নির্যাতন বিরোধী ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ
মধুর ক্যান্টিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়.
০১৯১১ ৯৫০৩৯১, ০১৯১৫ ০০২৬৬৯, ০১৫৫৭ ২৩৯০৮৬, ০১৭৩৮ ১৬৫৯১৫, ০১৬৭২ ১০০২৩২,01195084333
ঢা.বি. ছাত্র আব্দুল কাদের এর নিঃশর্ত মুক্তি ও তার উপর পাশবিক পুলিশী নির্যাতনের বিচারের দাবিতে
সংবাদ সম্মেলন
২৮ জুলাই, ২০১১ বৃহষ্পতিবার বিকাল ৩টা
মধুর ক্যান্টিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নির্যাতন বিরোধী ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ’র আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য সাংবাদিক বন্ধুদের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র আব্দুল কাদের। গত ১৫ জুলাই রাতে ইস্কাটনের এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থানরত মা ও বোনের সঙ্গে দেখা করে হলে ফেরার পথে ডাকাতির মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ তাকে আটক করে। কারা অভ্যন্তরে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে পুলিশ চাপাতি দিয়ে কাদেরের বাম পা জখম করে এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়। আব্দুল কাদের আজ কারা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তার উপর এমন বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা
আব্দুল কাদের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। অনেক স্বপ্ন নিয়ে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫টি বছর শিক্ষা জীবন অতিক্রম করে বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক এই মেধাবী শিক্ষার্থী বর্তমানে তিনটি টিউশনি করে তার স্বপ্নপূরণের সংগ্রাম করে যাচ্ছিল। তার একমাত্র ছোট বোনটিও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ-তে অধ্যয়ন করছে। সম্প্রতি সে ইন্দিরা গান্ধী বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে। বোনের এই অসামান্য কৃতিত্ব ও সাফল্যের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে সে ইস্কাটনের এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থানরত প্রিয় মা ও বোনের সাথে দেখা করতে যায়। হলে ফেরার পথে বাধ সাধে পুলিশ এবং এর পরের ঘটনাগুলো যেন লিমনের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি।
গভীর রাতে যানবাহন না থাকার কারণে সে হেঁটেই ইস্কাটন থেকে ফজলুল হক মুসলিম হলে ফিরছিল। কিন্তু সে তখনও জানতো না পথের মধ্যে তার জন্য কতবড় বিপদ অপেক্ষা করছে। পুলিশের মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হবে, তাও সে জানতো না। ছিনতাইকারী সন্দেহে পুলিশের গাড়ি ধাওয়া করছিল আরেকটি গাড়িকে। ঐ গাড়ির আরোহীরা যখন গাড়ি থেকে পালাচ্ছিল পুলিশ তাদের একজনকে ধরে ফেলে। তাকে পুলিশ প্রহার করলে সে কাদেরকে দেখিয়ে তাদের সহকারী বলে দাবি করে। তখন পুলিশ তার বক্তব্যের ভিত্তিতে কাদেরকে আটক করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এমন একটি ঘটনায় কাদের বিস্মিত হয়ে পুলিশকে বলে, ‘‘আমি যদি তার সহকারী হই, তাহলে তাকে আমার নাম বলতে বলেন।’’ কিন্তু ছিনতাইকারী সন্দেহে ধৃত অপর ব্যক্তি কাদেরের নাম বলতে পারেনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দেওয়ার পরও রহস্যজনকভাবে সে পুলিশের রোষানলের স্বীকার হয়। তাকে থানায় নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। সকালে খবর পেয়ে তার রুমমেট তাকে দেখতে গেলে তাকেও শাসানো হয়। সে গিয়ে দেখতে পায় যে কাদেরের গায়ে মারধরের আলামত ছিল, কিন্তু বাম পায়ে চোখে পড়ার মত কোন জখমের চিহ্ন ছিল না। সন্ধ্যায় তাকে পুলিশী হেফাজতে ডাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে তার বন্ধুরা তাকে দেখতে যায় এবং তারা কাদেরের বাম পায়ে জখমের চিহ্ন এবং রক্তাক্ত অবস্থা দেখতে পায়। এরই মধ্যে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কাদের তার বন্ধুদের জানায় পুলিশ চাপাতি দিয়ে তার বাম পায়ে এই জখম করেছে। পুলিশ এই নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি। তাদের এই অপকর্ম ঢাকতে তারা ১৬ জুলাই কাদেরের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
সাংবাদিক বন্ধুরা
পাঁচ বছরের অধিক সময়ের পরিচয়ে কাদেরের শিক্ষকবৃন্দ, বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহপাঠীদের দৃঢ় বিশ্বাস কাদের ছিনতাইকারী হতে পারেনা। কাদেরের আটক হওয়ার খবর জানতে পেরে এমনকি তার টিউশনের ছাত্রের অভিভাবকরা পর্যন্ত তার বিভাগের চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং অত্যন্ত দুঃখ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এর মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয় যে শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে এই অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে পুলিশ এবং দায় এড়ানোর জন্য একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে চলেছে। তার নামে পুলিশ একে একে ডাকাতির পূর্বপ্রস্তুতি ও অস্ত্র বহন ও গাড়ি ছিনতাইয়ের মিথ্যা অভিযোগে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে।
১৬ জুলাই ফজলুল মুসলিম হলের প্রভোস্টের সাথে কাদেরের সহপাঠীরা দেখা করে। অভিভাবকের দাবি করে কাদেরের ওপর যেন আর নির্যাতন না চলে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে। কিন্তু প্রভোস্ট জানান, হলের এতজন ছাত্রের সবাইকে তো তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। ছাত্ররা এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সাথে সাক্ষাৎ করে। প্রক্টর বলেন, তোমরা একটা ডাকাতের জন্য এতজন কেন এসেছ? কয়েকজন আসলেই তো হত। এটাকে একটা ইস্যু বানাতে নিষেধ করেন কাদেরের সহপাঠীদেরকে। কাদেরের উপর যেন আর নির্যাতন না হয় এজন্য প্রক্টরকে অনুরোধ করলে তিনি জানান পুলিশকে ফোন করতে তার লজ্জা লাগছে। এমন কি প্রক্টর এখন পর্যন্ত কাদেরকে দেখতে যান নি।
সাংবাদিক বন্ধুরা
আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই নীরবতা, দায়িত্বহীনতা এবং অসহযোগিতার সুযোগে পুলিশ তাদের অপকর্ম ঢাকতে কাদেরকে সন্ত্রাসী ও ডাকাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে একের পর এক মামলা দিয়ে চলেছে। অন্যদিকে পক্ষান্তরে এর মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা ছাত্র সমাজই যেকোন সময় যে কোন স্থানে বিনা অজুহাতে পুলিশী নির্যাতনের হুমকির মুখে আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আজ সারা দেশের জনগণের নিরাপত্তা যে আইনের রক্ষক পুলিশ বাহিনী হাতেও নিশ্চিত হচ্ছে না কাদেরের ঘটনা তার আরেকটি দৃষ্টান্ত। আমরা সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
আমরা পুলিশের এই নারকীয় পৈশাচিক নির্যাতন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও অসহযোগিতার প্রতি তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। আমরা মনে করি কাদেরের যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির দায় সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে।
সাংবাদিক বন্ধুরা
আমরা কিছুক্ষণ আগে একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি হাইকোর্ট আব্দুল কাদেরকে আদালতে হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে। কাদেরের পাশাপাশি ঢাকার খিলগাঁও ও মোহাম্মদপুর থানার ওসিকেও আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। আজ সকালে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী তাদের আদালতে যেতে হবে বিকাল সাড়ে ৩টার মধ্যে। আর তাদের সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে। আমরা আশা করব আদালত কাদেরের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করবে এবং কাদেরের উপর নারকীয় নির্যাতনের জন্য দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
আমরা আপনাদের মাধ্যমে বৃহত্তর ছাত্র সমাজ ও জনগণকে আহ্বান করব সকলে এই অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার হোন। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা জানাতে চাই যদি অবিলম্বে ছাত্র সমাজের ন্যায্য দাবি মানা না হয় তাহলে ছাত্ররা ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলে এই অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে।
আমাদের দাবি
১. অবিলম্বে আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ
নি:শর্ত মুক্তি চাই।
২. পুলিশী হেফাজতে কাদেরর উপর নির্যাতন ও সাজানো মামলাকারী পুলিশ
কর্মকর্তাদের বিচার চাই।
৩. আব্দুল কাদেরের যথাযথ চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
৪. সারাদেশে চলমান র্যাব-পুলিশের বেপরোয়া নির্যাতন বন্ধ কর।
কর্মসূচি
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ- ৩০ জুলাই শনিবার ১১ টা।
ছাত্র-শিক্ষক প্রতিবাদ সমাবেশ- ৩১ জুলাই রবিবার ১১টা।
উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান- ১ আগস্ট সোমবার দুপুর ১২টা।
সাংবাদিক বন্ধুগণ
এতক্ষন যাবত ধৈর্য্য ধরে আমাদের বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের কথাগুলো আপনাদের পত্রিকা/মিডিয়ার মাধ্যমে সারা দেশের ছাত্র ও জনতার সামনে তুলে ধরবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আপনাদের আবারো ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।
নির্যাতন বিরোধী ছাত্রছাত্রীবৃন্দের পক্ষে-
মোস্তফা মাহবুব রাসেল