somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায়রে টাওয়ার!! (সত্য ঘটনা)

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের রাতে বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি উদযাপন শেষে পরের দিন দুপুরের বাসে করে বাসায় ফিরছি। পথিমধ্যে একটু পর পর আড়িপাতায় ঢু মারছি। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার সাধের ফোনটি বন্ধ হবার পথে। আলসেমি করে সেটি জ্যাকেটের বাহিরের পকেটে রেখে দিলাম। আমার শহরের মেইন বাস স্টেশনে এসে বাস থেকে নেমে বাসার দিকে হাটা দিতেই অভ্যাসবশত প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখি ফোন গায়েব হয়ে গেছে। গায়ের সব জামার পকেট পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলাম যে, সেটটি বাসের মধ্যে রয়ে গেছে। কালক্ষেপন না করে সেই বাসের দিকে দৌড় দিলাম। কপাল খারাপই বলতে হবে। অন্যদিন দুই এক মিনিট দেরি করলেও সেদিন বাস যথা সময়ে ছেড়ে দিয়েছে। গরীবের সম্বল একমাত্র ফোনটি হারানোর শোকে আমার প্রায় পাথর হবার উপক্রম। হঠাত মনে পড়ল যে, কিছু দিন আগে আমার এক বন্ধু তার মানিব্যাগ বাসে ফেলে আসার পরেও অন্য ড্রাইভারের সহায়তায় ফিরে পেয়েছিল। চারপাশে তাকিয়ে দেখি, শুধু একটি বাস যাবে যাবে করছে। বুকে সাগরসম আশা নিয়ে দৌড়ে গেলাম সেই বাসের কাছে। ড্রাইভারকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা জার্মানে পুরা বৃত্তান্ত খুলে বললাম।

দয়ালু ড্রাইভার সাহেব সাথে সাথে সেই বাসের ড্রাইভারকে ফোন করলেন। ফোনালাপ শেষে আমাকে বললেন, "কালকে সকালে ফান মুলার্ট কোম্পানিতে গিয়ে তোমারা ফোনটি নিয়ে এসো"।
তিনি একটা কাগজে সেই কোম্পানীর ঠিকানা লিখে কাগজটি আমার হাতে দিলেন।
বাসায় এসে ইন্টারনেটে ফান মুলার্ট কোম্পানি লিখে সার্চ দিলাম। বিধি বাম! কেহরাম এলাকায় এই নামে কোন কোম্পানিই নেই। আছে তবে সেটা অন্য শহরে। পরের দিন দুপুরে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে মেইন স্টেশনে গিয়ে কেহরামগামী বাসের ড্রাইভারকে বললাম, "আমি এই ঠিকানায় যেতে চাই আমার হারানো ফোন ফেরত পাওয়ার জন্য"।
তিনি বললেন, "চিন্তা নেই, উঠে পড়"।
৫ ইউরো ভাড়া দিতে গেলে উনি নিষেধ করলেন। বললেন, "আসার পথে ভাড়া দিয়ে এসো, তাহলেই হবে"।
শুরুতেই এমন সৌভাগ্যের দেখা পেয়ে যার পর নাই খুশি হলাম। তার ঠিক পিছনের সিটে বসে পড়লাম।

আধা ঘন্টা পরে ড্রাইভার সাহেব আমাকে কেহরাম স্টপেজে নামিয়ে দিয়ে বললেন, "পাশের পেট্রোল স্টেশনে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করো। ঠিকানাটা সহজেই খুজে পাবে"।
তাকে ধন্যবাদ দিয়ে হাসি হাসি মুখ নিয়ে পেট্রোল স্টেশনে ভিতরের ঢুকে একজন দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম, "ফান মুলার্টের লোকেশনটা একটু দেখিয়ে দেবেন"?
আন্তরিকতার সাথে তিনি উত্তর দিলেন , "সামনের রাস্তা পার হয়ে সোজা গিয়ে বামের প্রথম গলি দিয়ে হাটতে থাকলে তোমার গন্তব্যে পৌছে যাবে"।
খুশি মনে একটা ফান্টার বোতল কিনে রাস্তার দিকে হাটতে শুরু করলাম। পথিমধ্যে ফেরার বাসের সময়সুচি দেখে নিলাম। ২০ মিনিট পরে পরের বাস আসবে।

দোকানদারের কথা মত সোজা গিয়ে বামের গলির শেষ মাথায় গিয়েও ফান মুলার্টের কোন নাম-গন্ধ পেলাম না। তিন মাথা মোড়ে দাঁড়িয়ে একজন কারওয়ালা ভদ্রলোকের সাহায্য চাইলাম। অনেক চিন্তা ভাবনা করে তিনি আমাকে আরেকটু সামনে যেতে বললেন। যাওয়ার পথে কয়েকটা ছোট ফ্যাক্টরির রিসেপশনে গিয়ে ব্যর্থ মনোরথে ফিরে আসলাম। বাধ্য হয়ে একজন রিসিপশনিষ্টকে অনুরোধ করলাম, "দয়া করে ওদেরকে ফোন দেবেন"?
বোধহয় আমার ঘামে ভেজা বদন দেখে ওনার মায়া হল। ইন্টারনেট থেকে আরেক শহরে অবস্থিত একই নামের আরেকটি কোম্পানির টেলিফোন নাম্বার জোগাড় করে ফোন দিলেন। চার-পাচ বার চেষ্টা করেও ও প্রান্তের কাউকে পাওয়া গেল না।

প্রায় দেড় ঘন্টা হাটাহাটি করে শেষ পর্যন্ত আবার সেই পেট্রোল স্টেশনের মোড়ে গিয়ে পৌছালাম। কিছু খাবার কিনে খেতে খেতে সেই দোকানদারকে পুরো ঘটনা বলতেই তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন যে, তিনি আমাকে আর কোন সাহায্য করতে পারবেন না।
মনোকষ্ট নিয়ে পাশের মেকানিকের দোকানে গিয়ে তাদের সাহায্য চাইলাম। তারা একই পথ দেখিয়ে দিলেন। তাদের দেখানো পথে আরো ঘন্টাখানেক ধরে চক্কর দিয়ে আসলাম, কিন্তু কোন লাভ হলো না।
সিদ্ধান্ত নিলাম, অনেক হয়েছে। আজকেই মত ক্ষ্যান্ত দেওয়াই উত্তম। পরের বাস আসতে এখনো ৫০ মিনিট বাকি। বিরক্তিকর চাহনী নিয়ে স্টপেজের বেঞ্চে বসে আছি। একটু পরে দুজন তরুনীর আগমন ঘটল সেখানে। তাদেরকেও পুরো কাহিনী খুলে বললাম। দুজনে নিজেদের মধ্যে মিনিট তিনেক আলোচনা করে বলল, "আমরা নিশ্চিত যে, এই এলাকায় এই নামে একটা কোম্পানি আছে। কিন্তু কোথায় সেটা বলতে পারছি না। তুমি এক কাজ করো, পেট্রলপাম্পে দাঁড়ানো ঐ যে বাসটা দেখতে পাচ্ছো সেটা ফান মুলার্টের। পাশে দাঁড়ানো ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করো। উনি হয়ত তোমাকে সাহায্য করতে পারবেন"।

গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে ড্রাইভার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, "আমি তোমাদের কোম্পানিতে যেতে চাই। লোকেশনটা একটু বলবা"?
মিনিট তিনেক পাচেক তিনি বুঝাতে শুরু করলেন। আমি ভ্রান্ত নয়নে বললাম, "দেখি আর একবার চেষ্টা করে। কি আর করার"!
আমি হাটা শুরু করতেই তিনি জার্মানে বললেন, "ওটার পাশে একটা টাওয়ার (টাওয়ারই তার উচ্চারিত একমাত্র ইংরেজি শব্দ) দেখতে পাবে"।
মুহুর্তেই মনে পড়ে গেল, বেশ কয়েকবার দূর থেকে একটা মোবাইল টাওয়ারের দেখা পেয়েছি।
মিনিট দশেক পরে টাওয়ারের কাছে পৌছে দেখি, সেটার ঠিক পাশেই একটা বড় গ্যারাজের মত ভবনের গায়ে জার্মানে লেখা, 'ফান মুলার্ট কোম্পানী'। অথচ গত আড়াই ঘন্টা ধরে এর বাম পাশের গলিতে কত জুতা ক্ষয় করেছি!

ভিতরে প্রবেশ করে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফোনটি ফেরত পেলাম।
বাসায় ফেরার পথে বাসের মধ্যে কৌতুহলবশত একজন জার্মান ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলাম, "আচ্ছা, টাওয়ারের জার্মান কি"?
সে জবাব বলল, "টুর্ম"।
তার উত্তর শুনে প্রচন্ড ভিমড়ি খেলাম। কেহরামে যতজনকেই জিজ্ঞেস করেছিলাম প্রায় সবাই টুর্মের কথা বলেছিল, অনেকে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করেও বোঝানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভাষাগত কারণে আমি তাদের কথা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। মুহুর্তেই নিজের প্রতি প্রচন্ড বিরক্ত অনুভব করলাম। দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, "শালা জার্মান,তোরে দেখে নিমু। তোর একদিন কি, আমার ছয় মাস"!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×