somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা দিবসে মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে একজন চিকিৎসকের খোলা চিঠি

১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ বিশ্ব মা দিবস।

মা দিবসে মায়ের জন্য আমরা কত কিছুই না করি। পৃথিবীতে দেয়া আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নিয়ামত হল মা। একবার ভাবুন তো, এই মা না থাকলে আমাদের কী হত!! কিংবা যেদিন মা থাকবেন না, সেদিন কী পরিমাণ অসহায় লাগবে!! চিন্তা করতেই তো কতটা কষ্ট হয়!! তাই, আসুন, এই মায়ের একটু যত্ন নেই। মায়ের যত্ন নেয়ার প্রথম ধাপই হল মায়ের স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া।

বার্ধক্য, মেনোপোজ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য এই বয়সে মা’রা থাকেন সবচেয়ে ভালনেরাবল। সত্য কথা বললে, আমাদের দেশের মা’রা অনেক অসহায়। সংসারের ভার টানতে টানতে নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উদাসীন এবং কোন অসুখ হলেও লুকোতে পছন্দ করেন। এজ্ন্য, সন্তান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব এই ঝুঁকির হাত থেকে মাকে বাঁচানো। মায়ের খাদ্যাভ্যাস এবং ঔষধপত্রের খোঁজ-খবর নিলে, সময় মত কিছু চেকআপ করালে, নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে থাকলে অনেক বড় ঝুঁকির থেকে বাঁচা যায়, আর বাঁচানো যায় মাকে। সত্যি কথা বলতে, বাঁচা-মরা আল্লাহর হাতে। কিন্তু হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক এ ধরনের জটিল রোগকে যতই বিলম্বিত করা যায়, দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনা ততই বেড়ে যায়।

যারা ব্লাড প্রেশার মাপতে পারি, আসুন মায়ের ব্লাড প্রেশার টা একটু মেপে দেখি আজ। দেখি, সাধারণ অবস্থায় নর্মাল বিপি ( ১২০-৮০ মিমি) আছে কী না। যদি এর ব্যত্যয় দেখি, আসুন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপণ্ণ হই।

মায়ের খাদ্যাভ্যাসের প্রতিও দৃষ্টি দিতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস আছে- তারা চিনি অ্যাভয়েড করছেন কিনা, যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে- তারা পাতে আলগা লবণ অ্যাভয়েড করছেন কিনা, যাদের রক্তে হাই কোলেস্টেরল আছে, তারা চর্বিযুক্ত খাদ্য, বাড়তি তেল, রেড মিট বাদ দিচ্ছেন কিনা, দৈনিক কিছু পরিমাণে হলেও নিয়মিত মৌসুমি ফল, ডিম, দুধ খাচ্ছেন কিনা- এগুলো নিয়ে মা’দের সচেতন করতে হবে।

এছাড়া মেডিকেল সায়েন্সের ভাষ্যমতে অধিকাংশ জটিল রোগই নিরাময়যোগ্য, যদি কী না, প্রাথমিক স্টেজেই সেটি ডায়াগনোসিস করা যায়। এজন্য নিয়মিত রক্ত, প্রসাব, ব্লাড গ্লুকোজ, বুকের এক্স রে, ইসিজি- এসব পরীক্ষা নিরিক্ষা করানো উচিত। সাথে লিপিড প্রোফাইল (রক্তে কোলেস্টেরলের লেভেল), থাইরয়েড, আলট্রাসনোগ্রাম অফ অ্যাবডমেন- এসব কিছু আনুষাঙ্গিক পরীক্ষা-নিরিক্ষা সতর্কতামূলকভাবে করিয়ে মায়ের স্বাস্থ্যের একটা সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায়। শরীরে কোন জটিল রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে কোন উপসর্গ আসার পূর্বে উপরের পরীক্ষা-নিরিক্ষার ফলাফলে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসার কথা। রিপোর্টের উপর নির্ভর করে যদি অ্যাবনরমাল কিছু ধরা পরে তবে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতে সে অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরীক্ষা করা যেতে পারে। উন্নত বিশ্বে ৫-৬ মাস পর পর নিয়মিতভাবে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, পরীক্ষাগুলো যেন নির্ভরযোগ্য হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনোস্টিক ল্যাবে করানো হয়। আমাদের দেশে এর চেয়ে অনেক কম খরচেই এসব সহজ পরীক্ষাগুলো নিয়মিতই হচ্ছে। এসব পরীক্ষা গুলো করতে বড় জোর কয়েক হাজার টাকার বেশি লাগার কথা নয়। লক্ষ্য রাখতে হবে, সামান্য কিছু টাকার চেয়ে মায়ের জীবন অনেক দামি। টাকা গেলে টাকা আসবেই, কিন্তু মা গেলে আফসোসের শেষ থাকবে না। ☹


সাবধানের মার নেই। মায়ের প্রতি দৃষ্টি দিন। সচেতন হোক এখনি। নিজে সচেতন হোন, মাকেও সচেতন করুন। শুধু সচেতন করলেই হবে না, নিয়মিত খবরাখবর নিন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন। মাকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করুন আজই।

পরিশেষে, এই লেখাটির পিছনে কারণ একটাই। মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে আমার মেডিকেল-নন মেডিকেল বন্ধুদের সচেতন করা। আমি নিজে আমার মাকে আজ হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করিয়েছি এবং তখনই সবাইকে সচেতন করার কথা মাথায় আসল। আমার এই লেখাটি পড়ে একজন বন্ধুও যদি সচেতন হন, এবং তাঁদের মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন, তাতেই আমার সার্থকতা। আল্লাহ আমাদের সব মাকে আরো অনেক বছর বাঁচিয়ে রাখুন, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু দিন, আমিন।

ডা. আবীর শাকরান মাহমুদ
প্রভাষক,
ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যানাটমি,
এম এইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:০৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×