somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিশাল শাহরিয়ার
ভালোবাসা কেমন আমার জানা নেই, জানা নেই কিভাবে কি হলে ছোঁয়া যায়। আমি শুধু জানি আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় নি। আরো অনেকটা পথ একা একা হেটে যেতে হবে। ক্লান্ত হয়ে থেমে যাবার আগে শেষবারের মত ছুঁতে চাই, তোমার অনামিকা জুড়ে একটা অভ্যাস হয়ে থাকতে চাই, ব্যাস।

স্বপ্নঘোর

০৫ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১.

আমার পাশে শুয়ে ভাইজান গুটিসুটি মেরে প্রেম করে যায়। আমি কান পেতে বুঝে উঠতে পারি না। ওপাশের মানুষটা ঠিক ঠিক বুঝে যায়, স্বপ্ন আঁকে, স্বপ্ন দেখে ঘর সাজায়, কি অদ্ভুত না। এক বিছানা দু ভাইকে যতটা না কাছে এনে দিয়েছে ঠিক ততটাই বোধহয় দূরে সরিয়ে ফেলেছে। নদীর একুল ওকুল তফাত। এদিকের জোয়ার ভাটা ওদিকে খুব একটা স্পর্শ করে। এদিকের পানি ওদিকে গড়ায় না। রাত বাড়লেই দেয়ালে আঁকিবুঁকি কাটি, পিঠ ঠেকিয়ে ঠান্ডা শিরশিরে অনুভূতি জন্মাই। আমার খুব করে ইচ্ছে করে তোমার বুকে মুখ ঠেকিয়ে হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক আওয়াজ শুনি, প্রতি বিটে নিজের নাম গুনি।
সকালবেলার রোদটা ঠিক মুখে এসে পড়ে, ফোনের কৃত্রিম আওয়াজের খুব একটা দরকার বোধ করি না। ফোনে টুকটাক বার্তা জমা হয়ে থাকে। কেউ খুব করে চাইছে আমাদের দেখা হোক। আজকের সকালটাও বোধহয় তাই চাইছিলো। আমি টুক করে বেড়িয়ে পড়লাম।
এই জায়গাটা আমার খুব প্রিয়, আড়াল, আধার, আকাশ সবটার কি সুন্দর মিশেল। নদীর জলে লাল টুকটুকে আলতা রাঙানো পা ছুঁইছুঁই। আমার কেমন স্বপ্ন লাগে। হাত বাড়িয়ে ছুই, মন বাড়িয়ে ছুই। জুই খিলখিল করে হেসে ফেলে। এত অদ্ভুত কেন তুমি বলত?
জুইয়ের এসব প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারি না।
কিভাবে বোঝাই আমি অদ্ভুত নই, অদ্ভুত তুমি। তোমার চোখ, চুল, টিপ। তোমার আকাশ সমান আঁচল, যেখানে নির্দিদ্ধায় স্বপ্ন বোনা যায়।

যাবে?
চল।

জুই হাত বাড়িয়ে ডাকে। হাটতে হাটতে থেমে যায়, পাঞ্জাবীর কোনা টেনে ধরে, কাশফুল তুলে দিতে বলে। ইচ্ছে করে রিকশায় আঁচল বাধিয়ে বসে। আমি সামলে দি, নিজেকে সামলে নি।
সর্বনাশের শেষ মুহুর্তগুলো চোখে বাধিয়ে রাখি, আঁচল উড়িয়ে আমার আকাশ হারিয়ে যায়।



২.

বারান্দায় বেশ এক চিলতে জায়গা হয়ে গেছে আমার। এক কাপ চা হাতে বেশ স্মৃতিতে ডুব দেয়া যায়। কলেজে আমাকে কেউ খুব একটা চিনত না, পাশে বসে থাকা ছেলেটা যেন অদৃশ্য মানব হয়ে গেছিল সবার কাছে। খুব একটা কথা বলতে পারতাম না, বেজায় চুপচাপ, যার সবথেকে প্রিয় কাজ জানলার বাইরের কাক কালো পুকুরটেয় অদ্ভুত সব খেয়াল আঁকা।
সেবার খুব অবাক করেই স্টেজে উঠে কবিতা কইলাম

"ছোঁয়া যায়নি,
মেঘে মেঘে বহুদুর, বহুদিন হেটেছিলাম
পাইনি,
পাইনি যেখানে থাকবার কথা ছিল
যে খাচায় বাধা ছিল
যে মরন আসবার ছিল
আসেনি
আসেনি কোন অচেনা চিঠি
একশো ফানুশ জ্বলেছে মিছেমিছি
বাসেনি
বাসেনি ভালো চোখদুটো
অতল জল, আকড়ে ধরা খড়কুটো
সত্য তুমি, মিথ্যে তুমি
আমার মাঝের সবটুকু।"


কিছু চোখ অবাক ছিল, কিছু মুগ্ধ। একটা কবিতা আমাকে জুই এনে দিল। দুটো মুগ্ধ চোখ, তিরতিরে কেপে যাওয়া ঠোট এক জীবনে এর থেকে বেশি কিছু চাওয়ার ছিল না। সবসময় চুপিচুপি কেউ বলে যাচ্ছে আমি আছি আমি আছি আমি আছি।

সে অর্থে আমি জুই এর হাত ধরিনি কখনো, আচল ছুয়েছি, বায়না করে চুল ছুঁয়েছি। জুই ধরেছে হাত, বেশ শক্ত করে ধরেছে, চুলে হাত বুলিয়ে দিয়েছে। ও যতবার হাত বুলিয়েছে, বুকের ভেতর জল চুয়েছে, ফুটো হয়েছে। এত সুখ কিভাবে পায় কেউ, এত সুখ সত্যিই কি কেউ পায়?

ভিজছে শার্ট , চুইছে জল
বুকের মাঝে আঁকড়ে ধর।


৩.

রতনকে দেখতাম পাতার পর পাতা চিঠি লিখত, সারারাত ধরে খাটের পাশে মুঠোমুঠো কাগজ জমা হত। মাঝরাত্তিরে রতনকে দেখতে ঠিক দিকভ্রান্ত নাবিকের মতন দেখাত, ঠিক কিভাবে সে মানুষটিকে বোঝানো যাবে, কিভাবে শোনালে জানানো যাবে কতটা ভালোবাসা যায়, ভালবেসে দূর থেকেও ছোঁয়া যায়। জুইকে কখনো চিঠি লেখা হয় নি, ভুল শোনালো চিঠি দেয়া হয় নি। প্রতি রাত্তিরে চিঠি লেখা হয়, কাগজ কলমের বালাই নেই, বুকের ভেতরের জমানো সাদা পাতা লিখে ফেলা হয়। সেসব চিঠির কথা কখনো বলা হয়ে ওঠেনি।

একদিন সকালে উঠে শুনলাম রতন নেই। নিজের প্রতি কত অভিমান জমা করে রেখেছিল ছেলেটা, কাউকে জানতে দেয় নি। কিছুদিন পরে সবাই রতনকে ভুলে গেল, আমি ভুলতে পারলাম না। মাঝরাত্তিরে ঘুম ভেঙে দিকভ্রান্ত নাবিকটাকে আর দেখব না ভাবলেই বুকটা হু হু করে ওঠে। আমার নামে সেবারই প্রথম চিঠি এল। রতনের চিঠি, খুব রাত্তিরে সে চিঠি পড়ে জল ছুঁইছুঁই।

"তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা কেমন। আমার কেন যেন মনে হতে লাগল তোমাকে কিছু জানানো দরকার। বন্ধুত্বের চার বছরেও আমি তোমাকে তুমি বলে এসেছি। তুমি আমার কাছে এসে থেকেছ সত্যি বলতে আমি খুব করে চেয়েছি তুমি আসো। তুমি কিছু না বলেই আমাকে বুঝতে পারো। দীপা পারেনা, কেন পারেনা বলতে পারো? আমি কখনোই দিপাকে ছুঁতে পারিনি, আমার শব্দগুলো ছুঁতে পারেনি। কেন? আমি খুব ভেবেছি, খুব ভেবেছি। ভেবেছি আমি বোধহয় বোঝাতে পারছিনা, নিজের প্রতি বডড অভিমান হত, আমি এমন কেন। তারপর দিপা চলে গেল, আমি দিপাকে দোষ দি না। আমার মাঝেই হয়ত কমতি ছিল, ভালোবাসার কমতি, ভালো বাসা পাবার কমতি। দিপার প্রতি আমার কোন অভিমান নেই, নিজের প্রতি অভিমান করে চলে যাচ্ছি, উপরঅলাকে ই নাহয় জিঙেস করব কি ছিলনা আমার মাঝে। তুমি ভালো থেকে, আমকে মনে রেখোনা। দিপার মতন ভুলে যেও। আমি বোধহয় ভুলে যেতেই এখানে এসেছিলাম। অদৃশ্য ইরেজার তোমার হাতে। "

রতন



ভালোবাসা বড্ড স্বার্থপর হয়। কাছে পেতে হবে, ছুঁয়ে দিতে হবে, শুনে যেতে হবে, বলে যেতে হবে কত্ত কি। একদিন হয়ত জুই আমাকে ছেড়ে যাবে, সে চলে গেলেই কি আমাকে চলে যেতে হবে। আমি তো ভালবাসতে পারি, চোখ বুজে ছুঁয়ে দিতে পারি। রক্তমাংসের জুইকে নাহয় নাইবা পেলাম, কল্পানার জুইকে ভালবাসতে তো আর কোন বাধা নেই।


জুইকে বলতেই হেসে লুটিয়ে পড়ল। তুমি এমন কেন বলত। আমার বিয়ে করছি বুঝেছ? শার্টের কলার চেপে বলে উঠল। দু দুটো বাবু হবে আমাদের একটা তোমার ঘাড়েচাপা আরেকটা কোলে। আমাদের তিনজন কে তুমি কিভাবে ছেড়ে যাও তাই দেখছি।
বুকের কাছটা ভিজে যাচ্ছে, চোরাবালিতে ডুবে যাবার ভয়ে আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের স্বপ্নগূলো বড় অসহায়। সবসময় ভিজে যেতে হয়। এসব ভেজা ভেজা স্বপ্ন বুকে আমি শহর হাটি। কেউ একজন খুব করে অপেক্ষা করে, অপেক্ষা করে তুলতুলে দুটো ছানাপোনার, অপেক্ষা করে দিনশেষে আচল দিয়ে কারো ঘাম মোছার। আমি হেটে যাই, আমরা হেটে বেড়াই শহরজূড়ে। স্বপ্নগুলো তালুবন্দি করবার আরেকখানা স্বপ্ন নিয়ে।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×