যে একজন- এই তথ্য মনে হয় তুনি জান না। কারণ, তার মৃত্যুর পর আমি তার সকল ফটোগ্রাফি নষ্ট করে দিয়েছি।তার স্মৃতি জরিত সব কিছুই ফেলে দেয়া হয়েছে। কারন স্মৃতি মানুষকে পিছনে টেনে ধরে। মহাপুরুষদের পিছুটান থেকে মুক্ত থাকতে হয়।
স্বপ্নের প্রসংগে ফিরে যাই। তোমার মা চোখেমুখে পানি দিয়ে উঠে দাঁড়ানো মাত্র আমি সেখানে উপস্থিত হলাম।তোমার মা অত্যন্ত আনন্দিত গলায় বলল,
-তুমি একা এসেছ,আমার ছেলে কই?
-আমি বললাম, তাকে ঢাকা শহরে রেখে এসেছি।
-সে করুন গলায় বলল, আহারে কতদিন দেখিনা! সে নাকি হলুদ পাঞ্জাবি পরে খালি পায়ে রাস্তায় রাস্তায় হাটে। এটা কি সত্য?
-হ্যা সত্যি।
-তুমি তাকে সুন্দর একটা শার্ট কিনে দিও,একটা পেন্ট কিনে দিও,একজোড়া জুতাও কিনে দিও।
-আচ্ছা দিব।
-তোমার মা তখন কাদতে শুরু করে এবং কাদতে কাদতে বলল, ওর কি কোনো মেয়ের সংগে ভাব হয়েছে? কোনো মেয়ে কি ভালবসে তার হাত ধরেছে?
-আমি বললাম, না। সে মহাপুরুষ হওয়ার সাধনা করছে। তার জন্য নারীসংগ নিষিদ্ধ।
-তোমার মা চোখের পানি মুছে রাগী গলায় বলল, সে সাধনা করছে, না কচু করছে তাকে তুমি আমার কাছে নিয়ে আস। আমি থাবড়ায়ে তার মহাপুরুষগিরি ছুটায়ে দিব।
স্বপ্নের এই যায়গায় আমার ঘুম ভেংগে গেল।
স্বপ্ন একধরনের ভ্রান্তি তা আমি জানি।তারপরেও স্বপ্নদর্শনের পর পর আমার মধ্যে কিছু আবছন্ন ভাব দেখা দিল।আমার চক্ষু সজল হল।মনে মনে বললাম।
মাতা যস্য গৃহে নাস্তি
অরণ্যং তেন গন্তব্যং
যথারণ্যং তথ্য গৃহস।
বাবা হিমু, এখন তোমাকে একটি বিশেষ কথা বলি- তোমার মায়ের একটি আট ইঞ্চি বাই বার ইঞ্চি ছবি এবং তার লেখা ডায়েরী আকারে একটা খাতা আমি গোপনে রেখে দিয়েছি। একটা খামে সিলগালা করে রাখা। যে তোষকে আমি ঘুমাই সে তুষকে সিলাই করে রাখা আছে।তুমি খামটি সংগ্রহ করবে। যেদিন কোনো কারনে তোমার হৃদয় সত্যিকার অর্থেই আনন্দে পূর্ন হবে সেদিন খামটা খুলবে। তবে একবার খাম খুলে ফেলার পর ছবি, খাতা এবং খাম আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।যেহেতু একবার দেখার পর সব পুরিয়ে ফেলতে হবে সেই কারনেই তুমি কোনদিন খামটা খামটা খুলতে পারবে না বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। হা হা হা। একে কি বলে জান? একে বলে থেকেও নাই।