
যখন পুরো বাজার ভেজাল খাদ্য ও পণ্যে ছেয়ে গেছে, তখন "অর্গানিক" আর "খাঁটি" শব্দের ব্যবহার করে উচ্চমূল্যে পণ্য বিক্রি আসলে মানুষের সঙ্গে এক প্রকার নির্মম উপহাস। এই অর্গানিক পণ্য বা খাঁটি খাবার কেনার ক্ষমতা সমাজের একটি ক্ষুদ্র, সুবিধাভোগী শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সাধারণ মানুষ ধরে নিয়েছে, তাদের জন্য যা খাদ্য, তাতে ভেজাল বা কেমিক্যাল মিশ্রিত হওয়া অবধারিত।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় খাদ্যে ভেজাল নিয়ে রচনা পড়ানো হলেও বাস্তবে নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বরং অর্গানিক পণ্যের মোড়কে সাধারণ খাবারগুলোই চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ বাজার থেকে ভেজাল বা কেমিক্যালযুক্ত পণ্য সরানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না।
ভেজাল খাদ্যের সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্য সরাসরি জড়িত। ফুড পয়জনিং থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদে ভেজাল খাবারের কারণে শরীরে যে জটিল সমস্যাগুলো দেখা দেয়, তা অনেক ক্ষেত্রেই নিরাময়-অযোগ্য। আর নিরাময়ের উপায় থাকলেও তার খরচ বহন করা সম্ভব কেবল উচ্চবিত্তদের জন্য। তাহলে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তের কী হবে?
এই দ্বৈত মানসিকতার অবসান কবে হবে? রাষ্ট্র কেন নিরাপদ, খাঁটি খাবার সবার জন্য নিশ্চিত করতে ব্যর্থ? রাষ্ট্রের সদিচ্ছা আসলে কোথায়? এলিট শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী সরকার কি শুধু ধনী শ্রেণীর জন্যই সকল সুবিধা সংরক্ষণ করবে? বাকিরা কি শুধুই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মুনাফার চক্রে আটকে থাকবে?
নিরাপদ খাদ্য আর কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থায় এই দুটিই আটকা পড়ে আছে পুঁজিবাদের ফাঁদে। সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার—রাষ্ট্র কি নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, নাকি তারা শুধুই এলিট শ্রেণীর সেবায় নিয়োজিত?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




