সাম্রাজ্যবাদের বিষাক্ত থাবা এদেশ ও জাতির বুকে রক্ত ঝরিয়ে চলেছে।অথচ সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে একটা ন্যুনতম সঠিক ধারণা ব্যাপক জনগনের মাঝে এখনও ছড়িয়ে দেয়া যায়নি।সাম্রাজ্যবাদ প্রতিরোধ দিবসে এবার সে চেষ্টাই আমরা করব।
ইরাক,আফগানিস্তানে যুদ্ধ চলছে।মার্কিন নেতৃত্বে তার মিত্র দেশগুলো এই যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে।এটা সবাই জানে যে "সন্ত্রাসবাদ দমন" একটা অজুহাত মাত্র।আসল উদ্দেশ্য তেল সম্পদ দখল করা।
বিশ্বের দিকে তাকান।দেখবেন দুনিয়া দুইভাগে বিভক্ত।একদিকে অতিবৃহৎ এবং বৃহৎ শক্তিগুলো।অন্যদিকে তাদের দ্বারা নিপীড়িত-শোষিত-লুণ্ঠিত জাতিগুলো।ঐ শক্তিশালী দেশগুলোকে বলা হয় সাম্রাজ্যবাদী দেশ।
উন্নত পুঁজিবাদী দেশে কিছু কিছু পুঁজি হয়ে উঠেছিল বিরাটাকার।এই পুজি শিল্প,ব্যবসায়,ব্যাংক পুঁজিকে একাট্টা করে সর্বেসর্বা হয়ে উঠে।এটা মুলতঃ লভ্যাংশজীবী বা পরজীবী পুঁজিতে পরিণত হয়।একে বলা হয় লগ্নিপুজি।প্রথমে নিজ দেশের পুরো অর্থনীতিকে এই পুজি অধীনস্ত করে।তারপর হাত বাড়ায় দুনিয়ার দিকে।পণ্য নয় ,অতি উদ্বৃত্ত পুঁজি রপ্তানি করা হয়ে উঠে এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।এই লগ্নিপুজির অথনৈতিক-রাজনৈতিক সমগ্র ব্যবস্থাটাকে আমরা বলি সাম্রাজ্যবাদ।
ইউরোপীয় কিছু দেশ,যুক্তরাষ্ট্র,রাশিয়া,জাপানসহ কতগুলো দেশে এ ধরনের পুঁজি বিকশিত হয়।তারা গোটা দুনিয়াকে নিজেদের মধ্যে বিভক্ত ও অধীনস্ত করে।
পুঁজিবাদের নিয়ম হলো অর্থনীতিতে তেজীভাবের পরে মন্দাভাব আসে।অর্থনৈতিক সংকট তৈরী হয়।সাম্রাজ্যবাদী পর্যায়ে এই সংকট হয়ে উঠে সর্বব্যাপী এবং চরম।তাই এটা হলো বুড়ো পুঁজিবাদ।ক্ষয়িষ্ঞু পুঁজিবাদ।পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ ও শেষ পর্যায়।অন্যদিকে ,কোন পুঁজি দ্রুত বিকশিত হয়,কোনটি ধীরে।প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং নৈরাজ্য থেকে তার কোন মুক্তি নেই।এসব কারনে লগ্নিপুঁজির মুনাফা নিশ্চিত করার স্বার্থে নিজের অধীনস্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল বাড়ানোর জন্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যে তীব্র সংগ্রাম চলে।এজন্য তারা দেশে দেশে পেছন থেকে গৃহসংঘাত ,গৃহযুদ্ধে মদদ দেয়।তাই সাম্রাজ্যবাদকে বলা হয় "যুদ্ধ পুঁজিবাদ"।আগ্রাসী যুদ্ধ চালায়।এসব সংগ্রাম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়।সাম্রাজ্যবাদের এই আগ্রাসন-নপীড়ন বিশ্বের নিপপীড়িত জাতিগুলি ও তার জনগণকে সাম্রাজ্যবাদ প্রতিরোধে পরিচালিত করে।তাদের সামনে সাম্রাজ্যবাদ হলো জাতীয় বিকাশ ও জনগণের মুক্তির পথে বাধার পাহাড়। দুনিয়ার জন্য বাতিলযোগ্য এক আপদ।তাই তারা সাম্রাজ্যবাদের অবসানের জন্য সংগ্রামে সামিল হয়। সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী দেশের নিপীড়িত জনগণও এ সংগ্রামে যুক্ত হয়।এভাবে জনগণের ন্যায় সঙ্গত সংগ্রাম প্রতিরোধ সংগ্রাম,প্রতিরোধ যুদ্ধ,বিপ্লবী যুদ্ধ,গণযুদ্ধ রুপে বিকশিত হয়।।আজ তা আরো দু্র্নিবার হয়ে উঠেছে।
সাম্রাজ্যবাদ হলো বুড়ো পুঁজিবাদ।মুমূর্ষূ পুঁজিবাদ।এটা পুরনো হয়ে গেছে,নতুন দুনিয়াকে তার জায়গা ছেড়ে দিতেই হবে।নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে তা নানা ধরনের যুদ্ধের জন্ম হয়।
কিন্তু তাতে তার রক্ষা হবে না ।সম্ভবতঃ এই শতকেই, এই সব রকম যুদ্ধের মধ্যদিয়েই সাম্রাজ্যবাদ দুনিয়ার বুক থেকে মুছে যাবে।
নোট:এই লেখাটি প্রগতির পরিব্রাজক দল(প্রপদ) এর মুখপত্র "কাগজের কম্পাস" গ্রীষ্ম১৪১৯-সংখ্যা
থেকে সংগৃহিত-শান্তনু সুমন।