somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্ডার-এস্টিমেট!!

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু আগে আমার ল্যাবে কাজ করা একজন প্রাক্তন ছাত্রের সাথে ফোনে কথা হল। আলাপ করে জানতে পারলাম, সে এখন সিমেন্সের হেড কোয়ার্টারে পিএলসি প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করছে। বলাবাহুল্য, সিমেন্সের পিএলসি ডিভাইস অটোমেশন দুনিয়ার বিখ্যাতদের একটি।

মনে পড়ে গেল বছর দুয়েক আগের কথা। আমার চাকরির বয়স তখন ৫ মাসের মত। আমাদের সদ্য প্রতিষ্ঠিত কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবে অনেকগুলো নতুন পিএলসি ডিভাইস ও মাস্টার প্রোডাকশন সিস্টেম ইন্সটল করতে হবে। পার্শ্ববর্তী ইউনি থেকে আসা ৩৫ বছর বয়সী মাস্টার্সের ছাত্র মেতিন তার থিসিস প্রজেক্ট হিসেবে আমাদের ল্যাবে কাজ শুরু করেছে। তুরস্কের নাগরিক মেতিনের ৫ বছর বয়সী একটা ছেলে রয়েছে। ইস্তাম্বুলে কয়েক বছর ধরে পিএলসি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় জার্মানীতে মাস্টার্স করতে আসে সে। বিনা বেতনে থিসিসরত মেতিন উইকেন্ডে কাজ করে ও তার বউয়ের পার্ট টাইম কাজের আয় দিয়ে কোন রকমে দিনানিপাত করছিল। প্রোগ্রামিং এর প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় মাসখানেক পরে আমি জবের পাশাপাশি ওর কাছে পিএলসি প্রোগ্রামিং শিখতে লাগলাম। বিনিময়ে তাকে প্রতিদিন দুপুরে অফিসের কফি খাওয়াতে হত।

কিছুদিন পরে লক্ষ্য করলাম যে, সে আমাকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করেছে। পরিচিত হিসেবে তার প্রতি একটা সিম্প্যাথি থাকলেও তার এহেন মানসিকতা আমার পছন্দ হলনা। তাকে কফি খাওয়ানো বন্ধ করে দিলাম ও নিজে নিজেই প্রোগ্রামিং শিখতে লাগলাম। তবে তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে লাগলাম।
তার আসল সুপারভাইজার ছিলেন আমার বস ও প্রফেসর এবং একজন জার্মান সহকর্মী। মাঝেমধ্যেই তার কাজের আপডেট নিতে লাগলাম। তাকে আমার কাছে অনেক দক্ষ মনে হল। তবে প্রফেসরের কয়েকদিন পরপর নতুন কাজ চাপিয়ে দেওয়াটাকে তার পছন্দ হয়নি বলে প্রতীয়মান হল।

মাস পাঁচেক পরে তার থিসিসের প্রেজেন্টেশন হল। অফিসে ফিরতেই আমার কলিগকে জিজ্ঞেস করলাম,"মেতিনের প্রেজেন্টেশন কেমন ছিল?"
"প্রফেসর তাকে ৩.৩ গ্রেড (প্রায় ৫৫% নাম্বার) দিয়েছেন।"
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি সিরিয়াস?"
"হ্যা। তবে তার গ্রেড যুক্তিসংগত।" গম্ভীর মুখে কলিগের প্রত্যুত্তর।
চেয়ারসহ তার ডেস্কের পাশে গিয়ে বললাম, "কাহিনী কি, বলোতো।"
"সে ভাল জার্মান বা ইংলিশ কোনটাই পারেনা (এটা সত্যি)। ডকুমেন্টেশনের কোন আগামাথা নেই। নিজে অনেক জটিল প্রোগ্রামিং করলেও সে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো - ইলেক্ট্রিক্যাল বা নিউমেটিক কানেকশনগুলোও ঠিকমত হয় নাই। নাট-বল্টুগুলোও ঠিকমত টাইট দিতে পারেনি সে।" তার কন্ঠে ক্ষোভ ঝরে পড়ল।

আমি তার সাথে দ্বিমত করলাম না। কারণ এ ব্যাপারগূলো আমি আগে থেকেই লক্ষ্য করেছি।
"তুমি দেখে নিও, এই ছেলে কোথাও চাকরি পাবে না, পেলেও বেশিদিন টিকবে না।" কলিগের ভবিষ্যত বাণী!

কথা না বাড়িয়ে নিজের ডেস্কে ফিরে এলাম।
বলাবাহুল্য, পরবর্তিতে তার কাছ থেকে শেখা জ্ঞান দিয়ে তারই ইন্সটল করা মাস্টার প্রোডাকশন সিস্টেমের উপর একটি মাস্টার্স প্রজেক্ট সফলভাবে সুপারভাইজ করেছি।

সেদিনের মেতিন কিভাবে এত ভাল কোম্পানিতে দেড় বছর ধরে চাকরি করছে সেটা জানার জন্য প্রচন্ড উতসাহ বোধ করছি। পরশু হয়ত তার সাথে দেখা হবে। ভাবছি, খুব শীঘ্রই আমার সেই কলিগকে মেতিনের চাকরির সুসংবাদটা দেব!

মোরাল: কাউকে আন্ডারএস্টিমেট করতে নেই। চেষ্টা ও মেধা থাকলে জীবনে সফল হওয়া তেমন কঠিন কিছু নয়। বাকিটা ওরা সাথে কথা বলে জানাবো।

আমার মনে হয়েছে যে, অত্যধিক কাজের চাপে এবং আমাদের এখানে সবকিছু নতুন ও অগোছালো হওয়ায় সে বোধহয় খেই হারিয়ে ফেলেছিল।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×